একসময় আফগানিস্তান ছিল যুদ্ধের দেশ, ক্রিকেট ছিল এক প্রকার বিলাসিতা। অথচ সেই দেশ থেকেই উঠে এসেছে এক নাম- রশিদ খান। আজ সেই নাম শুধুই আফগানিস্তানের নয়, ক্রিকেট বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বোলারদের এক অনন্য প্রতীক। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ৬৫০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি গড়েছেন এই লেগস্পিনার, যার হাতের ঘূর্ণি এখন ভয়ঙ্কর এক অস্ত্র।
ইংল্যান্ডের ঐতিহাসিক লর্ডসে যখন ‘দ্য হান্ড্রেড’ টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী ম্যাচে রশিদ নামলেন, তখন হয়তো কেউ ভাবেনি- এক যুগান্তকারী মুহূর্ত আসতে চলেছে। কিন্তু ক্রিকেটের সৌন্দর্য এখানেই- এখানে প্রতিটি বলেই লেখা হয় নতুন গল্প। সেদিনও তাই হলো। লন্ডন স্পিরিটের বিপক্ষে রশিদ যখন ২৬ রানে তিনটি উইকেট শিকার করলেন, তখনই তিনি পৌঁছে গেলেন ৬৫১ উইকেটে। বিশ্বের কোনো বোলার টি-টোয়েন্টিতে এর আগে এত উইকেট নিতে পারেননি।
রশিদের এই কীর্তি শুধু সংখ্যার খেলা নয়, এটি এক মানসিকতার প্রকাশ। ৪৮২ ম্যাচে এমন পরিসংখ্যান (গড় ১৮.৫৪, ইকোনমি ৬.৫৭) শুধু দক্ষতা নয়, স্থিরতা ও আত্মবিশ্বাসের দলিল। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, রশিদ নিজের কাজটি করেন নিঃশব্দে। তার প্রতিটি ডেলিভারিতে লুকিয়ে থাকে কৌশল, থাকে ব্যাটসম্যানের পায়ের নড়াচড়া বুঝে নেওয়ার চাতুর্য।
রশিদের পেছনে যারা রয়েছেন, তারা কেউ কম নয়। ব্রাভো, নারাইন, তাহির কিংবা সাকিব- প্রত্যেকেই কিংবদন্তি। কিন্তু এই তরুণ স্পিনার সেই কিংবদন্তিদের টপকে নিজেকে দাঁড় করিয়েছেন এক অনন্য উচ্চতায়। অন্যদিকে সাকিব এখন আর আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলেন না, ব্রাভো তো পুরোপুরি অবসরেই। তাহিরও ক্যারিয়ারের শেষপ্রান্তে। একমাত্র নারাইন আছেন ফর্মে, খেলছেন নিয়মিত, কিন্তু তিনিও এখনো রশিদের ধারেকাছেও নেই।
রশিদের অর্জন শুধু তার ব্যক্তিগত প্রাপ্তি নয়, এটি আফগান ক্রিকেটের জয়। একসময় যাদের দেশে স্টেডিয়ামই ছিল না, এখন তারাই বিশ্বের বড় বড় মঞ্চে নিজের ছাপ রেখে যাচ্ছে। রশিদ সেই পরিবর্তনের প্রতীক, যিনি প্রমাণ করেছেন- প্রতিভা, অধ্যবসায় আর লক্ষ্য থাকলে সব সম্ভব!
স্বীকৃত টি-টোয়েন্টিতে সেরা পাঁচ উইকেটশিকারী
বোলার উইকেট
রশিদ খান ৬৫১
ডোয়াইন ব্রাভো ৬৩১
সুনীল নারাইন ৫৮৯
ইমরান তাহির ৫৪৭
সাকিব আল হাসান ৪৯৮
Discussion about this post