বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের সাবেক পেসার জাহানারা আলমের যৌন হয়রানির অভিযোগে তোলপাড় ক্রীড়াঙ্গন। সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর বিরুদ্ধে আনা জাহানারার অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে এবং সংবাদমাধ্যমে ব্যাপক আলোড়ন তুলেছে।
এরই মধ্যে বিসিবি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তবে ঘটনাটির গভীরতা ও গুরুত্ব বিবেচনায় জাতীয় দলের দুই সাবেক অধিনায়ক তামিম ইকবাল ও মাশরাফি বিন মর্তুজা, জাহানারার পাশে দাঁড়িয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকেও এসেছে কঠোর প্রতিক্রিয়া। ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া শুক্রবার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমাদের দপ্তর থেকে ভুক্তভোগীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিনি যদি আইনি পদক্ষেপ নিতে চান, সরকার সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখবে। যেহেতু এটি একটি ফৌজদারি অপরাধ, তাই দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ ক্রীড়াঙ্গনের জন্য ভয়াবহ সংকেত। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন কেউ এসব কাজ করে পার না পায়।’
এদিকে তামিম ইকবাল নিজের ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘জাহানারা আলম যে অভিযোগগুলো তুলেছেন, সবই অত্যন্ত গুরুতর। যদি এসব সত্যি হয়, তাহলে তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একজন নারী, একজন ক্রীড়াবিদ বা যে কোনো মানুষ-কারোর প্রতিই এমন আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়।’ তামিম মনে করেন, শুধু বিসিবির গঠিত তদন্ত কমিটি যথেষ্ট নয়; বরং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ বা সরকারি পর্যায়ে একটি স্বাধীন তদন্ত কমিটি থাকা উচিত, যেখানে বিসিবি সংশ্লিষ্ট কেউ থাকবে না, যাতে কোনো ধরনের পক্ষপাতের সুযোগ না থাকে।
তিনি আরও বলেন, ‘জাহানারা আগেও দলের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ করেছিলেন, কিন্তু বিসিবি সেটি যাচাই না করেই উড়িয়ে দিয়েছে। এভাবে কোনো অভিযোগ খারিজ করে দেওয়া কখনোই কাম্য নয়। ভবিষ্যতে যেন কোনো নারী খেলোয়াড় ভয় না পায়, তাই এই অভিযোগগুলোর ন্যায়সংগত তদন্ত প্রয়োজন।’ তামিম নারী ক্রিকেটারদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘যারা কোনোভাবে হেনস্তার শিকার হয়েছেন, তারা সাহস নিয়ে সামনে আসুন। আমরা পাশে থাকব।’
মাশরাফি বিন মর্তুজা একইসঙ্গে জাহানারার পাশে দাঁড়িয়ে বিসিবির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যেন তদন্ত প্রভাবমুক্তভাবে সম্পন্ন হয়। তিনি লিখেছেন, ‘জাহানারার প্রতিটি অভিযোগ বিসিবি যেন গুরুত্বের সঙ্গে দেখে। তদন্ত কমিটি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে-এটাই প্রত্যাশা। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গন সবার জন্য নিরাপদ হোক।’
নারী ক্রীড়াবিদদের প্রতি যৌন হয়রানির মতো অভিযোগ নতুন নয়, কিন্তু এই ঘটনার পর তা আবারও সামনে এসেছে। তামিম-মাশরাফির মতো দুই প্রভাবশালী সাবেক অধিনায়কের সরব অবস্থান বিষয়টিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে।










Discussion about this post