তিনি ক্রিকেট বিশ্বের কিংবদন্তির তালিকায় হয়তো থাকছেন না। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার কিংবদন্তি ক্রিকেটার অবশ্যই। সময়ের সেরা তো ছিলেনই। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে জিতেছেন দুটি বিশ্বকাপ। ব্যাট হাতে তার মাঠে নামা মানেই রানের ঝড়। সেই ক্রিকেটারটি হঠাৎ করেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে। গাড়ি দূর্ঘটনায় শনিবার রাতে প্রাণ হারালেন অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস। তার মৃত্যুতে শোকাহত ক্রিকেটাঙ্গন।
রোববার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়াম শুরু হয়েছে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সিরিজের প্রথম টেস্ট। এদিন ২০০৩ এবং ২০০৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা সাইমন্ডসকে সম্মান জানালেন বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ক্রিকেটাররা। এক মিনিট নীরবতা পালন করেছেন। ম্যাচ শুরুর আগে দুই দলের ক্রিকেটাররা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে স্মরণ করেন তাকে। এ সময় জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠে সাইমন্ডসের ছবি, লেখা ছিল, ‘রিমেমবারিং অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস ১৯৭৫-২০২২।’ ক্রিকেটারদের বাহুতে ছিল শোকের প্রতীক কালো ব্যান্ড।
সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান মাইকেল বেভানের টুইটে লিখলেন, ‘হৃদয় ভেঙে যাওয়ার মতো, অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেট হারাল আরেকজন নায়ক। আমি স্তম্ভিত, ২০০৩ বিশ্বকাপে আমার সতীর্থ। অসাধারণ প্রতিভা।’ আরেক সতীর্থ অ্যাডাম গিলক্রিস্ট প্রতিক্রিয়ায় লিখলেন, ‘এটা সত্যিই বেদনাদায়ক। আপনার সবচেয়ে বিশ্বাস, মজার ও ভালোবাসার বন্ধুর কথা ভাবুন, যে কোনো বিপদে যে আপনার জন্য সবকিছুই করবে। ও ছিল এমনই একজন।’
২০০৮ সালের সিডনি টেস্টে কুখ্যাত ‘মাঙ্কিগেট’ বিতর্কের সাইমন্ডসের সঙ্গে তার সম্পর্কটা ভাল ছিল না। সেই ভারতীয় স্পিনার হরভজন সিং খবরটা শুনে হতাশ। তার প্রতিক্রিয়া, ‘অ্যান্ড্র সাইমন্ডসের আচমকা চলে যাওয়ার খবরে স্তম্ভিত। অনেক দ্রুতই চলে গেলেন। তার পরিবার ও পরিজনের প্রতি হৃদয়ের ভেতর থেকে সমবেদনা। বিদেহী আত্মার জন্য প্রার্থনা।’
ভারতীয় কিংবদন্তি শচিন টেন্ডুলকারও হতাশ, ‘অ্যান্ড্রু সাইমন্ডসের চলে যাওয়া আমাদের সবার জন্যই মেনে নেওয়া কঠিন। অসাধারণ এক ফিল্ডারই শুধু ছিল না সে, মাঠে ছিল প্রাণশক্তির উৎস। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সে একসঙ্গে কাটানোর সময়কার দারুণ সব স্মৃতি আছে আমার।’
গত শনিবার রাতে কুইন্সল্যান্ড রাজ্যে টাউন্সভিল শহরের কাছে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেলেন তিনি। টাউন্সভিল শহরের ৫০ কিলোমিটার দূরে দুর্ঘটনাটি ঘটে। তাতেই প্রাণ হারান ৪৬ বছর বয়সী সাইমন্ডস। অস্ট্রেলিয়ার হয়ে দুইবার ওয়ানডে বিশ্বকাপ জেতা ক্রিকেটার তিনি। সাইমন্ডস কুইন্সল্যান্ডে নিজ গাড়ি চালাচ্ছিলেন। হারভি রেঞ্জ রোডের কাছে আ্যালিস রিভার ব্রিজ থেকে বামে বাঁক নেওয়ার সময় আচমকা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায় গাড়ি।
স্ত্রী লরা ও দুই শিশু সন্তান ক্লোয়ি ও বিলিকে রেখে গেছেন সাইমন্ডস। তার জন্ম ১৯৭৫ সালের ৯ জুন, ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে। তাকে তিন মাস বয়সে তাকে দত্তক নেন এক অস্ট্রেলিয়ান দম্পতি। ১৯৯৮ থেকে ২০০৯ অব্দি অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলেন তিনি। ২৬ টেস্ট, ১৪ টি-টুয়েন্টি ও ১৯৮ ওয়ানডের ক্যারিয়ার। ২০০৩ ও ২০০৭ সালে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন তিনি। ওয়ানডেতে তার রান ৫০৮৮। নিয়েছেন ১৩৩ উইকেট। টেস্টে দু’টি শতরান-সহ ১৪৬২ রান করেন সাইমন্ডস। নেন ২৪ উইকেট।
Discussion about this post