সকালটা ছিল ধীর। সূর্যের আলো ছিল নরম, ঠিক যেমন নরম ছিল ঢাকা মহানগরের ইনিংসের শুরু। পিচে বল পড়ছিল থমকে, ব্যাটারদের জুটি এগোচ্ছিল যেন হাঁটাহাঁটির ছন্দে। মাহফিজুল ও নাঈম মিলে ৪৫ রান তুললেন ঠিকই, কিন্তু ৪৫ বল খেলে। যেন বোঝার চেষ্টা চলছিল-এই উইকেটে আসলে কীভাবে খেলতে হয়?
ঠিক তখনই মাঠে নামেন দুই বামহাতি ব্যাটসম্যান-সাদমান ইসলাম ও আইচ মোল্লা। একদিকে কিছুটা পরিণত, পরিপক্ব এক ইনিংস খেলেন সাদমান, আর অন্যদিকে পুরোপুরি তরুণ তেজে বলের সঙ্গে চোখের যোগাযোগ তৈরি করেন আইচ। এই দুজন যখন জুটি গড়লেন, ঢাকা মহানগরের ইনিংসেও গতি এল। এল প্রাণ।
সাদমান থামলেন ফিফটির ঠিক আগে, ৩২ বলে ৪৯ রানে। কিন্তু আইচ? তিনি থামলেন না। প্রথমবারের মতো স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে নেমেই ঝলসে উঠলেন। শেষ বলে ইবাদত হোসেনকে ছক্কা মেরে ফিফটি পূর্ণ করলেন, ব্যাটটা উঁচিয়ে ধরলেন আকাশের দিকে-৩৩ বলে ৫৩ রান, ছয়ের জন্য ২ বার, চার ছিল ৬টি।
১৬১ রান তাড়া করতে নেমে সিলেটের খেলায় কোথাও ছন্দ ছিল না। উইকেট পতন চলল যেন নিঃশব্দে গড়িয়ে যাওয়া বৃষ্টির মতো-একটার পর একটা। খালিদ হাসান আর অমিত হাসান কিছুটা চেষ্টা করলেন, দুজনেই করলেন ২৪ রান, কিন্তু সেটুকু যথেষ্ট ছিল না। শহীদুল ইসলাম ৩ উইকেট তুলে নিলেন, আর আইচ ব্যাটের পাশাপাশি বলেও যোগ করলেন একটি উইকেট-দিনটা যেন তারই লেখা গল্পের মত।
দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকার অন্য দল-ঢাকা বিভাগ। এই দলটা যেন জানে কীভাবে জিততে হয়। আবারও তাই করল তারা। আশিকুর আর রায়ান শুরুতে গড়লেন ছোট্ট কিন্তু প্রাণবন্ত এক জুটি। এরপর মাহিদুল ইসলাম করলেন একটি অধিনায়কোচিত ইনিংস-২০ বলে ৩৫ রান, তাতে ছিল চারটি ছক্কার গর্জন। শেষ দিকে আরও কিছু রান যোগ হল, স্কোর দাঁড়াল ১৫০।
রাজশাহীর রান তাড়ায় উত্তেজনা জমেনি কখনো। একে একে ফিরেছেন ব্যাটাররা। নাজমুল হোসেন শান্ত ৮ বলেই ফিরেছেন ৬ রান করে। শুধু এস এম মেহেরব একটু দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন-৩১ রান, তাও ২৯ বলে। বাকিটা স্পিন জাদুকর নাজমুল ইসলাম অপুর কাজ। ৪ ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট-রাজশাহীর ইনিংসের শ্বাস রুদ্ধ করে দিলেন একাই।
শেষে স্কোরবোর্ড বলছে, ঢাকা মহানগরের ২৩ রানের জয়, ঢাকা বিভাগের জয় ২৮ রানে। কিন্তু মাঠ বলছে আরও কিছু- নতুন মুখের সম্ভাবনা, অভিজ্ঞদের ধারাবাহিকতা, আর ঢাকার ক্রিকেটের জোরালো বার্তা!
Discussion about this post