জাতীয় ক্রিকেট লিগের পঞ্চম রাউন্ডের শেষ দিনটি ছিল সম্পূর্ণ নাটকীয়তায় ভরা। কোথাও ছিল বিধ্বংসী স্পিন বোলিং, কোথাও ব্যক্তিগত মাইলফলক, আবার কোথাও ছিল টিকে থাকার সংগ্রাম। কক্সবাজার থেকে খুলনা, প্রতিটি মাঠে ঘটে গেছে বিশেষ কিছু। তবে দিনের প্রধান আলোচনায় ছিলেন বরিশাল বিভাগের অধিনায়ক ও বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম, যিনি নিজের অসাধারণ বোলিংয়ে ম্যাচ ঘুরিয়ে এনে দিলেন গুরুত্বপূর্ণ জয়।
ঢাকা বিভাগের বিপক্ষে বরিশাল ম্যাচের সুর বদলে যায় দিনের প্রথম সেশনের মধ্যে। ৫ উইকেটে ১২৪ রান নিয়ে দিন শুরু করা ঢাকার ব্যাটাররা শুরুর কয়েক ওভার সামলে নিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তানভিরের একের পর এক আঘাতে মুহূর্তেই ধস নামে তাদের ইনিংসে। শিবলি ও সুমন খানকে ফেরানোর পর লোয়ার অর্ডারকে গুটিয়ে ফেলতেও সময় নেননি তিনি।
আগের দিন দুই উইকেট নেওয়া তানভির শেষ দিনে আরও পাঁচ উইকেট তুলে ৬৪ রানে ৭ উইকেট নিয়ে থামেন। ম্যাচে তার মোট শিকার ছিল ৯ উইকেট, যা বরিশালকে এনে দেয় মাত্র ১০২ রানের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ওপেনার ইফতি ৫৭ রানে অপরাজিত থেকে দলকে ৬ উইকেটের নিশ্চিত জয় উপহার দেন। পঞ্চম রাউন্ডের শেষে বরিশাল তাই উঠে এসেছে পয়েন্ট তালিকার তিন নম্বরে, আর ঢাকা বিভাগ পড়ে আছে তলানিতে।
খুলনায় আলাদা রকম উত্তেজনা তৈরি হয় ময়মনসিংহ ও খুলনার ম্যাচে। তৃতীয় দিনের শেষে দুই দলেরই রান যখন সমান ৩৮৭, তখন সব শুরু হয় নতুন করে। আল আমিন জুনিয়র ও আরিফ আহমেদের জুটি সেই উত্তেজনাকে নিয়ে যায় অন্য উচ্চতায়।
আরিফ তার আগের ব্যক্তিগত সেরা রানের দ্বিগুণ ছুঁয়ে খেলেন ৮১ রানের মূল্যবান ইনিংস, আর আল আমিন ধীরস্থির ব্যাটিংয়ে তুলে নেন সেঞ্চুরি। এই জুটির উপর দাঁড়িয়েই ময়মনসিংহ এগিয়ে যায় ৭২ রানে। ইনিংস ঘোষণা করার পর খুলনার সামনে ছিল বড় পরীক্ষা, আর শুরুতে তারা বিপদেই পড়ে। প্রথম বলেই আউট হন অভিজ্ঞ এনামুল হক; বিরলভাবে পুরো লিগেই তিনি এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছেন ফর্ম ফিরিয়ে আনতে। এরপর সৌম্য সরকারের ব্যাটে আসে ধারাবাহিকতা-১৮৬ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসেও দলকে টেনে নিয়ে যান তিনি। ৪৪ রান করে এবারের লিগে প্রথম ব্যাটার হিসেবে ছোঁয়া পান ৫০০ রানের মাইলফলকে।
তবে পাঁচ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা থেকে দলকে রক্ষা করেন আফিফ হোসেন ও জিয়াউর রহমান। আক্রমণাত্মক খেলোয়াড় হিসেবে পরিচিত জিয়াউর সেদিন হয়ে ওঠেন সময়ের দাবিতে ধৈর্যের প্রতীক। ৮৪ বল খেলে মাত্র ১০ রানে অপরাজিত থাকার মাঝেই লুকিয়ে ছিল ম্যাচ বাঁচানোর মূল গল্প।
অন্যদিকে আফিফ অপরাজিত ৩৮ রানে দলের ভরসা হয়ে থাকেন। ড্র হয়ে শেষ হয় ম্যাচটি, তবে শুভাগত হোমের জন্য দিনটি হয়ে ওঠে স্মরণীয়; প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৩০০ উইকেটের মাইলফলকে পৌঁছান তিনি।
অন্যদিকে রংপুর বিভাগের দারুণ ফর্ম অব্যাহত থাকে রাজশাহীর বিপক্ষে। মাত্র তিন দিনেই তারা ম্যাচ শেষ করে ৫ উইকেটের জয় নিয়ে। দুই ইনিংসে ৮ উইকেট নিয়ে মুকিদুল ইসলাম ছিলেন রংপুরের সাফল্যের মূল কারিগর, আর রান তাড়ার চাপে নাসির হোসেনের অপরাজিত ফিফটি দলকে জয় এনে দেয়। এই জয়ে রংপুর আরও দৃঢ়ভাবে বসে যায় পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।
সিলেটও তিন দিনে শেষ করা ম্যাচে পেয়েছে গুরুত্বপূর্ণ জয়। চট্টগ্রামের বিপক্ষে ১৪৭ রানের বড় ব্যবধানে জেতে তারা। আবু জায়েদ দুই ইনিংসে ৯ উইকেট নিয়ে ফের প্রমাণ করেছেন তার ধারাবাহিকতা। চট্টগ্রামের ইফরান হোসেন ম্যাচে ১০ উইকেট পেলেও তা দলের পরাজয় ঠেকাতে যথেষ্ট হয়নি। নাঈম হাসানের ৫ উইকেটও তাই থেকে গেছে সান্ত্বনা পুরস্কার হিসেবেই।









Discussion about this post