গল যেন বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের কাছে দ্বিতীয় বাড়ি হয়ে উঠছে ধীরে ধীরে। সেই ২০১৩ সালের ঐতিহাসিক ডাবল সেঞ্চুরির স্মৃতি এখনও তরতাজা। আর ২০২৫-এর গ্রীষ্মের এই দিনে, আবারও গল দেখল শান্ত আর মুশফিকের ব্যাটে লাল-সবুজের অন্যরকম এক পুনর্জাগরণ।
টেস্টের প্রথম দিনের শুরুটা ছিল অন্ধকার। যেন পরিচিত এক হতাশার ছায়া আবারও ভর করছে ব্যাটিং লাইনে। মাত্র ৪৫ রানের মধ্যেই তিন ব্যাটার ফিরে গেছেন সাজঘরে। কেউই পারেননি থিতু হতে। সাদমান, এনামুল, মুমিনুল-তিন অভিজ্ঞ মুখ, অথচ প্রত্যাবর্তনের গল্পটা কেউই লিখতে পারেননি। গলের সকালে বল নড়ছিল, লঙ্কান পেসাররা বল ছুঁড়ছিল চোয়াল শক্ত করে।
তখনই মঞ্চে আসেন দুই ব্যাটসম্যান-নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। একজন এখনও তার ধারাবাহিকতার প্রমাণ দিচ্ছেন, আরেকজন ক্যারিয়ারের পরিণত প্রান্তে এসেও নিজেকে প্রাসঙ্গিক করে রাখছেন। গলের টেস্টে শান্তর ব্যাট যেন ছিল একটা ক্যানভাস—যেখানে প্রতিটি শট ছিল রং তুলির স্ট্রোক। তিনি শুরু করেন সতর্কভাবে, তারপর ধীরে ধীরে ছড়াতে থাকেন আত্মবিশ্বাসের আলো।
মুশফিক ছিলেন অভিজ্ঞতার প্রতীক। তার ব্যাটিংয়ে কোনো ব্যস্ততা নেই, কোনো হঠকারিতা নেই। সেঞ্চুরির আগে তার ব্যাটিং ছিল ধৈর্যের অনুশীলন। ৯৯ রানে পৌঁছে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেছেন, শট বাছাই করেছেন হিসেব করে। যেন জানতেন, এই ইনিংস বড় হলে তবেই দলের ভিত হবে শক্ত।
এই জুটির সৌন্দর্য তাদের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট-২৪৭ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। শান্ত অপরাজিত ১৩৬ রানে, মুশফিক অপরাজিত ১০৫ রানে। কেউ ব্যাট হাতে রক্ষণে ছিলেন, কেউ আক্রমণে। কেউ সময় নষ্ট করেননি, কেউ আবার সময়ের গুরুত্বটাই বোঝাতে চেয়েছেন। দিনের শেষে স্কোরবোর্ডে যখন ২৯২/৩, তখন বোঝা যায়, এ দিন ছিল বাংলাদেশের। একটানা আট বছর পর শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্টে বাংলাদেশের এমন আধিপত্যপূর্ণ দিন খুব কম দেখা গেছে।
মুশফিক সংবাদ সম্মেলনে এসেই বললেন, ‘গলে ব্যাট করতে আমি পছন্দ করি। বাংলাদেশের পর শ্রীলঙ্কাই আমার প্রিয় জায়গা ব্যাটিংয়ের জন্য।’ তার চোখেমুখে ছিল শান্তি, কথা বলার ভঙ্গিতে ছিল নিজের প্রক্রিয়ার ওপর বিশ্বাসের ছাপ। অনেকদিন পর আবারও টেস্টে ফিফটি পেরোনো—১৩ ইনিংস পর!—তবু তার মুখে অহমিকা নেই। বরং তিনি বললেন, “সব ইনিংসই এখন আমার কাছে স্পেশাল। ক্যারিয়ারের এই পর্যায়ে এসে প্রতিটি সুযোগের মূল্য বুঝি।’
গলের উইকেট বরাবরের মতোই ব্যাটিং সহায়ক প্রথম দুই দিনে। মুশফিক মনে করিয়ে দিলেন, দিন যত এগোবে, পিচ তত কঠিন হবে ব্যাটারদের জন্য। তাই এই ইনিংসটাকে যতটা সম্ভব বড় করতে হবে। শান্তকে নিয়ে তার আশার জায়গাটাও স্পষ্ট। বললেন, ‘ওর এখনও ডাবল সেঞ্চুরি হয়নি। যদি পারে, সেটা দলের জন্য বিশাল অর্জন হবে।’
Discussion about this post