চোখেমুখে খুশির ঝিলিক। শুধু ইয়াহু বলে চিত্কারটাই দেওয়া হল না-কিন্তু যুদ্ধ জয়ের বাকি সব চিহ্নই পরিষ্কার। বিসিবির অ্যাডহক কমিটির সভাপতিসহ ডায়াসে বসা সব সদস্যের অঙ্গভঙ্গি থেকে শুরু করে নড়াচড়া-সব কিছুতেই বিজয়ী ভাবসাব স্পষ্ট।
সভাপতি সেটা লুকানোর কোনো চেষ্টাই করলেন না-‘আজ আমরা অনেক আনন্দিত। আজ ক্রিকেটের জন্য খুব ভালো একটা দিন। খুব ভালো একটা খবর পেলাম আমরা। কিছুদিন ধরেই ক্রিকেট নিয়ে আমরা বেশ সঙ্কটের মধ্যেই ছিলাম। বিসিবির নির্বাচন নিয়ে পেছনের কিছুদিন ধরে চলে আসা যে সমস্যা ছিল তার আপাতত সমাধান মিলেছে। আদালতের নির্দেশনা এসেছে-বিসিবির নির্বাচন এনএসসির সংশোধিত গঠনতন্ত্রের আলোকে হতে পারে। ২৯ জুলাই বোর্ডসভা আছে। সেই সভায় আমরা নির্বাচনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার জন্য এনএসসিকে বলব। জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বর্তমান গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিসিবিকে নির্বাচন করার অনুমতি দিয়েছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। এর ফলে বিসিবিতে নির্বাচন হতে আর কোনো আইনি জটিলতা রইল না। আমরা এখন সেই নির্বাচনের পথেই হাঁটছি।’
বিসিবির বর্তমান অ্যাডহক কমিটির সঙ্গে এ ‘নির্বাচনী হাঁটায়’ অনেক পিছিয়ে পড়লেন সাবের হোসেন চৌধুরী ও তার সমর্থক গ্রুপ।
কাল থেকে ক্রিকেটাঙ্গনে শুধু বিসিবির অ্যাডহক কমিটির ‘যুদ্ধ জয়ের’ গল্প।
গত বছর নভেম্বরের শেষভাগে নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে অ্যাডহক কমিটি বোর্ড পরিচালনার দায়িত্ব পায়। বিসিবিতে বেশ লম্বা সময় ধরে রাজত্ব করার চিন্তা নিয়ে আসা অ্যাডহক কমিটি যে ভালো হোমওয়ার্ক করেছিল সেটা বোঝা গেল শুরুতেই। অ্যাডহক কমিটি মিরপুরে চেয়ারে বসার আগেই শোনা গেল বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনীর ইচ্ছে প্রকাশ করেছে এনএসসি। এবং সেই ইচ্ছে অনুযায়ী গঠনতন্ত্রে বেশ খানিকটা কাটাকুটি করে অ্যাডহক কমিটির কাছে পাঠিয়েছে সব কিছু ঠিকঠাক আছে কি না-সেটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে। হঠাত্ বিসিবির গঠনতন্ত্র নিয়ে এনএসসির এত মাথাব্যথা কেন শুরু হল? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে মিলল আসল সত্য। জানা গেল-বিসিবির অ্যাডহক কমিটির সদস্য হয়ে আসা কর্তারাই কৌশলে ছক কষেছেন। এনএসসির ঘাড়ে দায়ভার চাপিয়ে তারা মূলত নিজেদের ইচ্ছে পূরণের পথই পরিষ্কার করছেন। অবশ্য এ সত্য কথাটা বলতেই অ্যাডহক কমিটির গলা ফাটানো চিত্কার-‘আরে আমরা কী করলাম, সব তো করছে এনএসসি!’
অ্যাডহক কমিটির চালাকিতে ক্ষুব্ধ হয়ে এ সংশোধিত গঠনতন্ত্রকে সবার আগে অবৈধ বলে ঘোষণা দিলেন বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। আর এসব ক্ষেত্রে সাধারণত বাংলাদেশে যা হয়; তাই হল। বিসিবির গঠনতন্ত্রের এ সংশোধনীর বাতিল চেয়ে আদালতে গেলেন ক্রিকেট সংগঠক স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। সঙ্গে জুটি বাঁধলেন বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি ইউসুফ জামিল বাবু। রিট হল। মামলা চলল। সেই আইনি লড়াইয়ের শুরুর রাউন্ড জিতলেন মোবাশ্বের হোসেন। চলতি বছর জানুয়ারি শেষ সপ্তাহে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও আবদুর রবের সমন্বয়ে গড়া হাইকোর্ট বেঞ্চ ২৭ জানুয়ারি রিটের রায়ে বিসিবির সংশোধিত গঠনতন্ত্র বাতিল হয়ে যায়। তবে মোবাশ্বরের সেই জয় টিকল মাত্র ২৪ ঘণ্টা। নিজেদের পক্ষে পাওয়া রায়ের স্টে অর্ডার দেখলেন মোবাশ্বের পরদিনই। তারপর মামলা চলল সুপ্রিম কোর্টে। কাল সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ নির্দেশনা দিল-সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বিসিবির নির্বাচন হতে কোনো সমস্যা নেই। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
মূলত গতকাল আদালতের এ নির্দেশনার পর বিসিবির নির্বাচন নিয়ে আপাতত আর কোনো সংশয় রইল না। অবশ্য এটি আদালতের রায় নয়; নির্দেশনা মাত্র। বিসিবির গঠনতন্ত্র সংশোধনী নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা চলছে তার চূড়ান্ত কোনো সুরাহা এখনও হয়নি। ফুল বেঞ্চে সেই মামলার রায় যদি গঠনতন্ত্র সংশোধনের পক্ষে না যায় তখন কী হবে? এ ব্যাপারে আদালতের ব্যাখ্যাটা জানাচ্ছিলেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান-‘তখন গঠনতন্ত্রের প্রক্রিয়া কাউন্সিলরদের দ্বারা অনুমোদন করিয়ে নিতে হবে।’ তবে এ প্রশ্নে স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন দিলেন ভিন্ন তথ্য-‘পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে রায় গঠনতন্ত্র সংশোধনের পক্ষে না গেলে তো নির্বাচনই বাতিল হয়ে যাবে! তাছাড়া জাতীয় স্বার্থ বিবেচনায় রেখে আদালত বর্তমানে এ নির্বাচনের নির্দেশনা দিয়েছেন। বিসিবি আদালতের কাছে আর্জি করেছিল-নির্বাচন না হলে আইসিসি আমাদের এখান থেকে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ সরিয়ে নেবে। আইসিসিতে বাংলাদেশের সদস্যপদ স্থগিত হয়ে যাবে। সেটা দেশের মানসম্মানের জন্য মোটেও ভালো হবে না। এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে আদালত এখন নির্বাচনের জন্য বিশেষ নির্দেশনা প্রদান করেছেন। আমরা অবশ্য পূর্ণাঙ্গ রায়ের অপেক্ষায় থাকব।’
অবশ্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের সেই রায় আসতে কত সময় লাগবে-সেই অপেক্ষা সহসাই শেষ হওয়ার নয়!
Discussion about this post