মিরপুরের শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে চমক! ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৭৪ রানে হারিয়ে দিল বাংলাদেশ। ব্যাটিং ব্যর্থতার পরও স্পিনের ঘূর্ণি জাদুতে ম্যাচ ঘুরিয়ে দিয়েছেন রিশাদ হোসেন। এই লেগ স্পিনার একাই ধ্বংস করেছেন ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং লাইনআপ। ওয়ানডে ইতিহাসে বাংলাদেশের প্রথম স্পিনার হিসেবে ৬ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন ২১ বছর বয়সী রিশাদ।
ম্যাচের ৩৯তম ওভারের শেষ বলে জেইডেন সিলসকে গুগলি দিয়ে বিভ্রান্ত করে স্লিপে মেহেদী হাসান মিরাজের ক্যাচে ফিরিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৩৩ রানে গুটিয়ে দেন রিশাদ। ৯ ওভার বল করে ৩৫ রানে ৬ উইকেট নেন তিনি। তার এই অবিশ্বাস্য বোলিংই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়। রিশাদ বাংলাদেশের ইতিহাসে চতুর্থ বোলার হিসেবে ওয়ানডেতে ৬ উইকেট নিলেন—কিন্তু একজন স্পিনার হিসেবে তিনিই প্রথম। তার আগে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ৫ উইকেট পেয়েছিলেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম, ২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই।
ম্যাচের শুরুটা অবশ্য বাংলাদেশের পক্ষে ছিল না। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ ৪৯.৪ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে সংগ্রহ করে মাত্র ২০৭ রান। ব্যাটিংয়ের শুরু থেকেই ব্যর্থতা ছিল চোখে পড়ার মতো। ২০২৫ সালে এখনও ওপেনারদের কাছ থেকে কোনো ফিফটি না পাওয়া দলটি আজও হতাশ করেছে। সৌম্য সরকারকে দলে ফেরালেও বদলায়নি ভাগ্য। সাইফ হাসান ও সৌম্য দুইজনই ব্যর্থ হয়ে দ্রুত ফিরেছেন। দল তখন দুই অঙ্কের রানেই হিমশিম খাচ্ছে।
তবে শান্ত ও হৃদয় এরপর ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করেন। দুজন তৃতীয় উইকেটে যোগ করেন ৭১ রান, যা এই বছর প্রথমবারের মতো তৃতীয় উইকেট থেকে বাংলাদেশের পঞ্চাশোর্ধ্ব জুটি। শান্ত করেন ৩২ রান, যার স্ট্রাইক রেট ছিল ৫০-এর নিচে। হৃদয় তুলনামূলক বেশি স্থিরতা এনে ৯১ বলে করেন ৫১ রান। অভিষিক্ত মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন ৭৬ বলে করেন ৪৬ রান। যদিও তাদের ব্যাটিংয়ে স্ট্রাইক রেট নিয়ে প্রশ্ন থাকতেই পারে, কারণ দলের রান যখন ৪০ ওভার শেষে মাত্র ১৪০, তখন ২০০ ছুঁতে পারার সম্ভাবনাও দেখাচ্ছিল না।
তবে শেষ দিকে ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন নিজেই। মাত্র ১৩ বলে ২৬ রান করেন তিনি, যার মধ্যে ছিল একটি ছক্কা ও দুইটি চার। এছাড়া নুরুল হাসান সোহান ১০ বলে ৯, আর তানভীর ইসলাম অপরাজিত থাকেন ৯ রানে। শেষ ৯.৪ ওভারে দল তোলে ৬৭ রান, যদিও তাতে ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপরও স্কোরবোর্ডে ২০৭ রানের লড়াকু সংগ্রহ দাঁড় করানো সম্ভব হয়।
বোলিংয়ে নেমে শুরু থেকেই উইকেট তুলে নিতে থাকে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটারদের কখনোই স্থির হতে দেওয়া হয়নি। স্পিনারদের ঘূর্ণিতে একের পর এক উইকেট হারিয়ে মাত্র ৩৯ ওভারেই গুটিয়ে যায় ক্যারিবীয়রা। মূল ভুমিকায় ছিলেন রিশাদ, তবে তাকে যথাযথ সহায়তা দিয়েছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তানভীর ইসলাম।
এই জয়ে ওয়ানডে সিরিজে ১–০ তে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশের পর এই জয় ছিল বহু কাঙ্ক্ষিত। ঘরের মাঠে ফিরে যেন শ্বাস নিতে পারল টাইগাররা। সাম্প্রতিক ১৩ ওয়ানডেতে এটিই বাংলাদেশের মাত্র দ্বিতীয় জয়-যা আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নিঃসন্দেহে!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ: ৪৯.৪ ওভারে ২০৭ (হৃদয় ৫১, মাহিদুল ৪৬, নাজমুল ৩২, রিশাদ ২৬, মিরাজ ১৭; সিলস ৩/৪৮, চেজ ২/৩০, গ্রিভস ২/৩২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৯ ওভারে ১৩৩ (কিং ৪৪, অ্যাথানেজ ২৭, হোপ ১৫; রিশাদ ৬/৩৫, মুস্তাফিজ ২/১৬, মিরাজ ১/১৬, তানভীর ১/৪৬)।
ফল: বাংলাদেশ ৭৪ রানে জয়ী।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: রিশাদ হোসেন
Discussion about this post