পুরোনো দুই শত্রুর দেখা এবার সেমিফাইনালে। টুর্নামেন্টের নাম ফিফা কনফেডারেশন কাপ। যাতে আজ ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে মুখোমুখি স্বাগতিক ব্রাজিল ও উরুগুয়ে। ব্রাজিলের সামনে এবার ফিফা কনফেডারেশন কাপে হ্যাটট্রিক শিরোপা জেতার সুযোগ। তাতে সেমিতে পেরুতে হবে উরুগুয়ের বাধা। সেই উরুগুয়ে, যাদের কাছে ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে ঘরের মাঠে ঐতিহাসিক মারাকানা স্টেডিয়ামে ফাইনালে হারের ক্ষত এখনও ভুলতে পারেনি ব্রাজিল। বিশ্বকাপ হয়তো নয়, কিন্তু এবারের কনফেডারেশন কাপ তো ব্রাজিলের ২০১৪ বিশ্বকাপের আগে ড্রেস রিহার্সেল। অতএব নেইমার অ্যান্ড কোংয়ের সামনে সাফল্যের সরণী বেয়ে শীর্ষে ওঠা ছাড়া বিকল্প নেই।
কিন্তু প্রতিপক্ষ উরুগুয়ে বলেই যত কথা। আর যে বেলো হোরিজোন্তে স্টেডিয়ামে খেলা হবে, তাতেই ঘটে গিয়েছিল বিশ্বকাপের ইতিহাসে এখনতক সবচেয়ে বড় অঘটনটি। ১৯৫০ সালের বিশ্বকাপে এ মাঠেই ইংল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে সেই সময়ের অলৌকিক ও অবিশ্বাস্য জয় পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। মারাকানার অঘটন কী ফের ঘটাতে পারবে উরুগুয়ে? কোচ অস্কার তাবারেজের দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স অবশ্য খুব সুবিধের নয়। বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে গত দশ ম্যাচের মধ্যে পাচটিতেই হেরে বেকায়দায় তারা। কিন্তু তারই মধ্যে ২০১১ কোপা চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েই। যে টুর্নামেন্টে ব্রাজিল বিদায় নিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনালেই প্যারাগুয়ের কাছে হেরে।
দ্বিতীয় দফায় ব্রাজিলের দায়িত্ব নেওয়ার পর শুরুটা ভালো হয়নি কোচ লুই ফেলিপ স্কলারির। কিন্তু ফিফা কনফেডারেশন কাপ শুরুর ঠিক আগে প্রীতি ম্যাচে ফ্রান্সকে হারানোর পরই যেন ব্রাজিলের ঘুরে দাড়ানো। টুর্নামেন্টের তিন ম্যাচে জাপান (৩-০), মেক্সিকো (৩-০) ও ইতালিকে (৪-২) হারিয়ে একরকম উড়েই সেমিতে পৌছায় স্বাগতিকরা। তিন ম্যাচের নিউক্লিয়াস নেইমার। ২১ বছর বয়সী এ তারকা টুর্নামেন্টে কতটা জ্বলে উঠতে পারবেন, তা নিয়ে অনেকেরই সন্দেহ-সংশয় ছিল। কিন্তু সব উড়িয়ে দিয়ে সদ্য বার্সেলোনায় যোগ দেওয়া নেইমার জানাচ্ছেন, তিনি তৈরি। তিন ম্যাচে শুধু তিন গোলই করেননি নেইমার, খেলছেন দলের জন্যও।
ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে এসেছিলেন ব্রাজিল গোলকিপার জুলিও সিজার। তিনি আবার উরুগুয়েকেই প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন ‘ এ ম্যাচে কোনো ফেভারিট নেই। কারন আমরা জানি উরুগুয়ে খুবই শক্তিশালী দল। এছাড়া ওরা কোপা জয়ী দল। এটা উরুগুয়েকে অবশ্যই আত্মবিশ্বাস যোগাবে।’ সিজারের মতে ব্রাজিলকে ভোগাতে পারেন উরুগুয়ের তিন তারকা ডিয়েগো ফোরলান, লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানি। সিজারের সঙ্গে সহমত কোচ স্কলারিও। তিনিও বলছেন, ‘উরুগুয়ে মানেই বিপজ্জনক প্রতিপক্ষ। শক্তিশালী তো বটেই, আমাদের খেলাও ওদের ভালো জানা আছে। কাজেই লড়াইটা হবে সেয়ানে-সেয়ানে।’
দু’দল সবশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৯ এ বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে। যে ম্যাচে উরুগুয়ের রাজধানী মন্টিভিডিওতেই স্বাগতিকদের ৪-০ গোলে ধসিয়ে দিয়েছিল ব্রাজিল। তারপর অবশ্য পানি অনেক গড়িয়েছে। ব্রাজিল ফিফা র্যাংকিংয়ে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন ২২ নম্বরে গিয়ে ঠেকেছে। ২০১০ বিশ্বকাপে ব্যর্থতায় চাকরি গেছে কার্লোস দুঙ্গার। তারপর লন্ডন ২০১২ অলিম্পিক ফাইনালে মেক্সিকোর কাছে হারে চাকরি যায় মানো মেনেজেসের। তাই ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী কোচ স্কলারির কাছেই ফিরে গেছে ব্রাজিল। কনফেডারেশন কাপই তার প্রথম পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় প্রথম হতে আর দুই ধাপ বাকি। তার প্রথম ধাপে আজ ব্রাজিলের পরীক্ষার নাম উরুগুয়ে।
Discussion about this post