আবুধাবির গরমে সন্ধ্যায় টস জিতে মাঠে নামার সময় লিটন দাসের চোখেমুখে ছিল আত্মবিশ্বাস। যে আত্মবিশ্বাস পরে পরিণত হয় নিখুঁত এক পরিকল্পনায়। মাঠে বল গড়ানোর পর থেকেই বোঝা যাচ্ছিল-বাংলাদেশ আজ শুধু খেলতে আসেনি, তারা জিততেই এসেছে। শেষ পর্যন্ত ১৪ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয় তুলে নিয়ে, সেই অভিপ্রায়টাই পরিণত করলো বাস্তবে।
হংকংয়ের ১৪৩ রানের জবাবে ১৪ বল বাকি থাকতেই নিজেদের বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচে পেয়েছে ৭ উইকেটের জয়। আবুধাবিতে টি-টোয়েন্টিতে এটাই তাদের প্রথম জয়।
এই জয় শুধুই একটি ম্যাচ জয় নয়-এটি একধরনের বার্তা। বার্তা যে বাংলাদেশ এখন হিসেব করে খেলে, প্রয়োজন বুঝে গতি বদলায়, এবং সময়মতো আঘাত হানতে জানে। আজকের ম্যাচে সেই কৌশলী ক্রিকেটই দেখা গেল প্রথম বল থেকে শেষ চারের আগ পর্যন্ত।
প্রথম ইনিংসে বল হাতে শুরুটা করে দিয়েছিলেন তাসকিন আহমেদ। তৃতীয় ওভারেই প্রতিপক্ষ ওপেনারকে বোল্ড করে দেন তিনি। এরপর হংকংয়ের ব্যাটাররা যতই চেষ্টা করুক, বাংলাদেশের বোলারদের সামনে তাদের ইনিংস কখনোই ছন্দ পায়নি। মাঝে কিছু জুটি হলেও, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশের হাত থেকে বের হয়নি এক মুহূর্তের জন্যও।
রিশাদ হোসেন ও তানজিম হাসান সাকিব-দুজনেই নিজেদের অভিজ্ঞতার তুলনায় অনেক পরিণত বোলিং করেছেন। মিডল ওভারগুলোতে রান আটকে রাখা এবং উইকেট তুলে নেওয়ার কাজটা তারাই সেরে দিয়েছেন চমৎকারভাবে। শেষ পর্যন্ত হংকং থামে ১৪৩ রানে-যে লক্ষ্য বর্তমান সময়ের টি-টোয়েন্টিতে মোটেই ভয় ধরানোর মতো নয়।
কিন্তু লক্ষ্য যতই ছোট হোক, তাড়া করাটাও তো একটা শিল্প। আর সেই শিল্পটাই যেন আজ রপ্ত করে নেমেছিলেন লিটন দাস ও তাওহিদ হৃদয়। শুরুতে পারভেজ ইমন কিছুটা ঝড় তুলে ফিরলেন দ্রুতই। তানজিদ হাসানও টিকতে পারলেন না বেশি সময়। তবে এরপর মাঠে নামে এক শীতল ব্যাটিং পরিকল্পনা।
লিটন এবং হৃদয় বুঝেছিলেন, হংকংয়ের বোলিং আক্রমণকে তাড়াহুড়ো করে ছিন্নভিন্ন করার দরকার নেই। প্রয়োজন কেবল উইকেট হাতে রেখে, ধাপে ধাপে এগিয়ে যাওয়া। তারা ঠিক সেটাই করলেন। ম্যাচটি হয়ে উঠলো যেন এক ক্লাসরুম-যেখানে দুই ব্যাটসম্যান শেখাচ্ছেন, লক্ষ্য তাড়ার কৌশল কতটা ধৈর্য ও হিসেব-নিকেশের ব্যাপার।
লিটন দাস ইনিংসটি খেলেছেন এমনভাবে, যেন এটি তাঁর পুরনো অভ্যাস। ৩৯ বলে ৫৯ রানের ইনিংসে ছিল না কোনো অস্থিরতা। প্রতিটি শট ছিল পরিণত, প্রতিটি রান ছিল পরিকল্পিত। তার পাশে হৃদয় ছিলেন নিঃশব্দে অবিচল। যখন লিটন আউট হন, তখন বাংলাদেশের জয়ের পথে কেবল আনুষ্ঠানিকতা বাকি।
হৃদয় শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি শেষ করেন চতুর্থ বাউন্ডারিতে। ৩৬ বলে ৩৫ রানের ইনিংসটিকে পরিসংখ্যান দিয়ে বিচার করলে কিছুই বোঝা যাবে না। কিন্তু যিনি পুরো ইনিংসে চাপমুক্ত রেখে দলকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন, তিনিই তো আসলে ম্যাচের আসল নায়ক। যদিও ম্যাচের সেরা লিটন দাস!
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
হংকং: ২০ ওভারে ১৪৩/৭ (জিশান ৩০, আনশুমান ৪, বাবর ১৪, নিজাকাত ৪২, মুর্তাজা ২৮, আইজাজ ৫, কিঞ্চিত ০, কালহান ৪*, এহসান ২*; মেহেদি ৪-০-২৮-০, তাসকিন ৪-০-৩৮-২, তানজিম ৪-১-২১-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২২-০, রিশাদ ৪-০-৩১-২)
বাংলাদেশ: ১৭.৪ ওভারে ১৪৪/৩ (পারভেজ ১৯, তানজিদ ১৪, লিটন ৫৯, হৃদয় ৩৫* জাকের ০*; আয়ুশ ৩-০-৩২-১, আতিক ৩.৪-০-১৪-২, এহসান ৩-০-২৮-০, মুর্তাজা ৪-০-৩৯-০, আইজাজ ৩-০-১৪-০, কিঞ্চিত ১-০-১১-০)।
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: লিটন দাস
Discussion about this post