মিরপুরের উইকেটে যেন এক মঞ্চ তৈরি ছিল ইতিহাস গড়ার জন্য। সেই মঞ্চে একদিকে মুস্তাফিজুর রহমান গড়লেন নতুন রেকর্ড, অন্যদিকে পারভেজ হোসেন ইমন খেললেন দায়িত্বশীল ইনিংস। ফলাফল-পাকিস্তানের বিপক্ষে ৭ উইকেটের এক দুর্দান্ত জয়, তাও ২৭ বল হাতে রেখে।
একপেশে ম্যাচে জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল লিটন দাসের দল। এদিন পাকিস্তানের ১১০ রান ২৭ বল বাকি থাকতেই ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ।
আজ সন্ধ্যায় যখন লিটন দাস টস জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন, তখন অনেকেই ভাবেননি এতটা একপেশে হবে ম্যাচ। কিন্তু সেই সিদ্ধান্তই হলো সার্থক। প্রথম বল থেকেই বাংলাদেশি বোলাররা চাপ তৈরি করে। সবচেয়ে আলোকিত পারফরম্যান্স আসে বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমানের হাত ধরে।
৪ ওভারে মাত্র ৬ রান, সঙ্গে ২ উইকেট। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে কম রান দিয়ে ৪ ওভার শেষ করার নতুন রেকর্ড এখন মুস্তাফিজের দখলে। আগের রেকর্ড ছিল ৭ রান-যা তিনজন ভাগ করে নিয়েছিলেন, তার মধ্যে একজন নিজেই মুস্তাফিজ।
তাঁর বলের গতি-হ্রাস, লাইন-লেংথের নিখুঁত মিশেল আর উইকেটের চরিত্র বুঝে বোলিং—সব মিলিয়ে পাকিস্তানের ব্যাটাররা যেন একঘণ্টা আগেই ম্যাচ ছেড়ে দিয়েছিল।
তাসকিনও কম যাননি। টপ অর্ডারে আগুন ঝরানো স্পেল উপহার দিয়ে তিনি তুলে নেন ৩ উইকেট। পাকিস্তান ৪৬ রানে হারায় ৫ উইকেট। একমাত্র ফখর জামান কিছুটা লড়াই করে ৩৪ বলে করেন ৪৪ রান।
শেষ দিকে কিছুটা প্রতিরোধের চেষ্টা ছিল আব্বাস আফ্রিদি ও খুশদিল শাহের কাছ থেকে। তবে তাসকিনের শেষ ওভারে তিন বলে শেষ তিন উইকেট হারিয়ে ১৯.৩ ওভারেই পাকিস্তান থেমে যায় মাত্র ১১০ রানে।
১১১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা বাংলাদেশও শুরুতে হোঁচট খায়। দুই ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম ও লিটন দাস ফিরেন মাত্র ১ রান করে। দল তখন ৭ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুকছে।
ঠিক তখনই ইমন ও হৃদয়ের ব্যাটে শুরু হয় প্রত্যাঘাত। ধৈর্য আর নিয়ন্ত্রিত আগ্রাসনে গড়া এক কার্যকরী জুটি উপহার দেন দুজন। হৃদয় করেন ৩৬ রান, আর ইমন পৌঁছে যান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে নিজের তৃতীয় ফিফটিতে।
শেষ পর্যন্ত ১৫.৩ ওভারে জয় নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। জয়সূচক চার মারেন জাকের আলী, যিনি অপরাজিত থাকেন ১০ বলে ১৫ রানে।
এই জয় বাংলাদেশের ইতিহাসে পাকিস্তানের বিপক্ষে চতুর্থ টি–টোয়েন্টি জয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালের পর আবারও মিরপুরে হারল শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। সবশেষ জয় ছিল এশিয়াডে। এই জয় শুধু সিরিজে ১–০ এগিয়ে দেওয়া নয়, বরং ক্রিকেটীয় শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠারও এক প্রমাণ।
আগামী মঙ্গলবার মিরপুরেই হবে দ্বিতীয় ম্যাচ। যদি ছন্দ বজায় থাকে, তাহলে হয়তো রোমাঞ্চকর এক সিরিজ জয় অপেক্ষা করছে টাইগারদের জন্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
পাকিস্তান: ১৯.৩ ওভারে ১১০ (ফাখার ৪৪, সাইম ৬, হারিস ৪, সালমান আগা ৩, হাসান নাওয়াজ ০, মোহাম্মদ নাওয়াজ ৩, খুশদিল ১৭, আফ্রিদি ২২, আশরাফ ৫, সালমা মির্জা ০, আবরার ০*; মেহেদি ৪-০-৩৭-১, তাসকিন ৩.৩-০-২২-৩, তানজিম ৪-০-২০-১, মুস্তাফিজ ৪-০-৬-২, শামীম ১-০-২-০, রিশাদ ৩-০-১৯-০)
বাংলাদেশ: ১৫.৩ ওভারে ১১২/৩ (তানজিদ ১, পারভেজ ৫৬*, লিটন ১, হৃদয় ৩৬, জাকের ১৫*; সালমান ৩.৩-০-২৩-২, সাইম ২-০-১৬-২, ফাহিম ৩-০-২৯-০, আবরার ৪-০-২০-১, আব্বাস ২-০-১৬-১, নাওয়াজ ১-০-৮-০)
ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: ৩–ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ১–০–তে এগিয়ে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: পারভেজ হোসেন।
Discussion about this post