এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্ত জয় তুলে নিল বাংলাদেশ। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কা প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান তুলে। লঙ্কান দলে দাসুন শানাকা ৬৪ রান করলেও মুস্তাফিজুর রহমান ৪ ওভারে ২০ রান খরচায় ৩ উইকেট নিয়ে দলের জয় নিশ্চিত করেন।
দুবাইয়ের গরম রাতে যখন বাতাসেও ধুলো ও উত্তেজনা মিশে, তখন একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল লঙ্কান রাজা শানাকা। ছয়টা ছক্কা মেরে যিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন-এখনও হাল ছাড়েননি। আর অন্যপাশে ছিল টাইগারদের নতুন রূপ-যেখানে নেই সাকিব, নেই তামিম, তবুও ছিল সাহস, আত্মবিশ্বাস আর একদল তরুণ মুখ।
তাদের মধ্যে একজন সাইফ হাসান, যাকে নিয়ে এর আগে যতটা আলোচনা ছিল, তার চেয়েও বেশি সংশয়। আরেকজন তাওহীদ হৃদয়, যার ফর্ম নিয়ে চলছিল নীরব অসন্তোষ। কিন্তু সময় এসেছে নিজেকে প্রমাণের।
শ্রীলঙ্কার ১৬৮ রানের জবাবে বাংলাদেশ যখন ব্যাট করতে নামে, তখন মনে হচ্ছিল-গন্তব্য দূরের নয়, কিন্তু পথের কাঁটা অনেক।
প্রথম ওভারেই উইকেট, তানজিদ তামিম শূন্য রানে ফিরলেন। চারপাশে একটা চাপা আতঙ্ক। কিন্তু সাইফ হাসান সোজা হয়ে দাঁড়ালেন। ছক্কা মারলেন, বল ঠেলে নিলেন চারবার বাউন্ডারির বাইরে। তার ব্যাট যেন বলছিল-আজ আমার দিন।
৪৫ বলে ৬১ রান করে যখন তিনি ফিরলেন, বাংলাদেশ তখন পথের অর্ধেক পার। বাকিটা শেষ করতে এগিয়ে এলেন হৃদয়। নামের মতোই তিনি যেন এদিন টাইগারদের হৃদয় হয়ে উঠলেন। ৩৭ বলে ৫৮ রান, চারটি চার, দুটি ছক্কা-আর সবচেয়ে বড় কথা, চাপের ভেতরে নিজের ব্যাটিংটা উপভোগ করে খেলা।
ম্যাচটা কিন্তু একঘেয়ে ছিল না। বরং শেষ ওভার এসে খুলে বসেছিল নাটকের মঞ্চ। ৬ বলে দরকার ৫ রান। প্রথম বলে চার, দ্বিতীয় বলে বোল্ড, তৃতীয় বল ডট, চতুর্থ বলে উইকেট। হাতে ২ বল, দরকার ১ রান। মনে হচ্ছিল, যে জয়ের গান টাইগাররা গাইছিল এতক্ষণ, তা কি তবে থেমে যাবে সুরের ঠিক আগেই?
না, সুর থামেনি। ব্যাট হাতে তখন নাসুম আহমেদ, আর প্রান্তে দাঁড়িয়ে ছিলেন শামীম হোসেন-চোখে আগুন, শরীরে রাগ, কিন্তু মাথায় ধৈর্য। পঞ্চম বলে শর্ট থার্ডম্যানে বল ঠেলে, ঠাণ্ডা মাথায় ১ রান নিয়ে বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত করলেন নাসুম।
ম্যাচের আগেই বলা হচ্ছিল, এই শ্রীলঙ্কার হাত ধরেই বাংলাদেশ উঠেছে সুপার ফোরে। তারা যেন ছিল ‘নানাবাড়ি’র মতো-সহানুভূতিশীল প্রতিবেশী। কিন্তু ক্রিকেটে আবেগ থাকে না, থাকে পারফরম্যান্স আর জয়ের ক্ষুধা। আর সেই ক্ষুধার জ্বালাতেই পুড়ল লঙ্কা।
মুস্তাফিজুর রহমানের নিখুঁত কাটার ও ডেথ বোলিং ছিল লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের জন্য যন্ত্রণা। ৪ ওভারে ৩ উইকেট, মাত্র ২০ রান-পুরনো মুস্তাফিজ যেন ফিরে এসেছেন দুবাইয়ের গরম হাওয়ায় ভেসে। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেটের রেকর্ড ছুঁয়ে ফেললেন তিনি। তার ও সাকিব আল হাসানের উইকেট এখন ১৪৯।
তবে এই জয়ের পেছনে ছিল একটি দল, যার প্রত্যেকটি সদস্য জানে কীভাবে চাপ সামলাতে হয়। যারা জানে, শেষ ওভারে ৫ রানের হিসাবও বড় হয়ে উঠতে পারে, কিন্তু মাথা ঠান্ডা রাখলে ১ রানই জেতানোর জন্য যথেষ্ট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর-
শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৬৮/৭ (নিসাঙ্কা ২২, কুসাল মেন্ডিস ৩৪, মিশারা ৫, কুসাল পেরেরা ১৬, শানাকা ৬৪*, আসালাঙ্কা ২১, কামিন্দু ১, হাসারাঙ্গা ২, ওয়েল্লালাগে ০*; শরিফুল ৪-০-৪৯-০, নাসুম ৪-০-৩৬-০, তাসকিন ৪-০-৩৭-১, মেহেদি ৪-০-২৫-২, মুস্তাফিজ ৪-০-২০-৩)
বাংলাদেশ: ১৯.৫ ওভারে ১৬৯/৬ (সাইফ ৬১, তানজিদ ০, লিটন ২৩, হৃদয় ৫৮, শামীম ১৪*, জাকের ৯, মেহেদি ০, নাসুম ১*; থুসারা ৪-০-৪২-১, চামিরা ৪-০-৩২-১, হাসারাঙ্গা ৪-০-২২-২, শানাকা ২.৫-০-২১-২)
ফল: বাংলাদেশ ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: সাইফ হাসান।
Discussion about this post