ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
সবকিছুরই শেষ আছে। একটা সময় থাকতেই হয়। থামলেন শাহরিয়ার নাফীসও। তবে দুঃখ একটাই মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারলেন না। তারপরও দুঃখবোধ নেই। নিয়ম মেনে সরে যাচ্ছেন আন্তর্জাতিক ও ঘরোয়া ক্রিকেট থেকে। ব্যাট তুলে রাখতে গিয়ে তার মনে হচ্ছে যেন স্কুল ছেড়ে দিচ্ছেন। যদিও ক্রিকেটার হিসেবে ক্যারিয়ার শেষ করলেও ক্রিকেটেরই সঙ্গে থাকছেন তিনি।
২০০৫ সালে ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক নাফীসের। অবশ্য বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তার ১৫ বছরের পথচলার শেষ ৮ বছরই ছিলেন বাংলাদেশ দলের বাইরে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যুক্ত রেখেছিলেন নিজেকে। নতুন দায়িত্ব পেয়ে মাঠের ক্রিকেটকে বিদায় বললেন তিনি।
তবে ক্রিকেটার নাফীসকে মনে রাখতেই হবে। ২০০৬ সালে বাংলাদেশ দলের প্রথম টি-টুয়েন্টি অধিনায়কের দায়িত্ব নিয়েই দলকে এনে দিয়েছিলেন জয়। একই বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ঘরের মাঠে টেস্ট খেলতে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকান নাফীস। এরপর ১৪ বছর কেটে গেলেও বাংলাদেশের আর কোনও ব্যাটসম্যানের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেট সেঞ্চুরি তুলে নিতে পারেন নি। ওয়ানডে ক্রিকেটে এক বছরে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি আর একমাত্র বাংলাদেশি হিসেবে হাজার রান করা ব্যাটসম্যান তিনি।
২০১৩ সালের পর আর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দিতে পারেন নি তিনি। ৮ বছর ঘরোয়া ক্রিকেটে লড়ে গেলেও লাভ হয়নি নাফীসের। এ বছরই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছ থেকে প্রস্তাব পান নাফীস। বোর্ডের ক্রিকেট অপরাশেন্স বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজারের পদ দেওয়া হয় তাকে। খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি টানা নাফীস সহসাই নতুন দ্বায়িত্বে কাজ শুরু করবেন।
শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টার সংলগ্ন ১ নং প্লাজায় ‘পিচ ফাউন্ডেশন’ এর একটি অনুষ্ঠানে বিদায়ী সংবর্ধনা দেওয়া হয় নাফীসকে। ক্রিকেটার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশকে (কোয়াব) জানিয়ে বিদায় বলেন নাফীস।
এমন সময়ে আবেগপ্রবন হয়ে উঠনে নাফীস। বিদায় বেলায় বলেন, ‘একটু কঠিন। গতকাল থেকেই চিন্তাভাবনা করছিলাম। আমি খেলব না এটা ভেবে খুব কষ্ট লাগছে না, তবে অনুভূতিটা অদ্ভুত জানি। আমি একটা স্কুলে পড়লাম, স্কুল ছেড়ে দিচ্ছি- ওরকম অনুভূতি। খুবই অদ্ভুত। আমি সবসময় সব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিয়েছি, পরিস্কার করে। আমি চিন্তা করেছি যখন একজন খেলোয়াড় হিসেবে আর অবদান রাখতে পারব না, তবে সবসময় বলেছি আমি ক্রিকেটের সাথেই থাকব। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময়। কারণ খেলে যতটুকু অবদান রাখতে পারব তারচেয়ে বেশি এখন পারব। এজন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়নি।’
নাফীসের বিদায়ী অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান পাপন। সেই ময়দানেসিদ্য সাবেক এই ক্রিকেটার আরও বলেন, ‘আমাদের চেয়েও বড় অনেক ক্রিকেটারের এই সৌভাগ্য হয়নি। বিসিবি ও কোয়াবকে ধন্যবাদ এরকম একটা আয়োজনের জন্য। যদি করোনা না থাকত আমরা খেলে বিদায় নিতে পারতাম। তারপরও আমাদের জন্য যতটুক করেছে আমরা কৃতজ্ঞ।’
১৫ বছরের ক্যারিয়ারে কোন অতৃপ্তি নেই বলেও জানান নাফীস। বলেন, ‘আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া বাংলাদেশ মানুষের ভালোবাসা। আমি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আরেকটু বেশি খেলতাম হয়ত পরিসংখ্যান আরও ভালো হত। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে তৃপ্তি বিচার করি না। বাংলাদেশ মানুষ ও মিডিয়ার যে ভালোবাসা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্য সম্ভব না। আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো অতৃপ্তি নেই।’
নাফীস সব মিলিয়ে ২৪ টেস্ট, ৭৫টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন। এখন দেশের ক্রিকেট উন্নয়নে কাজ করে যাবেন ৩৫ বছর বয়সী ক্রিকেটার।
Discussion about this post