যেখানে ম্যাচটা একসময় একতরফা মনে হচ্ছিল, ঠিক সেখানেই হঠাৎ করে কাঁপিয়ে দিলো নাটকীয়তা। দারুণ এক শুরুর পর হঠাৎ ভেঙে পড়া, তারপর আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে জয়, সব মিলে এক কথায় রোলার কোস্টার টাইগারদের টি-টোয়েন্টি ম্যাচটা। শারজাহতে অনুষ্ঠিত সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৪ উইকেটের রোমাঞ্চকর জয় পেয়েছে বাংলাদেশ, সিরিজে এগিয়ে গেল ১-০ ব্যবধানে। তবে এই জয় সহজে আসেনি-আসেনি কোনো একতরফা দাপটে, বরং এসেছে শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনার শেষে।
টস জিতে আগে ব্যাট করতে নামে আফগানিস্তান। তাদের শুরুটা ছিল কিছুটা আশাব্যঞ্জক। ওপেনার ইবরাহিম জাদরান ও সেদিকউল্লাহ আতাল প্রথম উইকেটে এনে দেন ২৫ রান। কিন্তু এরপরই বল হাতে ছড়ি ঘোরাতে শুরু করেন বাংলাদেশের বোলাররা। একের পর এক উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় আফগান ব্যাটিং লাইনআপ। নাসুমের ঘূর্ণিতে ফেরেন ইবরাহিম, আতাল ও রাসুলিকে ফিরিয়ে দেন তরুণ তানজিম হাসান সাকিব। ৬ ওভারে ৩৩ রানেই ৩ উইকেট হারায় আফগানরা।
রহমানউল্লাহ গুরবাজ কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন, করেন ৩১ বলে ৪০ রান। কিন্তু তার বিদায়ের পর আফগান ব্যাটিংয়ের হাল ধরেন মোহাম্মদ নবী। শেষদিকে তিনি খেলেন ২৫ বলে ৩৮ রানের ইনিংস, যেটা আফগানদের সম্মানজনক সংগ্রহে পৌঁছে দেয়। নির্ধারিত ২০ ওভারে তারা তোলে ৯ উইকেটে ১৫১ রান। বাংলাদেশের হয়ে তানজিম ও রিশাদ নেন ২টি করে উইকেট, আর নাসুম, তাসকিন ও মুস্তাফিজ পান ১টি করে।
বাংলাদেশের ইনিংস শুরু হয় স্বপ্নের মতো। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও পারভেজ হোসেন ইমন ধ্বংসাত্মক শুরু এনে দেন। পাওয়ারপ্লেতে ওঠে ৫০ রান, ১০ ওভারে পূর্ণ হয় শতরান। দুজনেই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। মনে হচ্ছিল, টাইগাররা অনায়াসেই ম্যাচ শেষ করে ফেলবে।
কিন্তু ক্রিকেট যে অনিশ্চয়তার খেলা, তা প্রমাণ করলেন রশিদ খান। একের পর এক উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরান আফগানিস্তানকে। হঠাৎ করেই ১০৯/০ থেকে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ১১৮/৬। একেবারে ধসে পড়ে বাংলাদেশের মিডল অর্ডার। তামিম-ইমন ফিরে যাওয়ার পর সাইফ হাসান করেন ডাক, ব্যর্থ হন অধিনায়ক জাকের আলী অনিক ও শামীম হোসেনও। তানজিমও রান না করেই ফেরেন।
এমন সময়ে যখন ম্যাচ হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছিল, তখন উইকেটে দৃঢ়তা দেখান নুরুল হাসান সোহান ও রিশাদ হোসেন। তারা পরিস্থিতি বুঝে খেলে ১৮ বলে ৩৫ রানের অনবদ্য এক জুটি গড়েন, যা ম্যাচ এনে দেয় বাংলাদেশের ঘরে। সোহান অপরাজিত থাকেন ১৩ বলে ২৩ রান করে, রিশাদ করেন ৯ বলে ১৪।
রশিদ খান আফগানিস্তানের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন, কিন্তু তার বোলিংয়ের প্রভাব শেষমেশ ম্যাচ জেতাতে পারেনি দলকে। শেষ হাসি বাংলাদেশের!
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
আফগানিস্তান: ২০ ওভারে ১৫১/৯ (গুরবাজ ৪০, নবী ৩৮, ওমরজাই ১৮, শরাফউদ্দিন ১৭; তানজিম ২/৩৪, রিশাদ ২/৩৩, নাসুম ১/১৮)।
বাংলাদেশ: ১৮.৪ ওভারে ১৫৩/৬ (পারভেজ ৫৪, তানজিদ ৫১, নুরুল ২৩*, রিশাদ ১৪*; রশিদ ৪/১৮, নূর ১/২১, ফরিদ ১/২৬)।
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা: পারভেজ হোসেন ইমন।
সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ১–০তে এগিয়ে।
Discussion about this post