ওয়ানডে দলের স্থায়ী অধিনায়ক হওয়ার পর যেন হারের সঙ্গেই বসবাস করছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ধবলধোলাই, এরপর আরেকটি সিরিজ হারের ক্ষত-সব মিলিয়ে এক অনিশ্চয়তার ছায়া ঘিরে ধরেছিল তাকে। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয় যেন এনে দিল সেই কাঙ্ক্ষিত স্বস্তি। মিরপুরের আলোঝলমলে সন্ধ্যায় মিরাজের মুখে ফুটে উঠল এক ধরনের প্রশান্তি, আত্মবিশ্বাস আর কৃতজ্ঞতা।
সংবাদ সম্মেলনে মিরাজ খোলামেলাভাবেই স্বীকার করলেন, কঠিন সময়টা তার জন্য সহজ ছিল না। তবে সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মুর্তজার ফোন কল তাকে নতুন করে জাগিয়েছে। ‘তামিম ভাই ফোন দিয়েছিলেন, বলেছিলেন সময়ের অপেক্ষা করতে। মাশরাফি ভাইও উৎসাহ দিয়েছেন, বলেছেন মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে। ওদের কথাগুলো সত্যিই অনেক অনুপ্রেরণা দিয়েছে,’-বললেন মিরাজ।
নতুন নেতৃত্বে অভিজ্ঞতার অভাবও ছিল বড় বাধা। রিয়াদ-মুশফিকের অনুপস্থিতি স্পষ্টভাবে টের পেয়েছেন মিরাজ, ‘যদি কোনো সিনিয়র খেলোয়াড় দলে থাকত, তাহলে কাজটা অনেক সহজ হতো। ওরা দুজন থাকলে হয়তো কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়াও সহজ হয়ে যেত।’
সিরিজ জয়ে খুশি হলেও র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে থেকে সন্তুষ্ট নন বাংলাদেশের অধিনায়ক, ‘আমাদের লক্ষ্য সেরা আটের মধ্যে থাকা। বিশ্বকাপে সরাসরি খেলতে হলে আরও উন্নতি করতে হবে। এখনো অনিশ্চয়তা আছে।’
কোচ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনকে ঘিরে সাম্প্রতিক সমালোচনার জবাবেও মিরাজ বেশ ঠান্ডা মাথায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, ‘সবাই মনে করে সিদ্ধান্ত শুধু সালাহউদ্দিন স্যার আর আমি নেই। আসলে আমরা সবাই একসঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিই। ফিল সিমন্স, সালাহউদ্দিন স্যার, আমি-সবাই মিলে কথা বলি। কেউ একা কিছু ঠিক করে না।’
মিরপুরের উইকেট নিয়ে বিতর্ক থাকলেও তিনি বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন, ‘সব দলই ঘরের মাঠে সুবিধা নেয়। আমরাও নিচ্ছি। এতে দোষের কিছু দেখি না। বিশ্বকাপের আগে আমাদের মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টাও ভাবতে হবে।’
এই সিরিজে সবচেয়ে আলোচিত নাম রিশাদ হোসেন। তিন ম্যাচে ১২ উইকেট নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দরজা খুলে দিয়েছেন তিনি। মিরাজের মতে, ‘রিশাদ আমাদের জন্য আশীর্বাদ। ও যেভাবে উন্নতি করছে, সেটা বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য দারুণ খবর। কোচদেরও কৃতিত্ব দিতে হবে।’
সবশেষে মিরাজের কণ্ঠে ভেসে আসে একরাশ শান্ত আত্মবিশ্বাস, ‘আমার জন্য সময়টা কঠিন ছিল। কিন্তু সবাই যদি পাশে থাকে, ইনশা আল্লাহ আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। মানুষ ভুল করে, আমিও করব। কিন্তু দেশের জন্যই লড়ছি, সেটাই সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা।’










Discussion about this post