ক্রিকেট যেন কেবল আর মাঠের খেলা নেই। বিশেষ করে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই শুধু ক্রিকেট নয়-তার সঙ্গে জড়িত থাকে ইতিহাস, আবেগ, রাজনীতি ও কূটনীতি। এশিয়া কাপ ২০২৫ ঘিরে সেই বহুমাত্রিক নাটক আবারও দৃশ্যমান।
এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) যখন আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিল, আসন্ন এশিয়া কাপ হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতে এবং তাতে ভারত ও পাকিস্তান একই গ্রুপে থাকবে—তখন থেকেই যেন আগুনে ঘি পড়ল। ঘোষণার মুহূর্তেই তীব্র প্রতিক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ে ভারতের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমজুড়ে। বিসিসিআই-এর ওপর নেমে আসে ক্ষোভের ঝড়। কেউ বলছেন, এটি ‘জাতির সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’, কেউ বা আবার বিসিসিআই-এর ওপর সরাসরি আক্রমণ করে বলছেন, ‘গায়ে কলঙ্ক লাগিয়েছে এই সিদ্ধান্ত।’
এই তীব্র প্রতিক্রিয়ার পেছনে রয়েছে গত এপ্রিলের একটি ঘটনার ছায়া। কাশ্মীরের পাহেলগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয় ২৬ জন বেসামরিক নাগরিক। ভারত সরকার কোনো প্রমাণ ছাড়াই পাকিস্তানকে দায়ী করে এবং জবাবে চালায় সামরিক অভিযান ‘অপারেশন সিন্দুর’। সেই ঘটনার প্রেক্ষিতে ভারতীয় বোর্ড তাদের দলের এশিয়া কাপ অংশগ্রহণ স্থগিত করে দেয় এবং মনে করা হচ্ছিল, হয়তো এশিয়া কাপ বাতিলই হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সরকার বা বোর্ড-দুয়ের চাপেই হোক কিংবা রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশে-শেষ পর্যন্ত ভারত অংশ নিচ্ছে এই টুর্নামেন্টে, যেখানে তাদের প্রথম বড় লড়াই ১৪ সেপ্টেম্বর, প্রতিপক্ষ পাকিস্তান।
এবারের এশিয়া কাপ একটি ভিন্ন ধরণের আয়োজন। মোট আটটি দল নিয়ে হচ্ছে প্রতিযোগিতা, এবং এটি হবে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে, সামনে ২০২৬ বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। ভারত-পাকিস্তানের গ্রুপে রয়েছে আরও দুটি দল-ওমান ও স্বাগতিক সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই ম্যাচগুলোর মধ্যেই আছে উত্তেজনার পারদ, কিন্তু ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ তো আর শুধু একটি খেলার নাম নয়-এটি যেন দুই রাষ্ট্রের প্রতীকী মুখোমুখি।
এ নিয়ে কথা বলেছেন ভারতের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনও। স্পষ্টভাবেই তিনি বিসিসিআই-এর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তার মতে, যদি পাকিস্তানের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না খেলা হয়, তাহলে বহুজাতিক টুর্নামেন্টেও খেলাটা উচিত নয়। দ্বৈত নীতির এমন ব্যবহারে বিভ্রান্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।
অন্যদিকে বাংলাদেশের চোখ এবার শিরোপা নয়, অন্তত সুপার ফোর পর্যন্ত যাওয়ার। হংকং, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের সঙ্গে গ্রুপ পর্বে খেলবে টাইগাররা। ১১ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে যাত্রা শুরু করবে বাংলাদেশ।
Discussion about this post