বাংলাদেশ ক্রিকেটে নারী ক্রিকেটাররা কেবল মাঠেই নয়, সংগ্রাম করে যাচ্ছেন মাঠের বাইরেও-একটি ন্যায্য অবস্থান, স্বীকৃতি এবং সম্মানের জন্য। কোয়াব নির্বাচনকে ঘিরে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা যেন আরও একবার নগ্ন করে দিল সেই চিত্রটিকে।
দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে দেশের ক্রিকেটে অবদান রাখা রুমানা আহমেদ, কিংবা বর্তমান অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি-তারা কি শুধুই নারী? নাকি তারা আসলে ‘ক্রিকেটার’? এই প্রশ্ন তোলার সময় এখন, কারণ যখন ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (কোয়াব) নির্বাচন নিয়ে একের পর এক আলোচনা হয়, জাতীয় দলের পুরুষ ক্রিকেটারদের নিয়ে বৈঠকের পর বৈঠক বসে, তখন কোথাও সেই আলোচনার আলো এসে পড়ে না নারী ক্রিকেটারদের ওপর।
একটি সংগঠন যা গড়ে উঠেছিল ক্রিকেটারদের কল্যাণের জন্য, তার সিদ্ধান্তে যখন শুধু একপক্ষের অংশগ্রহণ থাকে, তখন আরেকপক্ষের অপমান শুধু নীরব নয়—ক্ষোভ হয়ে ফেটে পড়ে।
নিগার সুলতানা জ্যোতির ফেসবুকে লেখা একটি লাইন, ‘ক্রিকেটার আর নারী ক্রিকেটারের ভেতর পার্থক্য আছে বন্ধু!’
আর রুমানা আহমেদ তো প্রশ্ন ছুড়েছেন স্পষ্ট ভাষায়-তামিম, সাকিব, মাহমুদউল্লাহদের নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তাহলে সালমা খাতুন, রুমানা, জাহানারা আলমদের নাম কেন উচ্চারিত হয় না? তাদের কী সেই সম্মানটুকু প্রাপ্য নয়? রুমানার এই প্রশ্ন কেবল ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক চেতনাও-যেখানে নারী ক্রিকেটকে কেবল “সহযোগী অংশ” ভাবার প্রবণতা এখনও প্রকট।
এই ক্ষোভ জমেছে বহুদিন ধরেই, বিশেষ করে নারী ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ নিয়ে বিসিবির প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার ফারাক বারবার সেই আস্থায় চিড় ধরিয়েছে। কয়েক বছর ধরেই বিসিবি বলে আসছে, নারী বিপিএল হবে-এমনকি চলতি বছর তিনটি দল নিয়েই ছোট পরিসরে লিগ আয়োজনের ঘোষণাও আসে। কিন্তু ফলাফল? আবারও পিছিয়ে যাওয়া-সূচি মেলেনি, স্পনসর মেলেনি, বাস্তবায়নও হয়নি।
এ নিয়ে হতাশা আড়াল করেননি রুমানা। তিনি লেখেন, ‘বৈষম্য, বৈষম্য আর বৈষম্য!’
বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট আজ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পরিচিত নাম। তাদের হাত ধরেই এসেছে এশিয়া কাপ জয়, এসেছে বিশ্বকাপে দাপুটে পারফরম্যান্স। অথচ দেশের অভ্যন্তরীণ কাঠামোতে তারা এখনও আশার চেয়ে অপেক্ষার কাতারেই পড়ে থাকেন বেশি।
Discussion about this post