আইপিএলে প্লে-অফে খেলার দ্বারপ্রান্তে সাকিব আল হাসানের দল কলকাতা নাইট রাইডার্স। তার আগে ফর্মের দেখা পেয়েছেন এই অলাউন্ডার। কিভাবে ফিরলেন চেনা পথে? সেটাই জানালেন কলকাতার একটি পত্রিকাকে। এখানে তারই কিছু অংশ তুলে ধরা হল।
ইডেনে যে দিন ভাল ইনিংসটা খেললেন সে দিন গ্যালারিতে মাত্র তিরিশ হাজার দর্শক ছিল। নিশ্চয়ই ভাল লাগেনি?
সাকিব: আসলে এ বছর ইডেনে এত আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয়েছে— বিশ্বকাপ ফাইনাল, বাংলাদেশ-পাকিস্তান, ভারত-পাকিস্তান। অনেক বড় বড় ম্যাচ হয়েছে যে কলকাতার মানুষের কাছে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটটা একটু হলেও একঘেয়ে হয়ে গিয়েছে। সব জায়াগাতেই দেখছি, এ বার যেন আইপিএল নিয়ে আগ্রহটা বেশ কম।
সামনে কঠিন লড়াই। আপনাদের ড্রেসিংরুমের অবস্থা কী?
সাকিব: ভাল অবস্থা। তবে পরের সব ম্যাচ নিয়ে চিন্তা করছি না আমরা, একটা করে ম্যাচ নিয়ে ভাবতে হবে। গতকাল জিতে যে মোমেন্টাম পেয়েছি, কাল তা কাজে লাগাতে হবে।
শুনলাম গত সপ্তাহে ছোটবেলার কোচ সালাউদ্দিনের কাছে গিয়েছিলেন। নাইট শিবিরে জাক কালিস, সাইমন কাটিচ, ওয়াসিম আকরারা থাকতে ওঁর কাছে কেন?
সাকিব: না, না। সে রকম কিছু নয়। ভাবলাম ওখানে (ঢাকা) গেলে ওঁর সঙ্গে কথা বললে কিছুটা আত্মবিশ্বাস বাড়বে। বাড়িতে দু’দিন সময় কাটানোর প্রয়োজনও ছিল। দুটো কাজই হল।
বলা হয়ে থাকে ব্যাটসম্যানদের ব্যাড প্যাচ চললে, একটা ভাল ইনিংসই তাদের ছন্দে ফিরিয়ে আনতে পারে। গুজরাত লায়ন্সের বিরুদ্ধে ইনিংসটাই কি সেই ইনিংস?
সাকিব: দেখুন, আমি যে খারাপ জায়গায় ছিলাম, তা নয়। ভাল জায়গায় ব্যাটিং করার সুযোগ পেয়েও সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারিনি। আসলে আমার প্রত্যাশা অনুযায়ী খেলতে পারছিলাম না। এখন সেটা পারছি মনে হচ্ছে।
কী সমস্যা হচ্ছিল আপনার?
সাকিব: সমস্যাটা যতটা না টেকনিকের, তার চেয়ে বেশি ছিল মানসিক। আসলে আত্মবিশ্বাসটা মাঝে মাঝে কমে যায়। এত দিন ধরে খেলার পর টেকনিক্যাল সমস্যা সে রকম হয় না। মানসিকতাতেই হয়। এ রকম সময়ে অনেকক্ষণ ধরে ব্যাটিং করার সুযোগ পেলে ব্যাটিংয়ের ফ্লো-টা বাড়ে। কনফিডেন্সও বাড়ে।
কী এমন বললেন সালাউদ্দিন, যে আপনার ব্যাটিংটাই খুলে গেল?
সাকিব: বেশিরভাগটাই মানসিক শক্তি বাড়ানো নিয়ে বা মানসিকতা নিয়ে। কিছু ছোটখাটো টেকনিক্যাল মেরামতি তো করতেই হয়। তবে ওটাই আসল। আসলে যার সঙ্গে কথা বলে ভাল লাগে, কমফর্ট অনুভব করি, এই রকম সময় তার পরামর্শ নিলে ভাল ফল পাওয়া যায়। আগেও এ ভাল ফল পেয়েছি।
তার মানে কেকেআর কোচেদের সঙ্গে কথা বলে আপনি কমফর্টেবল নন?
সাকিব: না, না। এর মানে এই নয় যে, এখানে আমি কমফর্টেবল নই। আসলে আমার ক্রিকেটের শুরু থেকে, মানে অনুর্ধ্ব ১৩-র সময় থেকে থেকে উনি আমাকে দেখে আসছেন, তাই স্বাভাবিক ভাবেই উনি আমাকে আরও ভাল ভাবে জানেন, আমার সমস্যাগুলো আরও ভাল বোঝেন। সে জন্যই ওঁর কাছে গিয়েছিলাম পরামর্শ করতে। কাটিচ, কালিসরা তো আর ছোটবেলা থেকে আমাকে চেনেন না। ওদের পক্ষে আমার সমস্যাগুলো স্যরের মতো করে বোঝা সম্ভব নয়।
তিন নম্বরে ব্যাট করতে কি অসুবিধা হচ্ছে?
সাকিব: তিন নম্বর নিয়ে সমস্যা থাকবে কেন? ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে ও সব বললে চলে না। দলের প্রয়োজনে যে কোনও জায়গায় খেলতে হয়। আমাকেও খেলতে হবে।
আপনাকে তো বরাবর মাঠে সভ্য-ভদ্র বলেই জানি সবাই। কিন্তু গত বছর বিপিএলে আম্পায়ারকে গালিগালাজের জন্য এক ম্যাচ ব্যান হতে হয়েছিল আপনাকে। হঠাৎ কী হয়েছিল?
সাকিব: আসলে যারা বেশি জিততে আগ্রহী, যাদের চ্যালেঞ্জ নেওয়ার ইচ্ছা অনেক বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এটা মাঝে মাঝে হয়। হিট অফ দ্য মোমেন্টে এগুলো হয়ে যায়। এ নিয়ে বেশি না বলাই ভাল।
ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট মানেই এখন একটা মারকাটারি ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। ম্যাচটা হলেই আপনাদের সংবাদমাধ্যম, সমর্থকরা বলতে শুরু করেন, ভারতের বিরুদ্ধে নামলেই বাংলাদেশকে ইচ্ছে করে হারিয়ে দেওয়া হয়। এই প্রবণতা কেন?
সাকিব: আমাদের মিডিয়া, সমর্থকরা কী বলেন, তা নিয়ে বলতে পারব না। আমি ক্রিকেটারদের কথা বলতে পারি। আমরা যারা ক্রিকেটের বাস্তবটা জানি, খেলাটা বুঝি, তারা সে রকম ভাবি না।
Discussion about this post