বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) একসঙ্গে দুটি বড় বিতর্ক মোকাবিলা করছে-বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে (বিপিএল) ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এবং নারী দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলমের যৌন হয়রানির অভিযোগ। দুটি ইস্যু নিয়েই বিসিবি এখন তদন্তের পর্যায়ে আছে। ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে একাধিক তদন্ত কমিটি, এবং বোর্ড কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তদন্তে প্রমাণ মিললে কেউ ছাড় পাবে না।
সর্বশেষ বিপিএল আসরে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের সন্দেহ দেখা দেয়। অভিযোগ ওঠে কয়েকজন ক্রিকেটার ও কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন বিসিবির দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল। প্রাথমিকভাবে বোর্ড জানিয়েছিল, ফিক্সিংয়ের অভিযোগে যাদের নাম এসেছে, তাদের বিপিএলে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। তবে অভিযোগ পুরোপুরি প্রমাণিত না হওয়ায় অভিযুক্তদের নজরদারিতে রেখে খেলার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
অন্যদিকে, সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে নারী দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম প্রকাশ্যে আনেন দলে থাকার সময় পাওয়া যৌন হয়রানির অভিজ্ঞতা। তাঁর অভিযোগের আঙুল নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও টিম ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুসহ কয়েকজন কর্মকর্তার দিকে। বিষয়টি প্রকাশের পরই বিসিবি তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত এক বিচারপতি।
চলমান বাংলাদেশ ক্রিকেট কনফারেন্সে (৯-১০ জানুয়ারি), যা অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে, বোর্ডের শীর্ষ কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন।
বিসিবি পরিচালক শাহনিয়ান তানিম বলেন, ‘যে-ই হোক, পরিচালক বা কর্মী-অভিযোগ এলে তদন্ত হবে। প্রমাণ মিললে কেউ ছাড় পাবে না। এমনকি আমার বিরুদ্ধেও যদি অভিযোগ আসে, তাতেও তদন্ত হবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অভিযুক্ত করে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করা ঠিক নয়। প্রত্যেকেরই নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করার অধিকার আছে।’
বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন জানান, ‘তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করবে। বোর্ডের কেউ এতে প্রভাব ফেলতে পারবে না। যদি কেউ তদন্তে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তখন ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাহানারা আলমের ভিডিও সাক্ষাৎকার আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমরা দ্রুত একটি অভিজ্ঞ ও নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করেছি। ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে‘’
বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘ফিক্সিং বা হয়রানি-যে অভিযোগই হোক, বোর্ডের নীতি স্পষ্ট: জিরো টলারেন্স। আমরা কাউকে আড়াল করব না, কোনো প্রভাবও রাখব না। তদন্তের ফলাফলের ওপরই নির্ভর করবে পরবর্তী পদক্ষেপ।’
বুলবুল আরও জানান, নারী ক্রিকেটে জেন্ডার সমতা আনাই এখন বিসিবির অন্যতম লক্ষ্য, ‘আমাদের বোর্ডে এখন একমাত্র নারী পরিচালক রুবাবা দৌলা আছেন। আমরা চাই ভবিষ্যতে আরও নারী পরিচালক আসুক। উইমেন ক্রিকেট দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিল, সেটি বদলানোই আমাদের দায়িত্ব।’
বুলবুল স্বীকার করেন, জাহানারার অভিযোগ নতুন নয়, ২০২১ সালেও এটি লিখিতভাবে এসেছিল। তবে নতুন করে বিষয়টি আলোচনায় আসায় বিসিবি আবারও খতিয়ে দেখছে।
এদিকে বিসিবির বর্তমান পরিচালক নাজমুল আবেদীন ফাহিমের বিরুদ্ধেও অভিযোগের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। বুলবুল বলেন, ‘যদি লিখিত বা মৌখিকভাবে অভিযোগ আসে, আমরা অবশ্যই তদন্ত করব। এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু পাইনি।’










Discussion about this post