ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
মনে হচ্ছিল আরেকটি অনায়াস জয়ের গল্প লেখা হবে! অনায়াসেই দ্বিতীয় ওয়ানডের সঙ্গে সিরিজটাও মুঠোবন্ধী করবে বাংলাদেশ দল। কারণ জিম্বাবুয়ের সামনে লক্ষ্যটা তো ছিল আকাশ ছোঁয়া-৩২৩ রান। তারপরও উত্তেজনার কমতি থাকল না। আরেকটু হলে তো হেরেই যাচ্ছিল বাংলাদেশ। লোয়ার অর্ডারের দৃঢ়তায় জিতেই যাচ্ছিল জিম্বাবুয়ে। শেষ ওভারের শেষ বলে এসে হাফ ছেড়ে বাঁচল স্বাগতিক দর্শকরা।
সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচে মঙ্গলবার বাংলাদেশ জিতেছে ৪ রানে। এই জয়ে এক ম্যাচ আগেই ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা।
সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে দিবা-রাত্রির এই ম্যাচে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে বাংলাদেশ করে ৩২২ রান। জবাব দিতে নেমে ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩১৮ রানে থামে জিম্বাবুয়ে। শেষ বলে ছক্কার সমীকরণ মেলাতে পারেনি সফরকারীরা। হেরে যায় দল।
তবে শেষটাতে এসে এমন পান্ডুলিপি লেখা আছে আঁচ করা যায়নি। দলের যখন ৫ রান তখনই উইকেট পতনের শুরু। এরপর টাইগার বোলারদের তোপে ১০২ রানে শেষ ৪ উইকেট। কিন্তু তারপর একটু একটু করে পথে ফেরে জিম্বাবুয়ে। ওয়েসলি মাধভেরে ৫৭ বলে করেন ৫২ রান। সিকান্দার রাজা ৬৬। তাকে সাজঘরে ফেরান অধিনায়ক মাশরাফি। অধিনায়ক ১০ ওভারে তার ৫২ রানে ১ উইকেট।
অষ্টম উইকেট জুটিতে ৪৫ বলে ৮০ রান যোগ করে ম্যাচে জয়ের কাছাকাছি পৌঁছে যায় জিম্বাবুয়ে। ডনাল্ড টিরিপানো লড়ে যান মাথা উঁচু করে। শেষ ওভারে ম্যাচ জিততে জিম্বাবুয়ের চাই ২০ রান। এরপর ৪ বলে ১৮। টানা দুই ছক্কা মেরে ম্যাচ জিম্বাবুয়ের দিকে নিয়ে এসেছিলেন টিরিপানো। কিন্তু ২ বলে ছয় রানের সমীকরণ মেলানো হয়নি। দুটি দারুণ ডেলিভারিতে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যান পেসার আল আমিন হোসেন। শেষ দুই বলে সেই হিসেব কমে দাড়াল ৬ রান। কিন্তু আল আমিন শেষ ওভারে স্নায়ু চাপ ধরে রাখেন। পঞ্চম বলে দেননি কোন রান। পরের বলে মাত্র ১। ২৮ বলে পাঁচ ছক্কা ও দুই চারে ৫৫ রানে অপরাজিত টিরিপানো।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে তুলেছে ৩২২ রান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে নিজেদের সর্বোচ্চ রানের সংগ্রহ গড়ল বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে ৬ উইকেটে করে ৩২১ রান।
ইনিংসের শেষ বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে দলকে রেকর্ড সংগ্রহ এনে দেন মোহাম্মদ মিঠুন। ১৮ বলে অপরাজিত থাকেন ৩২ রানে।
মঙ্গলবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তামিম প্রথম বাংলাদেশি ব্যাটসম্যান হিসেবে করেন ৭০০০ রান। এদিকে এ বাঁহাতি খেলেন ১৫৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এতোদিন ওয়ানডে তার সেরা ইনিংস ছিল ১৫৪ রান।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেলতে তামিম হাঁকালেন ১৩৬ বলে ২০টি চার ও ৩টি ছয়।
ইতিহাস জানাচ্ছে-শেষবার তামিম সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন ২০১৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। সে সিরিজে দুর্দান্ত তামিম পেয়েছিলেন দুই সেঞ্চুরি এরপর কেটে গেছে ১৯ মাস। এর মধ্যে গত ২৩ ইনিংসে ৫ হাফসেঞ্চুরি পেলেও সেঞ্চুরি দূরের বিষয় হয়েই থাকছিল।
দিন-রাতের ম্যাচে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে তামিম ছিলেন মন্থর। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে এ তারকা ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন। তাইতো ১০ ওভার শেষে তার রান ছিল ৩৮ বলে ১০ চারে ৪৯ রান। শেষ পর্যন্ত ৪২ বলে হাফসেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। এরপর পেয়েছেন শতক। এদিন হাফসেঞ্চুরি পেলেন মুশফিকুর রহিমও (৫৫)। কিন্তু ম্যাচসেরা তামিম ইকবাল।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ৩২২/৮ (তামিম ১৫৮, লিটন ৯, শান্ত ৬, মুশফিক ৫৫, মাহমুদউল্লাহ ৪১, মিঠুন ৩২*, মিরাজ ৫, মাশরাফি ১, তাইজুল ০, শফিউল ৫*; মুম্বা ১০-০-৬৪-২, টিশুমা ৫-০-৩৫-১, টিরিপানো ৮-০-৫৫-২, মাধেভেরে ৭-০-৩৮-১, রাজা ১০-০-৫৯-০, উইলিয়ামস ৭-০-৩৫-০, মাটুমবোদজি ৩-০-৩৪-০)
জিম্বাবুয়ে: ৫০ ওভারে ৩১৮/৮ (কামুনহুকামউই ৫১, চাকাভা ২, টেইলর ১১, উইলিয়ামস ১৪, মাধেভেরে ৫২, রাজা ৬৬, মুতুমবামি ১৯, মাটুমবোদজি ৩৪, টিরিপানো ৫৫*, মুম্বা ০*; মাশরাফি ১০-০-৫২-১, শফিউল ৯-০-৭৬-১, মিরাজ ৭-০-২৫-১, আল আমিন ১০-০-৮৫-১, তাইজুল ১০-০-৫২-৩, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-২২-০)
ফল: বাংলাদেশ ৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: তামিম ইকবাল
সিরিজ: ৩ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে ২-০তে এগিয়ে বাংলাদেশ।
Discussion about this post