হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের প্রেক্ষাপট পাল্টে গেল। ক্রিকেট বিশ্ব এখন দুই শিবিরে ভাগ হয়ে গেছে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নতুন সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে তৈরি হল যতো সমস্যা। যা হওয়ার আশঙ্কা স্বার্থ রক্ষা হবে তিন ‘মোড়ল’ ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের?!
টেস্ট ক্রিকেটে অবনমন প্রথা চালু হবে কী হবে না, তা নিয়েও উদ্বিগ্ন ওই তিন দেশ ছাড়া টেস্ট পরিবারের বাকি সাত দেশ। কারণ বিশেষ কায়দায় ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে রাখা হয়েছে এ অবনমনের আওতার বাইরে। সত্যি বিস্ময় কর প্রস্তাব!
আগামী ২৮-২৯ জানুয়ারি দুবাইতে আইসিসির সদর দফতরে যে সভা বসবে, তাতেই তোলা হবে নতুন সংস্কার প্রস্তাব। যাতে আইসিসির ক্ষমতা চলে যাবে ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের হাতে। আয়ের ভাগও তারা বেশি পাবে। থাকবে না আইসিসির ফিউচার ট্যুর প্রোগ্রাম (এফটিপি)। এসব সংস্কার প্রস্তাব তোলা হবে ভোটাভুটির জন্য। তাতে সংস্কারের পক্ষে ১০ পূর্ণ সদস্যের মধ্যে অন্তত সাত ভোট পেতে হবে। কিন্তু ইতোমধ্যেই এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট বোর্ড। প্রোটিয়া ক্রিকেট বোর্ড তো ইতোমধ্যেই আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবাদ জানিয়ে এ ‘দুরভিসন্ধিমূলক’ প্রস্তাব প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। বাকিরা আনুষ্ঠানিকভাবে না জানালেও আইসিসির সভায় জোরালো প্রতিবাদ করবে বলেই আভাস দিয়েছে।
দুবাইয়ে ভারত তাদের তরফ থেকে যে ৪ প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে তা এ রকম-
১. ভারতকে আইসিসির আয় থেকে আরও বেশি ভাগ দিতে হবে।
২. আইসিসির প্রেসিডেন্ট পদের পাশাপাশি চেয়ারম্যানের পদ তৈরি করতে হবে। প্রেসিডেন্টের পদ হবে আলঙ্কারিক। সমস্ত ক্ষমতা থাকবে চেয়ারম্যানের হাতে। আর সেই পদে প্রথম বসবেন শ্রীনিবাসন। পর্যায়ক্রমে সেই আসনে বসবে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার প্রার্থী।
৩. তিন বছর অন্তর অন্তর আইসিসির কোনো গ্লোবাল টুর্নামেন্ট ভারতকে দিতে হবে।
৪. ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে বাকিদের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষমতা দিতে হবে।
প্রস্তাবগুলোয় তীব্র ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে তারা এ প্রস্তাব মানবে না। কিন্তু ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড অনমনীয়। তাদের হুমকি, প্রস্তাব না মানলে তারা আইসিসি থেকে বেরিয়ে যাবে। তিন দেশ পেলে গড়বে বিকল্প আইসিসি। কেন ভারত এমন চরম পথে হাঁটতে চাইছে সেটাও জানিয়েছে ভারতীয় মিডিয়া। তাদের খবর-ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বোর্ড হলেও ইদানীং তাদের আয় অনেক কমে গেছে। অথচ ব্যয় কমেনি। রাজ্য ক্রিকেট সংস্থাগুলোকে প্রচুর অর্থ দিতে হয়। অর্থ দিতে হয় প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদেরও। তার ওপর জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের বেতন-ভাতা-বোনাস তো রয়েছেই। রয়েছে বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের খরচ। অথচ ভারতের গত কয়েকটি সিরিজের স্পন্সরশিপ বিক্রি হয়েছে আগের তুলনায় প্রায় অর্ধেক টাকায়। শচীন টেন্ডুলকার অবসর নেওয়ার পর টেস্টের টিআরপিও কমে গেছে। সামনে বোর্ডের আর্থিক হাল আরও বিপন্ন হতে পারে। সে কারণেই আইসিসিতে এ নতুন চাল চেলেছেন শ্রীনিবাসন। কারণ গত কয়েক বছরে আইসিসির আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৫ বিলিয়ন ডলার। তাতেই হাত বাড়াতে চাইছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
Discussion about this post