দৃশ্যপট, ২৬ জুন, ২০০০। ইংল্যান্ডের সেই বিখ্যাত লর্ডসে ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসির বৈঠক শেষে মিলল দারুণ এক সুসংবাদ! যে খবরের জন্য প্রতীক্ষায় ছিল গোটা জাতি। আইসিসির সে সময়কার সভাপতি ম্যালকম গ্রে ঘোষণা দিলেন, ‘আইসিসি বাংলাদেশকে পূর্ণ মর্যাদার টেস্ট সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
বাংলাদেশের ক্রিকেট জায়গা করে নিল অভিজাত সেই ক্লাবে, দশম সদস্য হিসেবে লাল-সবুজরা পায় টেস্ট স্ট্যাটাস। নয়টি টেস্ট খেলুড়ে দেশেরই সমর্থন পেয়েছিল বাংলাদেশ।
টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পথটা প্রস্বস্ত হয়েছিল ১৯৭৭ সালে। সে বছর আইসিসির সহযোগী দেশের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। তারও অনেক আগে ১৯৭৯ সাল থেকে বিশ্বমঞ্চে আবির্ভাব হয় বাংলাদেশের। রকিবুল হাসানের নেতৃত্বে প্রথমবারের মতো ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত আইসিসি ট্রফিতে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশ।
তখন আইসিসি ট্রফির বাধা পার হয়েই বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হতো। ১৯৭৯ সালের পর থেকে ১৯৮২,৮৬, ৯০ ও ৯৪, আইসিসি ট্রফির প্রতিটি প্রতিযোগিতাতেই অংশ নিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু বিশ্বকাপ সোনার হরিণ হয়েই থাকছিল।
১৯৯৭ সালে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! ইতিহাস গড়ে বাংলাদেশ। আকরাম খানের নেতৃত্বে আইসিসি ট্রফির ফাইনালে কেনিয়াকে হারিয়ে শিরোপা জেতে টাইগাররা। আর এই জয়ে ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করে বাংলাদেশ।
সেই বিশ্বকাপে বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি পাকিস্তানকে হারিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন আকরাম-সুজন-পাইলটরা। এছাড়া গ্রুপ পর্বে স্কটল্যান্ডকেও হারায় বাংলাদেশ। টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রটা এতে করে দারুণভাবে প্রস্তুত হয়ে যায়। বাঘের গর্জন শুনে বিশ্ব।
বাংলাদেশ যখন টেস্ট স্ট্যাটাস পায় তখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি ছিলেন সাবের হোসেন চৌধুরী।
২০০০ সালের ১০ নভেম্বর প্রথমবারের মতো সাদা পোশাকে ক্রিকেট খেলতে নামে টাইগাররা। ঘরের মাঠে প্রতিপক্ষ ভারত। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে সেদিন নাঈমুর রহমান দুর্জয়ের নেতৃত্বে খেলতে নেমেছিল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্ট ম্যাচেই আমিনুল ইসলাম বুলবুল খেলেছিলেন ১৪৫ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। তিনি ছিলেন ক্রিকেট ইতিহাসের তৃতীয় ক্রিকেটার, যিনি তার দেশের অভিষেক টেস্টেই সেঞ্চুরি করেছিলেন। তবে প্রথম টেস্টেই ৯ উইকেটে সৌরভ গাঙ্গুলির দলের কাছে হেরে যায় বাংলাদেশ।
শুরু বাংলাদেশ ক্রিকেটের নতুন এক পথ চলা। যতো দিন যাচ্ছে মজবুত এক অবস্থান করে নিচ্ছে টাইগাররা।
Discussion about this post