রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ করা হয়েছে ন্যাশনাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এনসিজি)। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) পরিচালনা পরিষদের সভায় সোমবার এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বিসিবি পরিচালক ইফতেখার আহমেদ।
নাম পরিবর্তনের পাশাপাশি স্টেডিয়াম নির্মাণের ভবিষ্যৎ নিয়েও বড় পরিবর্তন এসেছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর এই প্রকল্পের নির্মাণ কাজ স্থগিত হয়ে যায়। বাতিল করা হয় স্টেডিয়াম নির্মাণের দরপত্রও। আপাতত বিসিবি সেখানে দুটি মাঠ তৈরির কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
বিসিবি পরিচালক ইফতেখার আহমেদ জানিয়েছেন, স্টেডিয়াম নির্মাণের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা থাকলেও আপাতত মাঠ তৈরিতে জোর দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন,
‘২০৩১ ওয়ানডে বিশ্বকাপের জন্য স্টেডিয়ামটি নির্মাণ করতেই হবে আমাদের। তবে আপাতত মাঠ তৈরিতেই আমরা জোর দিচ্ছি। দুটি মাঠ তৈরি হচ্ছে সেখানে। ১৮টি পিচ থাকবে, নেট অনুশীলনসহ পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকবে। অস্থায়ী ড্রেসিংরুমও রাখা হবে, যা পরে স্থায়ী করা হবে। আশা করি, আগামী মৌসুমে এই দুই মাঠে ঘরোয়া ক্রিকেট চালাতে পারব আমরা। এতে মাঠের সংকট কিছুটা হলেও কমবে।’
বিসিবির সাবেক সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন যখন দায়িত্বে ছিলেন, তখন পূর্বাচলে এই বিশাল ক্রিকেট কমপ্লেক্স তৈরির উচ্চাভিলাসী প্রকল্প নেওয়া হয়। সেই সময়ের সরকার বিসিবিকে মাত্রাতিরিক্ত স্বল্পমূল্যে ৩৭.৫ একর জমি বরাদ্দ দেয়। প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেডিয়ামের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মানের ক্রিকেট কমপ্লেক্স গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছিল, যেখানে দুটি মাঠ, আধুনিক হোটেল, একাডেমি, সুইমিং পুলসহ বিশ্বমানের অবকাঠামো থাকার কথা ছিল।
২০২২ সালের অক্টোবরে বিসিবি ঘোষণা দিয়েছিল, অস্ট্রেলিয়ার “পপুলাস আর্কিটেকচারাল ডিজাইন” ফার্মকে স্টেডিয়াম নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, আড়াই বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নানা কারণে তা বিলম্বিত হয়। অবশেষে প্রকল্পটি স্থগিত করা হয়েছে।
পূর্বপরিকল্পিত নকশা অনুযায়ী, স্টেডিয়ামটি ছিল “নৌকার আদলে”, তাই এটি দা বোট নামেও পরিচিত ছিল। তবে নতুন সিদ্ধান্তের ফলে এই নকশাও বাতিল করা হয়েছে। এখন এটি শুধু ন্যাশনাল ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এনসিজি) নামে পরিচিত হবে।
শুধু পূর্বাচলের স্টেডিয়াম নয়, দেশের বিভিন্ন ক্রীড়া স্থাপনার নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ইতোমধ্যে ১৫০টি উপজেলা স্টেডিয়ামের নতুন নামকরণ করেছে। এর পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করে “জাতীয় স্টেডিয়াম” রাখা হয়েছে। এই নাম পরিবর্তনের পেছনে মূলত রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা বজায় রাখা এবং ক্রীড়া অবকাঠামোকে দলীয়করণের বাইরে রাখা অন্যতম কারণ বলে জানিয়েছে সরকার।
Discussion about this post