প্রথম টেস্টে আশা জাগিয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। শতরান করেছিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক। ৯০ ছাড়ানো ইনিংস আসে তামিম ইকবালের ব্যাটে। সব মিলিয়ে ড্রয়ের তৃপ্তি নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সেই পুরনো চেহারার বাংলাদেশ। সোমবার ২০৯ রানের হার। একইসঙ্গে সিরিজ হাতছাড়া। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের এই ম্যাচ নিয়ে কথা বললেন মুমিনুল হক।
বাংলাদেশ অধিনায়ক আত্মপক্ষ সমর্থন করে জানালেন, প্রাপ্তিও আছে। একইসঙ্গে ব্যর্থতার দায়ও নিলেন কাঁধে। চলুন দেখে নেই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কী বললেন মুমিনুল হক।
ম্যাচে বাঁহাতি স্পিন ঘাটতি ছিল কি?
আপনি যখন ব্যাটিং ভালো করবেন না তখন বাঁহাতি স্পিনই হোক আর অফ স্পিনই হোক, ১১ উইকেট পেতেই পারে। আমার মনে হয়, আমরা ব্যাটিং গ্রুপ হয়ে সেভাবে ব্যাটিং করতে পারিনি। ব্যতিক্রম শুধু তামিম ভাই। উনি প্রথম ইনিংসে খুব ভালো ব্যাটিং করেছেন। সুন্দর একটা শুরু এনে দিয়েছেন, এরপর আমরা কেউ বড় ইনিংস খেলতে পারিনি। আমি যদি একটা জুটি গড়তে পারতাম কিংবা আমরা যদি চার সেশন ব্যাটিং করতে পারতাম (চিত্রটা অন্যরকম হতে পারত)। প্রথম টেস্ট দেখেন, আমরা প্রায় ছয় সেশন ব্যাটিং করতে পেরেছিলাম। এই টেস্টে যদি আমরা চার বা পাঁচ সেশন যদি ব্যাটিং করতে পারতাম তাহলে ব্যাপারটা অন্যতম হতে পারত।
টস হারাটাই কি বড় হলো?
একই সঙ্গে আমার মনে হয়, এই টেস্টে টসটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। প্রথম দুই দিন আমাদের বোলাররা খুবই ভালো বোলিং করেছে কিন্তু উইকেটে তেমন কোনো সুবিধা ছিল না। আমার মনে হয়, টসটা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল এই টেস্টে। এরপরও আমরা যদি ৫ সেশন ব্যাট করতে পারতাম জিনিসটা অন্যরকম হতে পারত। সেটা করতে পারিনি, দায় অবশ্যই আমাদের নিজেদেরই।
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং পরিকল্পনা প্রসঙ্গে…
আমার মনে হয় নির্দিষ্ট বোলারের জন্য নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা উচিত ছিল বা থাকে। কেউ বাস্তবায়ন করতে পারে, কেউ পারে না। আমি যখন বাঁহাতি স্পিনারকে খেলছিলাম, আমার ভিন্ন ভাবনা ছিল। আবার তামিম ভাই যখন অফ স্পিনারকে খেলছিল তখন উনার আরেকরকম ভাবনা ছিল। আমার মনে হয়, ব্যাটসম্যানরা কোনো কোনো সময়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারেনি। আমি যেটা অনুভব করি, আপনি খুব বেশি রক্ষণাত্মক থাকতে পারবেন না, আবার খুব আক্রমণাত্মক থাকতে পারবেন না। দুইটার মাঝামাঝি পথ বেছে নিতে হবে। আপনাকে কম ঝুঁকির পথ বেছে নিয়ে খেলতে হবে। মাঝেমধ্যে যদি মনে হয় বাঁহাতি স্পিনারকে আক্রমণ করবেন, যদি বাহাতি ব্যাটসম্যান যেমন আমি থাকি, আমি আক্রমণ করতে পারি। অফ স্পিনারকে ডানহাতি ব্যাটসম্যান আক্রমণ করতে পারে। হিসেবী ঝুঁকি নিয়ে খেলতে হবে।
বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ কেমন হল…
টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আমরা যত ম্যাচ খেলেছি আমার মনে হয় না, আমাদের কোনো উন্নতি হয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ১ বছর পর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে দুটি টেস্ট খেলেছি। সেখানে ১০ দিনের মধ্যে কেবল দুটি দিন ডমিনেট করতে পারিনি, সেই দুই দিনে ম্যাচ হেরেছি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম টেস্টে আমরা কিছুটা ভালো খেলেছি। দ্বিতীয় টেস্টে বোলাররা খুবই ভালো বোলিং করেছে, আর ব্যাটসম্যানরা কলাপস করেছে। আমার মনে হয়, টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে আগের চেয়ে কিছুটা উন্নতি হয়েছে। মানে শেষ এই টেস্টের আগের টেস্টে একটু উন্নতি হয়েছে। পয়েন্টের হিসেবে আমরা ২০ পয়েন্ট হয়তো পেলাম কিন্তু আমার মনে হয় খুব ভালো প্রাপ্তি আছে।
স্পিনাররা কেমন করছে…
যখন আপনি হারবেন, ভালো খেলবেন না, দলের বিপক্ষে ফল যাবে তখন হয়তো লক্ষ্য করা যায় কোনো একটা জায়গায় ঘাটতি আছে। এখানে দ্বিতীয় টেস্ট দেখেন, প্রথম ইনিংসে উইকেটে কোনো সহায়তা ছিল না। উইকেটে সহায়তা না থাকলে বোলারদের কাজটা হয় খুব কঠিন। তখন স্পিনার হিসেবে আপনি রানের গতিটা বেধে রাখতে পারেন। তখন ইকোনমি হবে আড়াই, খুব বেশি হলে ৩। আমার মনে হয় দুই টেস্টেই ওরা ভালো বোলিং করেছে। প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ওরা প্রথম দিন ২৯২ করেছে। দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনাররা ভালো বোলিং করেছে। বিশেষ করে তাইজুল খুব ভালো করেছে। ওরা ১৭০-১৮০ বা এমন রানে অলআউট হয়ে গেছে। ওরা ভালো করছে তবে দিন দিন আরও ভালো করতে হবে। ওরা যা করেছে, আমার মনে হয় এরচেয়েও ভালো করতে পারত। তাহলে দলের জন্য আরও ভালো হতো।
সিরিজে প্রাপ্তি প্রসঙ্গে…
অবশ্যই প্রাপ্তির কিছু না কিছু আছে। আমি সিরিজ হেরেছি এর মানে এই না যে সব কিছু হেরে গিয়েছি। হয়তো আমি জানি একটু সমালোচনা হবে, অনেকেই অনেক কথা বলবে। এর ভেতরেও অনেক ইতিবাচক দিক আছে আমার কাছে মনে হয়। প্রথম টেস্টে আমি যেটা সব সময় চাচ্ছিলাম যে দলগতভাবে খেলব। যেটা আমরা শেষ দুয়েকটা টেস্টে খেলতে পারিনি। আমার কাছে মনে হয় প্রথম টেস্টে আমরা দল হিসেবে খেলতে পেরেছি। আমরা তখনই ভালো খেলি যখন আমরা দলগতভাবে খেলতে পারি। দলের সবাই যখন অবদান রাখে তখন আমরা দল হিসেবে ভালো করতে পারি। আপনি যদি দেখেন তামিম ভাইর দুইটা নম্বই আছে, একটা ৭০ আছে। শান্তর একটা ১৬৩ আছে, মুশফিক ভাই ও লিটনের হাফ সেঞ্চুরি আছে। তাইজুলের ৫ উইকেট আছে। আমার কাছে মনে হয় যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আপনারাও হয়তো অপেক্ষায় ছিলেন এটার কোন পেসার কি কিছু করতে পারছে কিনা, সেই হিসেবে তাসকিনকে দেখেছেন। আগের চেয়ে অনেক ভালো এখন। অনেক উন্নতি করেছে। আমার কাছে মনে হয়, অনেক ইতিবাচক দিক ছিল এই টেস্ট সিরিজে
লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্ত ধারাবাহিক হতে পারছেন না…
আমি যেটা অনুভব করি,ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির চেয়ে টেস্ট ক্রিকেট সম্পূর্ণ আলাদা। টেস্টে ক্রিকেটে একটু সময় লাগে। একটু সুযোগ দিতে হবে। আমার মনে হয়, দলে নতুন কেউ এলে সঙ্গে সঙ্গে ফল পাওয়া কঠিন। টেস্টে অভিজ্ঞতা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমার মনে হয়, ওরা যদি আরেকটু সময় পায়, গড়ে উঠবে। এ নিয়ে আমার ভাবনার কিছু নেই।
Discussion about this post