একজন নারী ক্রিকেটার যখন তার কান্না ভেজা কণ্ঠে বলেন, ‘আমি অপমানিত হয়েছি, আমি নির্যাতনের শিকার’-তখন তা কেবল একটি অভিযোগ নয়, বরং এক নীরব ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড় করায় গোটা সমাজকে। ঠিক তেমনই করেছেন জাহানারা আলম, বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটের পথিকৃৎ ও সাবেক অধিনায়ক। আর সেই সাহসী কণ্ঠের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ক্রিকেটারদের সংগঠন কোয়াব (ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ)-যেন এক নীরব সমর্থন নয়, বরং দৃপ্ত উচ্চারণ: ‘অবহেলা নয়, ন্যায়বিচার চাই।’
ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক রিয়াসাদ আজিমের ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাহানারা জানান, নারী দলের সাবেক নির্বাচক ও ম্যানেজার মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং নারী বিভাগের সাবেক ইনচার্জ প্রয়াত তৌহিদ মাহমুদের হাতে তিনি যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। ২০২২ সালের বিশ্বকাপের সময়ের সেই কুপ্রস্তাব, সেই অবমাননা ও দীর্ঘদিনের নীরব যন্ত্রণা-সব তিনি উজাড় করে দেন ক্যামেরার সামনে।
তার সেই বেদনা শুধু দর্শককেই নাড়িয়ে দেয়নি, নাড়িয়ে দিয়েছে পুরো ক্রিকেট সমাজকেও। আর তখনই কোয়াবের অবস্থান যেন হয়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা। সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ মিঠুন স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘একজন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক যৌন হয়রানি ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন-এটি কোনোভাবেই উপেক্ষা করার মতো নয়। এটি শুধু একজন ক্রিকেটারের অভিজ্ঞতা নয়, বরং আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতির আত্মসমালোচনার সময় এসেছে।’
কোয়াব স্পষ্ট জানায়, নারী দলের ম্যানেজার, নির্বাচক, ইনচার্জ বা কোচ-যাদের বিরুদ্ধেই অভিযোগ হোক, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক। তারা সতর্ক করে দেয়, ‘আমরা কোনো আড়াল বা দীর্ঘসূত্রিতা দেখতে চাই না। দায়ী কেউ থাকলে তাকে দৃষ্টান্তমূলকভাবে শাস্তি দিতে হবে, যাতে আগামী প্রজন্মের কোনো ক্রিকেটার ভয় নয়, আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নামতে পারে।’
সংগঠনটি শুধু কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি; তারা জাহানারাকে আইনি, মানসিক ও সামাজিক সবধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘জাহানারার প্রতি আমাদের কেবল সহানুভূতি নয়, তার পাশে বাস্তব সমর্থনও থাকবে। নারী ক্রিকেটের প্রতিটি স্তরে যেন এমন ঘটনা আর না ঘটে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’
বিসিবি অবশ্য ইতিমধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছে, যা ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে। বোর্ড দাবি করছে, তারা নারী ক্রিকেটারদের জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর। অস্ট্রেলিয়ায় বসে নতুন জীবনের পথে এগোচ্ছেন জাহানারা-ক্লাব ক্রিকেট খেলছেন, কোচিং কোর্স করছেন, আর নিজেকে তৈরি করছেন আরও শক্ত হয়ে ফিরে আসার জন্য।










Discussion about this post