ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের আয়োজক-ব্যবস্থাপক সিসিডিএমকে পাশ কাটিয়ে ক্লাবগুলো নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিয়ে বসেছে-ঈদের আগে আর দলবদল নয়। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দলবদল আর বোর্ড চাইলে তার দুই সপ্তাহের মধ্যে লিগ শুরু-এ সিদ্ধান্তে মোটেই খুশি নন সিসিডিএম চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস। ক্লাব সমিতি তাকে তথা সিসিডিএমকে পাশ কাটিয়ে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে; তাতে মোটেই ক্ষুব্ধ নন তিনি। আগের রাতে তাত্ক্ষণিক অনুভূতি জানানো জালাল ইউনুস মুঠোফোনে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, ‘ক্লাবগুলো নিজেরা বসে একটা সিদ্ধান্ত নিতেই পারে। তারা তা নিয়েছে। তাতে আমার কোনো আপত্তি নেই। তাদের এ প্রস্তাব বোর্ড সভাপতির কাছে যাবে। তিনিই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। পুরো বিষয় ও প্রক্রিয়া নিয়ে আমার কোনো কথা নেই। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, ক্লাবগুলো যে সময়ে লিগ শুরুর কথা বলছে তা অলিক কল্পনা। আমি নিশ্চিত ওই সময়ে কোনোভাবেই লিগ আয়োজন সম্ভব নয়। এভাবে চিন্তা করলে এ বছর আদৌ লিগ হবে কি না সন্দেহ।’
সিসিডিএম প্রধানের একটা প্রস্তাব আছে-‘যেহেতু ডোনাররা ঈদের আগে অর্থ জোগান দেবেন না, তাই ২৫ জুলাই নয়, দলবদল ঈদের পরই হোক। সেটা ২০ আগস্ট হতে পারে। আর পূর্বনির্ধারিত সূচি মানে ২৯ আগস্ট লিগ শুরু হোক। তাহলে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ শুরুর আগেই প্রথম পর্ব শেষ হয়ে যাবে। আর সিরিজ শেষে দ্বিতীয় পর্ব বা সুপার লিগ।’
সিসিডিএম প্রধানের এ প্রস্তাব বিবেচনায় আনতে পারে ক্লাবগুলো।
তারা ভেবেছে বৃষ্টির মৌসুম এর মধ্যে খেলা মানেই বড় ধরনের ঝুঁকি। তা এড়াতেই সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহে লিগ শুরুর প্রস্তাব। আর সে কারণেই ২৫ জুলাইয়ের দলবদল পিছিয়ে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিয়ে যাওয়া। বিসিবি চাইলে তার দুই সপ্তাহের মধ্যে লিগ-রোববার সন্ধ্যায় একসঙ্গে বসে এ সিদ্ধান্তই নিয়েছে প্রিমিয়ারের ১১ ক্লাব। পরশু রাতে নিজের অফিসে ক্লাব সমিতির সভা শেষে শেখ জামাল ধানমণ্ডি ক্লাবের সভাপতি মঞ্জুর কাদেরের তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া আর শরীরী অভিব্যক্তি শুনে মনে হচ্ছিল-আমরা নিজেরা বসে সব সমস্যার সমাধান করে ফেলেছি। এখন বিসিবি ওই সময় লিগ শুরু করতে চাইলেই সব জটিলতার অবসান ঘটবে। প্রিমিয়ার লিগের ভাগ্যাকাশে জমে থাকা সব কালো মেঘ সরে যাবে।
কিন্তু আসলে কি তাই? ক্লাবগুলোর সভাপতি সাধারণ সম্পাদকরা বসে রোববার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাতে কি সব সংশয়-সন্দেহ দূর হবে? সেপ্টেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহ থেকে অক্টোবরে কি লিগ চালানো সম্ভব? ওই সময় নিউজিল্যান্ড-বাংলাদেশ হোম সিরিজ। সেপ্টেম্বরের শেষদিকেই চলে আসবে ব্ল্যাক ক্যাপসরা। অক্টোবরের প্রায় পুরোটাই চলবে সিরিজ। টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টুয়েন্টি মিলে ১৭-১৮ জন জাতীয় ক্রিকেটার ওই সময়ে ব্যস্ত থাকবেন জাতীয় দলের হয়ে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার ছাড়া কোনোভাবেই লিগ খেলা নয়-সেই মার্চ থেকে এ দাবিতে যারা গলা ফাটিয়েছেন, সেসব ক্লাবকর্তারা সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে এত জাতীয় ক্রিকেটার ছাড়া লিগ খেলতে রাজি হয়ে যাবেন? তা কি বিশ্বাসযোগ্য? কোনোভাবেই নয়। আর সে কারণেই রোববারের বৈঠক শেষে ক্লাব সমিতির নেতা ও প্রধান মুখপাত্র মঞ্জুর কাদেরের কৌশলী সুর-‘আমরা বিসিবির কোর্টে বল ঠেলে দিয়েছি। তারাই সিদ্ধান্ত নেবে লিগ কবে কখন শুরু হবে? আমরা সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে দলবদল সেরে ফেলতে চাই। এরপর ১৫ দিনের মধ্যে লিগ শুরু করলে সমস্যা নেই।’
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিসিবি চাইলেও ওই সময় লিগ আয়োজন সম্ভব নয়। প্রথমত জাতীয় ক্রিকেটারদের ছাড়া ক্লাবগুলো রাজি হবে না। দ্বিতীয়ত শেরেবাংলা স্টেডিয়াম পাওয়া যাবে না। বিকল্প মাঠ কই? প্রতিদিন তিনটি করে খেলা হলে তিন মাঠ দরকার। তা কোথায়? কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে, ক্লাবগুলোর দাবি মেনে সেপ্টেম্বরে দলবদল করা মানেই লিগ শুরু হতে হতে নভেম্বর। মানে বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ শেষে।
-সম্ভব? উত্তরটা খোঁজা উচিত বিসিবির।
Discussion about this post