ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের (বিপিএল) শুরু থেকেই সঙ্গী বিতর্ক। ম্যাচ গড়াপেটা থেকে শুরু করে নিয়ম ভাঙা সবই চলেছে। আগামী আসর শুরু হওয়ার আগেই ঝামেলা তৈরি হয়েছে। একের পর অভিযোগ তুলছেন টুর্নামেন্টের ফ্রাঞ্চাইজিরা। দুঃখজনক হলেও সত্য-৬টি আসর শেষ হয়ে গেলেও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো যা বিনিয়োগ করছে সেই অর্থের ধারে কাছেও পৌঁছাতে পারেনি! তাদের উপার্জনের অন্যতম উপায়ের একটি হলো জার্সি বিক্রি। ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর দেওয়া তথ্য মতে তারা যা বিনিয়োগ করছে তার অর্ধেকও মার্কেট থেকে তুলতে পারেনি।
একটি প্রতিষ্ঠিত দলের প্রতি মৌসুমে ব্যয় হয়েছে ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা। কিন্তু উপার্জনে ২৫ ভাগ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে। রাজশাহী কিংসের সিইও তাহমিদ জানাচ্ছিলেন, ‘আইপিএল তার প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজিকে বছরে দেড়শ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেয়। বিসিবি সেখানে ফ্র্যাঞ্চাইজিদের কাছ থেকে শুধু নেয়। আমরা খেলোয়াড়দের টাকা দিই, প্রচারে টাকা দিই, বিসিবিকে টাকা দিই। কম করে হলেও একটা দলকে ১২ থেকে ১৫ কোটি টাকা খরচ করতে হয়। ফ্র্যাঞ্চাইজি আয় শুধু লোগো ব্র্যান্ডিং থেকে। খরচের তুলনায় যা খুবই সামান্য। এভাবে খরচ করতে হলে কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিই বেশিদিন টিকবে না।’
ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো আলাদা করে বিসিবির কাছে অবশ্য অনুরোধও করেছিল লাভের অংশ চেয়ে। কিন্তু সেই অনুরোধ পাত্তা দেয়নি দেশের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থাটি। লোকসানে নিজেদের সরিয়ে নেয় চিটাগং ভাইকিংস। যার মালিকানায় থাকা ডিবিএল গ্রুপ এখনও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি নাম প্রত্যাহারের।
রংপুর রাইডার্সের প্রধান নির্বাহী ইশতিয়াক সাদেক যেমন বলেন, ‘বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে বহুদিন ধরেই যুক্ত। ক্রিকেট, ফুটবলসহ অন্যান্য ক্রীড়াঅঙ্গনেও সম্পৃক্ত। এটা আর কিছু নয়, শুধু ক্রিকেটের প্রতি গভীর আবেগ থেকে বিপিএলে আমাদের যাত্রা অব্যাহত আছে। আমরা এমন পরিবার থেকে এসেছি যেখানে আমাদের রক্তেই খেলাধুলা সম্পর্কিত। লোকজন হয়তো মনে করে আমরা অনেক টাকা উপার্জন করছি। এমনকি আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু তাই মনে করে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখন প্রতি বছরে নির্দিষ্ট দলকে সুবিধা দিতে নিয়ম পাল্টানো হচ্ছে। যেটা খুবই দুঃখজনক।’
বিপিএল সপ্তম আসর শুরু হবে এই বছরের ডিসেম্বরে। তার আগেই সাকিব আল হাসান ঢাকা ডায়নামাইটস থেকে রংপুর রাইডার্সের সঙ্গে চুক্তি করেছেন। এটা নিয়ে তৈরি হয়েছে বিতর্ক। আইকন ক্রিকেটার হিসেবে তার চুক্তির বিষয়টি বিপিএল গভর্নিং কাউন্সিল অস্বীকার করলে টুর্নামেন্ট থেকে সরে দাঁড়ানোর হুমকি দেয় রংপুর রাইডার্স।
রাজশাহী কিংসের সিইও তাহমিদ আজিজুল হক বলেন, ‘আমরা আসলে আশার ভেলাতে চড়েই টুর্নামেন্টে টিকে আছি। হয়তো একদিন গভর্নিং কাউন্সিল বুঝতে পারবে টুর্নামেন্টকে সফল করতে হলে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোকে কিছু বিনিময়ে দিতে হবে। যারা কিনা খেলাটিকে সফল করতে বিনিয়োগ করে চলেছে।’
বিপিএল থেকে প্রতি আসরে অন্তত ৩৫ কোটি টাকা আয় করে বিসিবি। এরমধ্যে টিভিস্বত্ব থেকে আসে ২৭ কোটি টাকা। গ্রাউন্ডস ও ব্র্যান্ডিং থেকে আসে সাড়ে ছয় কোটি টাকা। টিকিট থেকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ ছাড়া স্টেডিয়ামে স্টল ভাড়া দিয়েও আয় করে বিসিবি। ফ্র্যাঞ্চাইজি ফি থেকেও আসে ৯ কোটি টাকার মতো।
সব মিলিয়ে বিপিএল থেকে বছরে ৪৫ কোটি টাকার মতো আয় করে বিসিবি। তবে টুর্নামেন্ট আয়োজনের খরচ বাদ দেওয়ার পর কম হলেও ৩৫ কোটি টাকা সংস্থাটির ভাণ্ডারে থাকে! অথচ দলগুলো রয়েছে আর্থিক সঙ্কটে!
Discussion about this post