ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে কেউ কেউ আছেন, যারা তারকা নন তবু উজ্জ্বল; প্রচারের আলোয় নন, তবু বিস্ময়। দিলিপ দোশি তেমনই একজন। না, তিনি শত শত টেস্ট খেলেননি, মিডিয়ায় ঝলকে থাকেননি-তবে ক্রিকেটের প্রকৃত প্রেমিকেরা জানেন, কী গভীর ছাপ রেখে গেছেন তিনি।
জন্মেছিলেন ১৯৪৭ সালে। কিন্তু জাতীয় দলে অভিষেক? ১৯৭৯ সালে, বয়স তখন ৩২। আজকের দিনে এমন বয়সে কেউ শুরু করলে হয়তো তাকে বলা হতো-শেষ অধ্যায়! কিন্তু দিলিপ দোশি সেই ধারণাকেই পাল্টে দিয়েছিলেন।
অভিষেকেই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৮ উইকেট। এরপর মাত্র ৩৩ টেস্টেই পৌঁছে গিয়েছিলেন ১১৪ উইকেটে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রায় ৯০০ উইকেট! তবু সময় তাকে অপেক্ষা করিয়েছিল। কারণ তাঁর সামনে ছিলেন বিষেন সিং বেদি, ভারতের ইতিহাসের অন্যতম সেরা স্পিনার।
এমনকি যখন জাতীয় দলে জায়গা পেলেন, তখনো যেন যুদ্ধই লেগে রইল-নিজেকে প্রমাণের যুদ্ধ, দলের রাজনীতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার যুদ্ধ। অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কারের সঙ্গে দূরত্ব তার ক্যারিয়ারকে খর্ব করেছিল, কিন্তু দোশির আত্মমর্যাদা ছিল আপোষহীন। তার বোলিং ছিল নির্ভুল কাব্যের মতো-চোখে ধরা যায় না, কিন্তু মন ছুঁয়ে যায়। ফ্লাইট দিয়ে প্রতিপক্ষকে মাত দিতেন, আর তার বল যেন ব্যাটসম্যানদের ধৈর্যের শেষ সীমানায় নিয়ে যেত।
চোট নিয়েও মেলবোর্ন টেস্টে ৭৪ ওভার বল করে ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন। অবসরের পরও ক্রিকেট থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেননি। গ্যালারিতে, বইয়ের পাতায়, বিশ্লেষণে তিনি ছিলেন, ঠিক যেমন ছিলেন ক্রিকেটারদের অভ্যন্তরীণ জগতে-চুপচাপ, গভীর, কিন্তু মূল্যবান।
আজ তিনি নেই। গ্যালারির নিরিবিলি আসনে, টিভি ক্যামেরার আড়ালে থাকা যে মানুষটি ক্রিকেট ভালোবাসতেন নিঃশব্দে, তিনিই এবার চিরনিরব হয়ে গেলেন!
Discussion about this post