চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে নিজেদের জায়গা করে নিতে ইতিহাস গড়তে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। কিন্তু লাহোরে আবারও প্রমাণ হলো, বড় মঞ্চে ব্যর্থতার পুরনো চিত্রনাট্য থেকে বের হতে পারেনি প্রোটিয়ারা। দুর্দান্ত ব্যাটিং এবং বোলিংয়ে দাপট দেখিয়ে ৫০ রানের বড় ব্যবধানে জয় নিয়ে নিউজিল্যান্ড জায়গা করে নিল টানা আরেকটি আইসিসি টুর্নামেন্টের ফাইনালে।
৯ মার্চ, রোববার দুবাইয়ে ফাইনালে ভারতের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড।
লাহোরের সেমিফাইনালে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় নিউজিল্যান্ড। শুরুটা ছিল একেবারে স্বপ্নের মতো। দলের দুই নির্ভরযোগ্য ব্যাটার রাচিন রবীন্দ্র ও কেন উইলিয়ামসন অসাধারণ এক পার্টনারশিপ গড়েন। রবীন্দ্র ১০১ বলে ১০৮ রান করেন, হাঁকান ১৩টি চার এবং ১টি ছয়। এটি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, এবং ওয়ানডে ক্যারিয়ারের পঞ্চম সেঞ্চুরি ছিল। আশ্চর্যজনক বিষয় হলো, রবীন্দ্র তাঁর সব ওয়ানডে সেঞ্চুরিই করেছেন আইসিসি টুর্নামেন্টে! তিনি ১৩ ইনিংসে ৫টি সেঞ্চুরি করে ভারতের শিখর ধাওয়ানের দ্রুততম পাঁচ সেঞ্চুরির রেকর্ড (১৫ ইনিংস) ভেঙে দিয়েছেন।
অন্যদিকে উইলিয়ামসনও তাঁর অভিজ্ঞতা দিয়ে দলের বড় সংগ্রহের ভিত্তি তৈরি করেন। ৯৪ বলে ১০২ রান করেন তিনি, যা তাঁর টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি। রবীন্দ্র এবং উইলিয়ামসনের ১৬৪ রানের জুটি ছিল নিউজিল্যান্ডের বড় সংগ্রহের ভিত।
এত বড় সংগ্রহের পর নিউজিল্যান্ডের দল ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৬২ রান সংগ্রহ করে। এটি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। শেষ ১০ ওভারে ড্যারিল মিচেল (৩৭ বলে ৪৯) ও গ্লেন ফিলিপস (২৭ বলে অপরাজিত ৪৯) মিলে প্রোটিয়া বোলারদের তুলোধোনা করেন, বিশাল পুঁজি দাঁড় করান।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে এই রান তাড়া করতে হলে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করতে হতো। তবে তাদের শুরুটা ছিল বেশ নড়বড়ে। রসি ফন ডুসেন (৬৯) ও টেম্বা বাভুমা (৫৬) চেষ্টা করলেও তাদের সংগ্রহ যথেষ্ট ছিল না। শেষ দিকে ডেভিড মিলার ৬৭ বলে সেঞ্চুরি করে দলের হারের ব্যবধান কিছুটা কমাতে সক্ষম হন।
নিউজিল্যান্ডের বোলাররা নিয়মিত উইকেট তুলে নিতে থাকলে, ম্যাচ ধীরে ধীরে তাদের দিকে চলে আসে। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৩১২ রান তুলে প্রোটিয়ারা ৫০ রানে হেরে যায়।
নিউজিল্যান্ডের এই জয়ের মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো, আইসিসির বড় মঞ্চে তারা এক অসাধারণ দল। এবার তাদের সামনে ভারতের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। ৯ মার্চ দুবাইয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে দেখা হবে ক্রিকেট বিশ্বের দুই পরাশক্তির – ভারত এবং নিউজিল্যান্ডের!
সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৬২/৬ (ইয়াং ২১, রবীন্দ্র ১০৮, উইলিয়ামসন ১০২, মিচেল ৪৯, ল্যাথাম ৪, ফিলিপস ৪৯*, ব্রেসওয়েল ১৬, স্যান্টনার ২*; ইয়ানসেন ১০-০-৭৯-০, এনগিডি ১০-০-৭২-৩, রাবাদা ১০-০-৭০-২, মুল্ডার ৬-০-৪৮-১, মহারাজ ১০-০-৬৫-০, মার্করাম ৪-০-২৩-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩১২/৯ (রিকেলটন ১৭, বাভুমা ৫৬, ফন ডার ডাসেন ৬৯, মার্করাম ৩১, ক্লসেন ৩, মিলার ১০০*, মুল্ডার ৮, ইয়ানসেন ৩, মহারাজ ১, রাবাদা ১৬, এনগিডি ১*; হেনরি ৭-০-৪৩-১, জেমিসন ৭-১-৫৭-০, ও’রোক ৮-০-৬৯-০, স্যান্টনার ১০-০-৪৩-৩, রাভিন্দ্রা ৫-০-২০-১, ফিলিপস ৩-০-২৭-২)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৫০ রানে জয়ী
ম্যাচের সেরা : রাচিন রবীন্দ্র
Discussion about this post