ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
মাত্র ২৭ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের ক্রীড়া বিভাগের সহ সম্পাদক অর্ণব মজুমদার। যিনি দীপায়ন অর্ণব নামে পরিচিত। শুক্রবার দুপুরে অসুস্থ বোধ করায় ঢাকার দক্ষিণ খানের বাসা থেকে ওষুধ কিনতে ফার্মেসিতে গিয়েছিলেন অর্ণব। সেখানে সে চেতনা হারিয়ে পড়ে গেলে পুলিশের সহায়তায় তাকে স্থানীয় কেসি হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু জরুরি বিভাগের ডাক্তার জানান, অর্ণব আগেই মারা গেছে।
তার এমন অকাল মৃত্যুতে শোকাহত বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গন। বঙ্গবন্ধু বিপিএল চলার সময় শুক্রবার জায়ান্ট স্ক্রিনে ভেসে উঠল তার মুখ। শোক জানাল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। স্তব্ধ অর্ণবের ক্রীড়া সাংবাদিক বন্ধু, সহকর্মীরা।
তাদেরই একজন নোমান মোহাম্মদ। দৈনিক কালের কণ্ঠের বিশেষ প্রতিনিধি তার ফেসবুক টাইমলাইনে লিখলেন শোকগাঁথা। তার সেই স্ট্যাটাসটি তুলে ধরা হলো ক্রিকবিডি২৪.কম এর পাঠকদের জন্য-
নেত্রকোণায় আজ রাতে কি বেজায় শীত পড়েছে? তা পড়ুক গে। গায়ে চাদর মুড়িয়ে এক মা নিশ্চয় পথের মাথায় এসে দাঁড়িয়ে থাকবেন। পাড়া-পড়শিতে ঘর ভরে গেছে, আত্মীয়-স্বজন বিলাপ করছে। কিন্তু ওসবে কান দেন না মা। তাঁর আদরের ছোট্ট ছেলেটি যে আসছে ঢাকা থেকে! আঁচল বিছিয়ে সেই অর্ণবকে কোলে তুলে নিতে হবে তো!
অর্ণব কিন্তু বেজায় খুশি। কংক্রিটের জঙ্গল ছেড়ে মায়ের কাছে যাচ্ছে বলে। কত কথা জমে আছে ওর! ইন্টারনেট শেখানোর পর মায়ের এ নিয়ে আদিখ্যেতায় খুনসুটি করবে আজ বেশ। আর আঁচলের খুটি ধরে মায়ের কাছে একটু বকুনি খাওয়ার প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছে। পেটব্যাথার কাতর হয়ে দুপুরে মাকে ফোন করার পর তিনি যে বললেন ওষুধ খেয়ে নিতে, সেটি খেতে পারেনি বলে। ওই ফার্মেসির সামনে পড়ে গিয়েই তো সব শেষ!
মা অভিমান করবেন। আমারও অর্ণবের প্রতি বড্ড অভিমান। কেন যে ফিল হিউজকে নিয়ে ছেলেটির অমন ছেলেমানুষি ছিল! মাত্র ২৬ বছর বয়সে বলের আঘাতে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানের মৃত্যু; এর পাঁচ বছর পর এখনো অর্ণবের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের কাভার ফটোতে হিউজ। ওর চেয়ে এক বছরের সিনিয়র হয়েই স্বর্গে যাত্রা অর্ণবের। হিউজের সঙ্গে এই পাগলপারা ভক্তের আড্ডার কথা ভেবে আমার অভিমান হচ্ছে খুব। ঈর্ষাও!
কালও প্রেসবক্সে ছিল অর্ণব। কার সঙ্গে কী কথা হচ্ছে, সেসবের স্মৃতিচারণ করছেন সবাই। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলে আমি কাল আসিনি। পরশুই তাই অর্ণবের সঙ্গে শেষ দেখা। লিভারপুলের পাঁড় সমর্থক ও; আমি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। মজা করে ওকে বলছিলাম, ‘লিভারপুল আবার ইংলিশ লিগে চ্যাম্পিয়ন হবে, এটি দেখার আগে তো আমার মরে যাওয়াও ভালো।’
কী আশ্চর্য, আমি এখনো বেঁচে আছি! কিন্তু প্রিয় ক্লাব লিভারপুলের ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠত্ব দেখে যাওয়া হল না অর্ণবের। ভাই অর্ণব, আমি কথা দিচ্ছি। এই মৌসুমের বাকিটা সময় প্রতিটি ম্যাচে আমি লিভারপুলের সমর্থন করব; শুধু আপনার জন্য। ওদের ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য প্রার্থনা করব; শুধুই আপনার জন্য।
অর্ণব, লিভারপুল চ্যাম্পিয়ন হলে আপনি নিশ্চয়ই স্বর্গ থেকে শ্যাম্পেন ছিটিয়ে দেবেন। আমি সেই উৎসবের বৃষ্টিতে ভেজার অপেক্ষায় থাকলাম।
Discussion about this post