খালেদ মাসুদ পাইলট
ভিসিআরই নয়, সিনেমা হলেও বন্ধুদের নিয়ে ছুটে গেছি বারবার। আমার সেই শৈশবে তখন তো জসিম আর ওয়াসিমের যুগ। দুজনই দাপুটে নায়ক। যাকে বলে ড্যাশিং হিরো। অ্যাকশন ধর্মী সিনেমা ভাল লাগত। আমরা রাজশাহীর সাগর পাড়ার হল কল্পনা’য় সিনেমা দেখতে ছুটতাম। লাইনে দাড়িয়ে টিকিট কাটতাম। সে এক বিশাল ঝক্কি। ভীড় ঠেলে অবশ্য টিকিট কাটার ঝামেলাটা আমাকে তেমন পোহাতে হতো না। আমার এক বন্ধুই সেটা সেরে নিতো। তার গায়ে আবার শক্তি বেশি কীনা! সবাইকে কোনাঠাসা করে চলে যেতো কাউন্টারের কাছে। মফস্বল শহরের কেউ ছাড়া এই অভিজ্ঞতাটা ঠিকঠাক বুঝবে না!
দেশের বাইরে আমার পছন্দের অভিনেতা আমির খান। কেন? তাহলে শুনুন বলছি- তিনি পারফেকশনিষ্ট! আসলে শিক্ষণীয় কিছু দেখাতেই আমার আগ্রহ। শুধু ঝালমুরির মতো মজা হলেই হবে না, তাতেত শেখার কিছু চাই। অনর্থক বসে থেকে সময় নষ্ট করতে ভাল লাগে না। যেমন ধরুন আমির খানের ‘লগান’ ছবিটি দেখে লিডারশিপ ব্যাপারটা শিখেছি আমি। ওই সিনেমাটি দেশপ্রেমও শিখিয়েছে আমাকে। দেশের জন্য কিভাবে প্রান দিয়ে লড়তে হয় সেটা লগান থেকে বুঝেছি। পওে রেসই অভিজ্ঞাতাটা নিজের খেলাতেও কাজে লাগাতে চেস্টা করেছি। আবার ওর ‘থ্রি ইডিয়টস’ সিনেমাটি বুঝিয়েছে শুধু সার্টিফিকেট অর্জনের জন্য পড়াশোনা করে লাভ নেই। ভাল লাগা আর ভালবাসা থেকেই সবকিছু করতে হবে। মন যা চায় সেটাতেই বেশি করে মনোযোগ দেওয়া উচিত।
যার গান গাওয়া পছন্দ তাকে আপনি জোর করে ক্রিকেটার বানাতে চাইলে তো আর হবে না। আবার যে ক্রিকেটার হতে চাইছে তাকে ছায়ানটে ভর্তি করে লাভ নেই। কিছুই হবে না! বাবা-মাকে এই ব্যাপারগুলো ভাল করে বুঝতে হবে। একটা সময়ের পর ওদের ইচ্ছের গুরুত্ব দেওয়া চাই। তাহলেই কেবল জীবনটা অর্থবহ হয়ে উঠবে। তখন কাজটাকে ঠিক কাজ মনে হবে না। দেখুন- আমার বাবা ছিলেন ফুটবলার। বেশ নাম-ডাকও ছিল উনার। জাতয়ি পর্যায়ে সাফল্য আছে উনার। আমি তো বাবার পথ অনুসরন করে ফুটবলারই হতে পারতাম। কিন্তু আমার মন ছিল ক্রিকেটে। আর সত্যি বলতে কী আমার বাবাও সেই ইচ্ছেই বাধ সাধেন নি। তিনি আমাকে ক্রিকেটার হওয়ার পথ তৈরি করে দিয়েছেন। আমার মনের কথা শুনেছেন।
শুধু সিনেমাই নয়, গানের প্রতিও একটা মোহ আছে আমার। লাউড মিউজিক শুনতে ভালবাসি আমি। অনুশীলনের সময় উচ্ছস্বরের সাউন্ড নির্ভর গানই বেশি শুনি। ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না, তবে এই গানগুলো আমাকে অনুশীলনে অনুপ্রেরনা জোগায়। এছাড়া আমার পছন্দের তালিকায় আছে মাইলস আর জেমস। মাইলসের গানগুলো প্রায়ই গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠি- জ্বালা জ্বালা এই অন্তরে.. কিংবা ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে..। সেই শৈশব থেকেই আমি হামিন-শাফিনের ভক্ত। আমি নিশ্চিত আমাদের প্রজন্মের প্রায় সবাই মাইলসের গান গেয়েই বড় হয়েছে। আর জেমসের গানও বেশ পছন্দ আমার। ওর গান মন ছুঁয়ে যায়। বিশেষ করে মা-বাবা দুটো গানই আমার অসম্ভব প্রিয়।’ মনে হয় গান দুটো যেন আমার জন্যই লেখা। প্রিয়জন হারানোর কষ্ঠ ফিরে আসে এই গানে। একইসঙ্গে মনটাও যেন হালকা হয়ে উঠে। জেমসের অন্যগানও বেশ ভাল লাগে আমার। ওর গানে দরগ আছে!
দেশের বাইরে মান্না দে’র গান খুব টানে তাকে। কী দরদি কন্ঠ, কফি হাউজের সেই আড্ডাটা আজ আর নেই..। এই গানে আমি আমার হারিয়ে যাওয়া সেই প্রিয় সময়কে ফিরে পাই। বন্ধুদেও সঙ্গে রাজশাহঅর সেই আড্ডা এখনো মিস করি। এটা শুধু নিছক একটা গান নয়, জীবনের গল্পও। ভাল লাগে আরেক কিংবদন্তি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানও। সময় পেলেই তাদেও গানে বুঁদ হয়ে থাকি।
আসলে শুধু ক্রিকেট খেলাই নয়, অভিনয়েও নাম লেখাতে হয়েছে আমাকে। সেটা অবশ্য অনুরোধের ঢেকি গেলার মতো ব্যাপার। কোন ইচ্ছেই ছিল না। তারপরও কিভাবে যেন দুটো টেলিভিশন নাটকে অভিনয় করে ফেললাম। সে এক দারুণ অভিজ্ঞতা। টিভি চ্যানেল বাংলাভিশনের প্রোগ্রাম হেড শামীম সাহেদ ভাইয়ের অনুরোধেই কাজটা করতে হয়েছে আমাকে। উনি চেয়েছিলেন নতুন কাউকে দিয়ে ভ্যালেন্টাইন ডে’র নাটকটি করাতে। আমাকে প্রস্তাবটা দিলেন। ভালবাসা দিবসের বিশেষ নাটকের কাহিনীটাও শোনালেন। কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারছিলাম না। তারওপর আমার বিপরীতে ছিলেন অপি করিম। লাক্সসুন্দরী। দারুন মেধাবী একজন মানুষ। তার মতো অভিনেত্রীর বিপরীতে অভিনয় করতে গিয়ে ভয়ই পেয়েছিলাম। রীতিমতো কাপছিলাম। মজার ব্যাপার হল- সেই নাটকে আমাকে চোরের ভুমিকায় দেখা গেছে। তবে সেটা ছিচকে চোর নয়, আমি আসলে মন চুরি করেছিলাম অপির! নিজে যেভাবে কথা বলি সেভাবেই অভিনয়ের চেস্টা করে গেছি। কোনরকম ভনিতা করিনি।
এর ঠিক দুই বছর পর সিনেমার নায়িকা নিপুনের সঙ্গে অভিনয় করলাম এক নাটকে। তখন অবশ্য তেমন ভয় পাইনি। তিনি নিজেও বেশ সহযোগিতা করেছেন আমাকে। তাইতো ব্যাপারটা উপভোগ করেছি। এরপর আরো কিছু প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু ভাই আমাকে দিয়ে এসব হবে না। আড্ডায় হয়তো আমি বেশ সপ্রতিভ। কিন্তু অভিনয় আমাকে দিয়ে হবে না। তবে হ্যা, ক্রিকেট বিষয়ক টক শো করতে ভাল লাগে। গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটে করেছি। প্রায় সবগুলো স্যাটালাইট চ্যানেল থেকে ডাক এসেছে। সাড়া দিয়েছে। ক্রিকেটই তো আমার একান্ত ভুবন। তাইতো এ প্রসঙ্গে বলতে বেশ ভালো লাগে।
দেখুন গান, অভিনয়, সিনেমা দেখা সবই আমার শখের অংশ। ওসব কিছু আসলে শখ অথবা মোহ। আমার আসল পরিচয় ক্রিকেটার। খেলা ছেড়েছি বেশ কিছুদিন হলো। কিন্তু সেই পরিচয় নিয়েই বাকী জীবনটা কাটাতে চাই। আমি চাই সবাই আমাকে ক্রিকেটার হিসেবেই জানুক।
একইসঙ্গে আরো একটা বিষয় চাই-তা হলো জীবনটাকে প্রানভরে উপভোগ করে করতে। বন্ধু আর ভক্তদের একটা কথাই বলবো কাউকে কষ্ট না দিয়ে সময়টাকে প্রানভরে উপভোগ করুন। মন কী চাইছে সেটা শুনুন। জীবন একটাই। প্রদীপ নিভে গেলে আর জ্বলে উঠবে না! আর সমাজ-দেশের জন্য যতোটুকু পারেন, করে যান। দেখবেন অন্যরকম এক শান্তি পাওয়া যায়।
Discussion about this post