-২০১৪ সালের আইসিসি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ কোথায় হচ্ছে?
বাংলাদেশ বলছে-‘আমরাই স্বাগতিক’।
ভারত বলছে-‘ভারতেও হতে পারে এই বিশ্বকাপ’!
এমনিতেই এই বিশ্বকাপের জন্য ভেন্যুর প্রস্তুতি নিয়ে আইসিসির কাছে প্রচণ্ড চাপে রয়েছে বাংলাদেশ। আর ঠিক তখনই চাপটা আরও দ্বিগুণ হচ্ছে প্রতিবেশী ভারতের ‘বাড়তি আহ্লাদ’ দেখে!
ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের অন্তর্বর্তী প্রধান জগমোহন ডালমিয়া বলেছেন-‘আইসিসি এই টুর্নামেন্টের ভেন্যু প্রস্তুতির জন্য বাংলাদেশকে আগস্ট পর্যন্ত যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে, সেটা পালনে বাংলাদেশ যদি ব্যর্থ হয়; তবে ভারত এই বিশ্বকাপ আয়োজনে তৈরি।’ না বললে বেশ অভদ্রতা দেখায়, তাই সঙ্গে আরও কিছু যোগ করেছেন ডালমিয়া-‘আমি অবশ্য আশা করব বাংলাদেশ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রস্তুতিকাজ শেষ করতে পারবে।’
লন্ডনে আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভা শেষে ভারতে ফিরে ডালমিয়া সাংবাদিকদের বলেন-‘এই টুর্নামেন্টের জন্য বাংলাদেশের চারটি ভেন্যুর মধ্যে দুটি কক্সবাজার ও সিলেট ভেন্যু সঠিক সময়ে তৈরি হওয়া নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। যদি যথাসময়ে বাংলাদেশ ভেন্যু তৈরি করতে না পারে তবে আমরা সেই ভেন্যুর ম্যাচগুলো আয়োজনে প্রস্তুত। বিকল্প ভেন্যু হিসেবে তাদের সহায়তা করতে আমরা তৈরি হয়ে আছি-এমন একটা নিশ্চয়তাও দিয়েছি আমরা।’
তবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সঙ্গে ডালমিয়ার সুসম্পর্কের যোগাযোগটা বেশ পুরনো। সেই সূত্র ধরেই তিনি বলেন-‘দেখুন, বাংলাদেশের এমন পরিস্থিতি দেখে আমরা কিন্তু মোটেও আনন্দে বগল বাজাচ্ছি না। তবে যদি বাংলাদেশ যথাসময়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে না পারে তাহলে আমরা এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে তৈরি। যদি আমাদের ছয় মাস আগে জানানো হয় তাহলে আমরা নিজেদের সেভাবে প্রস্তুত করব।’
আগামী বছরের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ বাংলাদেশের চারটি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী বছরের ১৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত এই টুর্নামেন্ট ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারে হওয়ার কথা। কিন্তু গত মাসে আইসিসির পর্যবেক্ষক দল এই চারটি ভেন্যু পরিদর্শনের পর সিলেট ও কক্সবাজারের স্টেডিয়াম যথাসময়ে নির্মাণ সম্ভব হবে কি না-তা নিয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট দেয়। পুরো বিষয়টি আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় আলোচিত হয়। সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের অ্যাডহক কমিটির প্রধান নাজমুল হাসান পাপন নিশ্চয়তা দেন-নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই এই বিশ্বকাপের সব কটি ভেন্যু বাংলাদেশ প্রস্তুত করতে সমর্থ হবে।
বিসিবি সভাপতির সেই আশ্বাস পেয়ে আইসিসি আরেকটি ডেডলাইন ঘোষণা করে। আগামী আগস্টের মধ্যে আইসিসির পরিদর্শক দল ফের বাংলাদেশের ভেন্যু পরিদর্শনে আসবে। আইসিসির সেই পর্যবেক্ষক দল যদি নিশ্চিত হয় যে বাংলাদেশ বিশ্বকাপের আগেভাগে এই ভেন্যুগুলো তৈরি করতে পারবে, তাহলে আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশ সবুজ সঙ্কেত পাবে; নইলে ভারত তো বিকল্প ভেন্যু হিসেবে এক পায়ে দাঁড়িয়ে!
এই প্রসঙ্গে কাল বিসিবির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী নিজামুদ্দিন চৌধুরী বলছিলেন-‘আমরা ভারতের এই মনোভাবকে ভালোভাবেই দেখছি। তবে আমরা আত্মবিশ্বাসী যে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই আমাদের ভেন্যুগুলো প্রস্তুত করতে পারব। আমরা আইসিসির কাছ থেকে কাজ শেষ করার জন্য একটা সময়সীমা পেয়েছি। আশা করছি এই সময়সীমার মধ্যেই আমরা আমাদের কাজ সম্পন্ন করতে পারব। যদি কোনো কারণে কোনো ভেন্যুর কাজ শেষ না হয় তবে বিকল্প হিসেবে তো আমাদের কাছে ফতুল্লা স্টেডিয়াম রয়েছেই। ফতুল্লা স্টেডিয়ামে সম্প্রতি ব্যাপক উন্নয়ন করা হয়েছে। তাই খুব সহজেই প্রয়োজন হলে সিলেট স্টেডিয়ামের বিকল্প হিসেবে ফতুল্লাকে আমরা পেতে পারি।’
বিস্তারিত ব্যাখায় নিজামুদ্দিন জানান-‘সিলেটে কোনো এক গ্রুপের মাত্র ছয়টি লিগ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। তাই এ নিয়ে বেশি চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। ঢাকায় বাড়তি ম্যাচ হলে দলগুলোর জন্য আবাসন সমস্যার সমাধান আমরা পেয়ে গেছি। রূপসী বাংলা হোটেলের সংস্কারকাজ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য এই সংস্কারকাজ এখন আর হচ্ছে না। এই হোটেলের ২০০ কক্ষ আমরা পাচ্ছি।’
তবে ভেন্যু নির্মাণ জটিলতার সঙ্গে সামনের দিনে দেশের সম্ভাব্য রাজনৈতিক অস্থিরতাও আগামী বছরের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে বাংলাদেশের জন্য বড় একটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াতে পারে।
Discussion about this post