ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
খর্ব শক্তির দল নিয়ে বাংলাদেশে আসায় ওয়েস্ট ইন্ডিজকে কেউ তেমন গোনায় ধরেনি। তবে সফরকারীরা সব সময়ই নিজেদের সামর্থ্যে আস্থা রেখেছিল। ক্যারিবিয়ানরা সেটির প্রমাণ দিয়েছে চট্টগ্রাম টেস্টে জিতে। সফরকারীদের জয়ের নায়ক কাইল মেয়ার্স রোববার বললেন, সফরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের প্রতি যে খোলা চিঠি লিখেছিলেন কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড, তা বেশ অনুপ্রাণিত করেছিল তাদের।
শীর্ষ ক্রিকেটার ছাড়া সফরে এসে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে হারিয়ে চমকে দিয়েছে ক্রিকেট বিশ্বকে। যে কারণে তারা এখন সমর্থক থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেটারদের অভিনন্দনের জোয়ারে ভাসছেন।
হঠাৎ বদলে যাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে খোলা চিঠিতে কি শুনিয়েছিলেন লয়েড। তা হবহু ক্রিকবিডির পাঠকেদের জন্য তুলে ধরা হল….
ডিয়ার গাইস্,
এই বার্তাটা কেন তোমাদের পাঠানো দরকার বলে মনে হলো, তা আগে বলি। আমি জানি, তোমরা এমন একটা সফরে যাচ্ছ, যেটির জন্য তোমরা হয়তো প্রস্তুত ছিলে না। তোমাদের এমনও মনে হতেই পারে যে, প্রবল বিরুদ্ধ একটা পরিস্থতিতে তোমাদের পাঠিয়ে দিয়ে মানুষ আশা করছে, তোমরা ভালো কিছু করবে। তোমাদের যা মনে গেঁথে নেওয়া উচিত, তা হলো তোমরা শুধুই শূন্য স্থান পুরণ করছ না, বরং এটা ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে জায়গা পাকা করার একটা সুযোগ। যোগ্যতার কারণেই তোমাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। এটা তোমাদের নিয়তি। এখন তোমাদের সামনে তা কাজে লাগানোর সুযোগ। তোমরা যে দ্বিতীয় শ্রেণির ক্রিকেটার নও, নিজেদের প্রতিভা মেলে ধরে সবাইকে তা দেখিয়ে দেওয়ার সুযোগ।
১৯৬৬ সালে আমি প্রথমে ঠিক করা টেস্ট দলে জায়গা পাইনি। আমার ভাগ্য ভালো, সিমুর নার্স চোট পেয়ে ছিটকে পড়ল এবং টেস্ট শুরুর ৪৫ মিনিট আগে আমাকে বলা হলো যে, আমি খেলছি। এর পর আমি টানা ৩৫টি টেস্ট ম্যাচে খেলেছি, কারণ আমি ভালো পারফর্ম করেছিলাম। আমরা সেই সিরিজটিও জিতেছিলাম। একটু খেয়াল করে দেখো, আমি বুঝতে পেরেছিলাম এটা আমার প্রতিভা ও সামর্থ্য দেখানোর সুযোগ এবং দুহাতে সেই সুযোগটা গ্রহণ করেছিলাম। এর সঙ্গে একটা জিনিস যোগ করে নিতে বলি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে খেলাটা এই অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য সর্বোচ্চ সম্মানগুলোর একটি। এটা আমি তখনো বিশ্বাস করতাম, এখনো করি।
তোমরাও নিজেদের এই অবস্থায় আবিস্কার করেছ; সুতরাং; তোমাদের সামনে এখন পুরো পৃথিবী। তোমাদের জন্য এটা নিজেদের নির্বাচনকে যৌক্তিকতা প্রমাণ করার সুযোগ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওই ব্যাজ আর ক্যাপ পরতে পারছ বলে তোমাদের গর্ব অনুভব করা উচিত। ভূলে যেও না. তোমরা ইতিহাসের সেরা ক্রিকেট জাতিগুলোর একটির প্রতিনিধিত্ব করছ, যাদের অসাধারণ সব রেকর্ড নিয়ে তোমাদের মনে গর্ববোধ থাকা উচিত।
এটাও মনে রেখো, আমরা কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ লাখ মানুষের একটা জাতি আমাদের রেকর্ডের মধ্যে আছে: টানা ২৯টি টেস্ট ম্যাচে অপরাজিত থাকা, টানা ১১টিতে জয়। ১৭ বছর আমরা কোনো টেস্ট ম্যাচ হারিনি। এটা আমাদের অতীত অর্জনের সামান্য একটা অংশ। যা অর্জন করতে পারার মূলে ছিল কঠোর পরিশ্রম, দায়বদ্ধতা ও লক্ষ্য সম্পর্কে পরিষ্কার থাকা।। এর সঙ্গে আমি তোমাদের বলব, নিজেদের ফিটনেসের দিকে সব সময় নজর রেখো। ব্যাটসম্যান হও বা বোলার, নিজের টেকনিক ও দক্ষতায় উন্নতি করার চেষ্টা করে যেও। আমার দল তা করতে পেরেছিল এবং আমি নিশ্চিত, তোমরাও তা পারবে।
তোমাদের সামনে এখন সুযোগ এসেছে, আমাদের টেস্ট ম্যাচ রেটিং বাড়ানোর এবং আমাদের ক্রিকেটে আবারও কিছু গর্ববোধ যোগ করার। এটা শুধু আমার একার প্রত্যাশা না, পুরো ক্যারিবিয়ান অঞ্চলেরও প্রত্যাশা। তোমাদের জয়ে ওদেরও জয় হবে।
বাংলাদেশ সফর তোমাদের কাছে কঠিন মনে হতে পারে, তবে কাজটা অসাধ্য কিছু নয়। বরং আমি বলব, এটা দারুণ একটা সুযোগ। তোমাদের দৃঢ়প্রতিজ্ঞা, পেশাদারত্ব, তারুণ্য এবং জেদ দিয়ে তোমরা ক্রেইগ ব্রাফেটের বিচক্ষণ নেতৃত্বে নতুন এক যুগের সূচনা করতে পারো। আবারও মনে করিয়ে দিই, আমি যা বলছি. তা শুধু বাগাড়ম্বর নয়। যা বলছি, তা আমার অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি।
আমি যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের দায়িত্ব নিয়েছিলাম, আমরা তখন টানা ২০টিরও বেশি টেস্ট ম্যাচে হেরেছি। দলের পুনর্গঠন ও নতুন লক্ষ্য নির্ধারণ করাটা ছিল খুব জরুরি। আমার দলেও অনেক অনভিজ্ঞ খেলোয়াড় ছিল, সংখ্যায় হয়তো তা তোমাদের সমানই হবেI কিন্তু আমার দল চ্যালেঞ্জটা নিতে একটুও দ্বিধায় ভোগেনি এবং শেষ পর্যন্ত আমরা ঠিকই শীর্ষে যেতে পেরেছি। আমি বিশ্বাস করি, তোমরাও ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলকে ঢেলে সাজানোর কাজটা করতে পারবে। আমরা তা করতে পেরেছিলাম, কারণ নিজেদের ওপর আমাদের বিশ্বাস ছিল। তোমরাও পারবে। নিজের ওপর বিশ্বাসটা হচ্ছে সাফল্যের পথে প্রথম ধাপ।
আমি তোমাদের ওই আপ্তবাক্যটা মনে রাখতে বলব: “ইন অর্ডার টু গেইন অ্যাটিটিউড, ইউ মাস্ট হ্যাভ দ্য রাইট অ্যাটিটিউড।’ ইতিবাচক মানসিকতা তোমাদের অনেক কঠিন পরিস্থিতি থেকে উদ্ধার করবে। আমি নিশ্চিত, এই সফরে যে পরিস্থিতিতে তোমরা অনেকবারই পড়বে। সবশেষে বলি, শুধু অভিধানেই ‘সাকসেস’ শব্দটা ‘ওয়ার্ক’-এর আগে আসে। আমি তোমাদের সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করি। মনে রেখো, কতটা প্রতিকূলতা জয় করেছে, তা দিয়েই বেশির ভাগ মানুষের বিচার হয়।
Discussion about this post