নিয়মিত বোলার নন, পরিচয়টা ব্যাটসম্যানই! তারপরও বল হাতে রীতিমতো চমকে দিলেন তিনি। দেখিয়ে দিলেন যোগ্যতার পরিধি। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের স্পিনেই ধরাশায়ী জিম্বাবুয়ে। টি-টুয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচের ধাক্কা সামলে বাংলাদেশ ফিরল জয়ের ছন্দে!
হারারে স্পোর্টস ক্লাব গ্রাউন্ডে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারাল নুরুল হাসান সোহানের দল। তার পথ ধরে তিন ম্যাচ সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। জয়ের নায়ক অফ স্পিনার মোসাদ্দেক।
অথচ টি-টুয়েন্টিতে ১৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা ছিল মাত্র ৭টি। এবার সেই মোসাদ্দেক নতুন বলে চার ওভার বল করে ২০ রানে নিলেন ৫ উইকেট। যা কীনা তার ক্যারিয়ারসেরা। তার দাপটে জিম্বাবুয়ে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে তুলতে পারল মাত্র ১৩৫ রান। জবাব দিতে নেমে লিটনের দাসের ঝড়ো ফিফটিতে ৩ উইকেট হারিয়ে ১৫ বল হাতে রেখে জয়ের বন্দরে টাইগারা।
টি-টুয়েন্টিতে বাংলাদেশের চতুর্থ বোলার হিসেবে পাঁচ উইকেট নিলেন মোসাদ্দেক। অফ স্পিনার মোসাদ্দেকের আগে পেয়েছিলেন ইলিয়াস সানি, সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান।
টি-টুয়েন্টিতে এর আগে কোনো ম্যাচে ২ উইকেটের বেশি ছিল না মোসাদ্দেকের। সেই বোলারটি এবার চার ওভারের টানা স্পেলে ২০ রানে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। ক্যারিয়ারের প্রথমবার ৫ উইকেট পেলেন মোসাদ্দেক। ইনিংসের প্রথম বলেই স্বাগতিক ওপেনার রেজি চাকাভাকে ফেরান মোসাদ্দেক। সেই ওভারের শেষ বলে আগের ম্যাচে জিম্বাবুয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৬৭ রান করা মাধেভেরেকে ৪ রানে আউট করেন এই অফ স্পিনিং অলরাউন্ডার।
নিজের দ্বিতীয় ওভারে ফের মোসাদ্দেকের আঘাত। ওভারের তৃতীয় বলে স্বাগতিক অধিনায়ক ক্রেইগ এরভিনকে মাত্র ১ রানে সাজঘরে ফেরান। নিজের তৃতীয় ওভারে অভিজ্ঞ উইলিয়ামসকে আউট করেন। নিজের শেষ ওভারে এসে পঞ্চম উইকেট নেন মোসাদ্দেক। আন্তর্জাতিক টি-টুয়েন্টিতে ইলিয়াস সানি, সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমানের পর চতুর্থ বোলার হিসেবে এ কীর্তি গড়লেন মোসাদ্দেক।
এর আগে ৩ ওভারে ১৪ রানে তুলেন ৪ উইকেট। এটি করেই বাংলাদেশের হয়ে একটা রেকর্ড গড়ে ফেলেন মোসাদ্দেক। বাংলাদেশের কোনো ডানহাতি স্পিনারের জন্য টি-টুয়েন্টিতে এখন এটিই সেরা বোলিং। এর আগের রেকর্ডটি ছিল মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের। ১০ রানে ৩ উইকেট নেন তিনি।
এই ম্যাচে ব্যাট করতে নেমেও ফ্লপ মুনিম শাহরিয়ার। ৮ বলে ৭ করে বোল্ড তিনি। ঘরোয়া ক্রিকেটে আগ্রাসী ব্যাটিং করে জাতীয় দলে আসা ওপেনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৫ টি-টুয়েন্টিতে তুলেছেন ৩৪ রান। বেশিদূর যেতে পারেন নি এনামুল হক বিজয়ও। ফেরেন ১৬ রানে, ১৫ বলে।
আর লিটন দাস আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হয়ে আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে তুলেন ৫৬ রান। ২৮ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ হোসেন, ২১ বলে ১৯ রানে দলকে জিতিয়ে ফেরেন নাজমুল হাসান শান্ত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (চাকাভা ০, আরভিন ১, মাধেভেরে ৪, রাজা ৬২, উইলিয়ামস ৮, শুম্বা ৩, বার্ল ৩২, জঙ্গুয়ে ১১*, মাসাকাদজা ৬, এনগারাভা ০*; মোসাদ্দেক ৪-০-২০-৫, মেহেদি ৩-০-১০-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩০-১, শরিফুল ৪-০-৩৭-০, হাসান ৪-০-২৬-১, আফিফ ১-০-১২-০)
বাংলাদেশ: ১৭.৩ ওভারে ১৩৬/৩ (লিটন ৫৬, মুনিম ৭, এনামুল ১৬, আফিফ ৩০*, শান্ত ১৯*; মাসাকাদজা ৩-০-২২-০, এনগারাভা ৩-০-২৩-১, চিভাঙ্গা ১.৩-০-১৯-০, উইলিয়ামস ২-০-১৩-১, বার্ল ১-০-১২-০, রাজা ৩-০-১৮-১, মাধেভেরে ৩-০-১৮-০, জঙ্গুয়ে ১-০-৭-০)
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যাচসেরা: মোসাদ্দেক হোসেন
Discussion about this post