নিউজিল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসে ফাইনাল মানেই এক রাশ হতাশা। প্রতিবারই শিরোপার একদম দোরগোড়ায় গিয়েও শেষ মুহূর্তে ব্যর্থতা। এবারও চিত্রটা বদলালো না। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির নবম আসরের ফাইনালে ভারত তাদের স্বপ্ন গুঁড়িয়ে দিয়ে শিরোপা ছিনিয়ে নিল।
দুবাই আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সবুজ গালিচায় আজ রোববার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে নিউজিল্যান্ড। শুরুটা স্বপ্নের মতোই হয়। রাচিন রবীন্দ্র ও উইল ইয়াং দারুণ শুরু এনে দেন দলকে। ১০ ওভারের মধ্যেই বোঝা যাচ্ছিল, বড় সংগ্রহের দিকে এগোচ্ছে তারা। কিন্তু ভারতীয় স্পিনারদের জাদুতে ভেঙে যায় সেই স্বপ্ন। বরুণ চক্রবর্তী উইল ইয়াংকে ফেরানোর পর একের পর এক উইকেট পড়তে থাকে। কুলদ্বীপ যাদবের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে সাজঘরে ফেরেন ফর্মে থাকা রাচিন রবীন্দ্র ও কেন উইলিয়ামসন।
১০৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে নিউজিল্যান্ড। সেই চাপ সামাল দেন ড্যারেল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপস। ৫৭ রানের জুটি গড়ে দলকে আবারও ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন তারা। তবে ফিলিপস বরুণ চক্রবর্তীর দ্বিতীয় শিকার হলে ফের ভেঙে পড়ে কিউই ইনিংস। শেষদিকে মাইকেল ব্রেসওয়েলের ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংসে ভর করে ২৫১ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। স্কোরবোর্ড খুব বড় না হলেও লড়াই করার মতোই।
জবাবে ব্যাট করতে নামে ভারত। শুরুতেই রোহিত শর্মা ও শুভমান গিলের দুর্দান্ত ব্যাটিং দেখে মনে হচ্ছিল, ম্যাচ একপেশে হয়ে যাবে। ১০ ওভারে বিনা উইকেটে ৭০ রান তোলে ভারত। কিন্তু গিলের ৩১ রানে আউট হওয়ার পর খেলা বদলে যেতে থাকে। বিরাট কোহলিও মাত্র ১ রান করে ফিরে যান।
রোহিত একপ্রান্ত আগলে রেখে ৪১ বলে অর্ধশতক তুলে নেন, কিন্তু তিনিও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দলীয় ১২২ রানে ব্যক্তিগত ৭৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি। টানা তিন উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়ে ভারত। ম্যাচ তখন নিউজিল্যান্ডের দিকেই ঝুঁকে যাচ্ছিল।
তবে চাপের মুখে অসাধারণ ব্যাটিং করেন শ্রেয়াস আইয়ার ও অক্ষর প্যাটেল। দুজনে মিলে ৬১ রানের জুটি গড়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন। শ্রেয়াস ৪৮ রান করে আউট হলেও লোকেশ রাহুল শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ভারতকে ৪৯তম ওভারে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
নিউজিল্যান্ডের জন্য আবারও ফাইনালের হতাশা। ২৫ বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতলেও এরপর আর কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে জিততে পারেনি তারা। অন্যদিকে, ভারত তৃতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয় করে আবারও প্রমাণ করলো, কেন তারা বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৫১/৭ (ইয়াং ১৫, রাভিন্দ্রা ৩৭, উইলিয়ামসন ১১, মিচেল ৬৩, ল্যাথাম ১৪, ফিলিপস ৩৪, ব্রেসওয়েল ৫৩*, স্যান্টনার ৮, স্মিথ ০*; শামি ৯-০-৭৪-১, পান্ডিয়া ৩-০-৩০-০, ভারুন ১০-০-৪৫-২, কুলদিপ ১০-০-৪০-২, আকসার ৮-০-২৯-০, জাদেজা ১০-০-৩০-১)।
ভারত: ৪৯ ওভারে ২৫৪/৬ (রোহিত ৭৬, গিল ৩০, কোহলি ১, শ্রেয়াস ৪৮, আকসার ২৯, রাহুল ৩৪*, পান্ডিয়া ১৮, জাদেজা ৯*; জেমিসন ৫-০-২৪-১, ও’রোক ৭-০-৫৬-০, স্মিথ ২-০-২২-০, স্যান্টনার ১০-০-৪৬-২, রবীন্দ্র ১০-১-৪৭-১ ব্রেসওয়েল ১০-১-২৮-২ )।
ফল: ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।
ফাইনাল সেরা: রোহিত শার্মা।
টুর্নামেন্ট সেরা : রাচিন রবীন্দ্র
Discussion about this post