দলের যখন ১৩, তখনই প্রথম উইকেটের পতন। ফিরে যান ওপেনার লিটন কুমার দাস। এরপর টপ অর্ডার ভাঙল বালির বাঁধের মতো! বিশ্বাস-অবিশ্বাসের ছোঁয়া যেন, ১৮ রান তুলতেই বাংলাদেশের নেই ৪ উইকেট। এরপর ৪৫ রানে শেষ ৬ উইকেট। বিদায় নেন লিটন দাস, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, ইয়াসির আলী, সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ।
এরপর কে জানতো এমন চমক দেখাবেন আফিফ হোসেন ধ্রুব ও মেহেদী হাসান মিরাজ। তাদের ব্যাটিং বীরত্বে চট্টগ্রামে লেখা হলো এক রোমাঞ্চের গল্প। শতরানের জুটিতে দু’জন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪ উইকেটে জয় এনে দিলেন বাংলাদেশকে। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল টাইগাররা।
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নামে আফগানরা। যদিও অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শাহিদিকে স্বস্তি দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। সফরকারীরা ৪৯.১ ওভারে ২১৫ রান তুলে অলআউট। এরপর প্রাথমিক ধাক্কায় দিশেহারা ছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ৬ উইকেট হারিয়ে দল যখন হারের শঙ্কায় তখন প্রতিরোধ গড়েন আফিফ হোসেন ও মিরাজ। তাদের লড়াকু হাফসেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ পায় মনে রাখার মতো এক জয়।
কিন্তু টপ অর্ডারের ব্যাটিং যেন দুঃস্বপ্ন। মনে হচ্ছিল ১০০ রানের আগেই বুঝি শেষ হয়ে যাবে সব! আফগানিস্তানের ২১৫ রানের জবাবে নেমে শঙ্কায়ই পড়ে স্বাগতিকরা। শেষ অব্দি রক্ষা।
রেকর্ড জুটি গড়েন আফিফ-মিরাজ। ২১৬ রানের লক্ষ্য টপকাতে মাত্র ৪৫ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ দল। এ অবস্থায় পথ দেখান এই দুই ব্যাটসম্যান। গড়েন রেকর্ড। সপ্তম উইকেট জুটিতে ইমরুল কায়েস, মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের ১২৭ রানের জুটিকে টপকে এখন সর্বোচ্চ রানের জুটি মিরাজ-আফিফের।
২০১৮ সালে মিরপুরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ইমরুল-সাইফ সপ্তম উইকেটে গড়েন ১২৭ রানের জুটি। এটিই ছিল সপ্তম উইকেটে বাংলাদেশ দলের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়লেন মিরাজ আর আফিফ। এই জুটি গড়ার পথে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম হাফসেঞ্চুরি করেন আফিফ। মিরাজও করেন দ্বিতীয় অর্ধশতক।
আফিফ করেন ১১৫ বলে অপরাজিত ৯৩ ও মিরাজের ব্যাটে ১২০ বলে অপরাজিত ৮১। দু’জন সপ্তম উইকেটে জমা করেন ১৭৪ রান।
তবে হতাশ করেছেন চট্টগ্রামের ছেলে ইয়াসির আলী চৌধুরী রাব্বি। অভিষেকে কোন রান না করেই ফিরলেন তিনি। বাংলাদেশের ১৩৭তম ওয়ানডে খেলোয়াড় কোন রানই করতে পারলেন না। চট্টগ্রামের তারকা ক্রিকেটার আফতাবের ওয়ানডে অভিষেক ২০০৪ সালে। বার্মিংহামে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেকে নামেন পাঁচ নম্বরে। তিনিও ফিরে যান শূন্য রানে। ১৮ বছর পর চট্টগ্রামের আরেক ছেলে ইয়াসিরের সেই পাঁচ নম্বরে নেমে ডাক!
এর আগে বল হাতে সফল বাংলাদেশের বোলাররা। তিন উইকেট নিয়ে সফলতম বোলার মুস্তাফিজুর রহমান। দুটি করে উইকেট নিয়েছেন শরিফুল ইসলাম, সাকিব আল হাসান ও তাসকিন আহমেদ। একটি উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ। মেহেদী হাসান মিরাজ ১০ ওভারে দেন মাত্র ২৮ রান।
আফগানদের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের ছয়জনই দুই অঙ্কে পা রাখেন। ব্যাটসম্যান নাজিবউল্লাহ জাদরান (৬৭) আর রহমত শাহ (৩৪)।
সব ব্যর্থ করে দিয়ে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে হাসল বাংলাদেশ। হাসলেন আফিফ-মিরাজ!
Discussion about this post