স্পোর্টস রিপোর্টার: যার অধীনে হবে নির্বাচন, সেই গঠনতন্ত্রই এখন আদালতে। বিষয়টির সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত বোর্ডের নির্বাচন সম্ভব নয়-ক’দিন আগে প্রচার মাধ্যমের কাছে এমন মন্তব্য করেছেন নাজমুল হাসান পাপন। বিসিবি সভাপতির কথা শুনে মনে হয়েছে, আদালতে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই বোর্ড নির্বাচন সম্ভব নয়। তবে সে বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন ওই মামলার অন্যতম বাদী স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন। তিনি মনে করেন, আদালত কোনো বাধা নয়। বর্তমান বিসিবি সভাপতি চাইলে এবং বর্তমান বোর্ড আহ্বায়ক কমিটির আন্তরিক ইচ্ছে থাকলেই নির্বাচন সম্ভব। সেটা কীভাবে? তার পরিষ্কার দিকনির্দেশনাও আছে তার কাছে।
মোবাশ্বেরের দাবি, ২০১২-এর ১ মার্চ বিসিবির ইজিএমে কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ সমর্থনে পাস হওয়া গঠনতন্ত্র মেনে নিলেই সমস্যার সমাধান হবে। গতকাল দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে সে কথাই বলেছেন মোবাশ্বের। বলার অপেক্ষা রাখে না, যে গঠনতন্ত্র এখন আদালতে শুনানির অপেক্ষায় তার অন্যতম বাদী বিসিবির এ সাবেক কর্মকর্তা। তাই বোর্ড সভাপতি যখন বলেন-আদালতের রায় ছাড়া নির্বাচন সম্ভব নয়, তখন তার প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ দায় মোবাশ্বের হোসেনের ওপরও বর্তায়।
কাল বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের কনফারেন্স হলে সংবাদ সম্মেলনে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি। মোবাশ্বের হোসেনের প্রথম ও শেষ কথা-ক্রিকেটের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিশীলিত-সুবিন্যস্ত করতে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দরকার। তাতে শুধু বোর্ডে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কায়েমই হবে না, দায়বদ্ধতাও বাড়বে। এছাড়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল মানে আইসিসিতেও গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। আর সে নির্বাচনটা ২০১২-এর ১ মার্চ বিসিবির ইজিএমের কাউন্সিলরদের পাস করা গঠনতন্ত্র মোতাবেকই হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বিসিবি আহ্বায়ক কমিটির উচিত হবে হাইকোর্টের রায় মেনে সুপ্রিম কোর্টে করা রিট তুলে নেওয়া। প্রসঙ্গত, নাজমুল হাসান পাপনের নেতৃত্বে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি মনেপ্রাণে চাইছে ২০১২-এর ২৯ নভেম্বর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করতে। যে সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ক্রিকেটারদের কাউন্সিলর বাধ্যতামূলক করা আছে। আর সাবেক বোর্ডকর্তা ও অভিজ্ঞ ক্রিকেট সংগঠক মোবাশ্বের হোসেন জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশোধিত ওই গঠনতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন। হাইকোর্ট জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের হস্তক্ষেপ তথা গঠনতন্ত্র সংশোধনকে অবৈধ বলে রায় দিয়েছেন। আর জাতীয় ক্রীড়া সংস্থা সেই রায়ের বিষয়ে উচ্চতর আদালত মানে সুপ্রিম কোর্টে রিট করেছে। এতে করে বিষয়টি পুরোই আদালতের এখতিয়ারে পড়ে গেছে।
মোবাশ্বের হোসেনের দাবি, বিসিবি নিজস্ব অর্থায়নে অভিজ্ঞ ও ঝানু আইনজ্ঞ নিয়োগে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদকে সাহায্য করেছে। তারা কায়মনে চাইছে ক্রীড়া পরিষদের সংশোধিত গঠনতন্ত্র বহাল হোক। তাতেই হোক বোর্ড নির্বাচন। আর মোবাশ্বের হোসেনের আপত্তিটাও সেখানে। তার সোজাসাপ্টা কথা, ‘আদালত আমার দায়ের করা রিটের ওপর রুল জারি করেই বুঝিয়ে দিয়েছেন ক্রীড়া পরিষদের সংশোধিত গঠনতন্ত্র বেআইনি। ক্রীড়া পরিষদ তা করার এখতিয়ারও রাখে না। এখন বিসিবির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সামনে একটাই পথ খোলা আছে। তা হল ২০১২-এর ১ মার্চের বিশেষ সাধারণ সভার কাউন্সিলরদের পাস করা গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করার। তা করতে হলে সুপ্রিম কোর্টে করা আপিল তুলে নিতে হবে। ক্রীড়া পরিষদ অতি দ্রুত সে গঠনতন্ত্রকে অনুমোদন দিয়ে দিলে শিগগিরই নির্বাচন সম্ভব।’
বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান গঠনতন্ত্র সম্পর্কিত জটিলতার জন্য প্রকাশ্যে বোর্ডের সাবেক কমিটিকে দায়ী করেছেন। আগের কমিটি তাদের ঠিক করা গঠনতন্ত্রকে ক্রীড়া পরিষদের কাছ থেকে অনুমোদন আনতে পারেনি। তিনি কেন যেচে তা আনতে যাবেন? তার এ বক্তব্যের বিরোধিতা করে সাবেক বোর্ডপ্রধান বলছিলেন, ‘তিনি আগের বোর্ডের গঠনতন্ত্র মানতে চান না। সংশোধন করতে আগ্রহী নন। কিন্তু আগের বোর্ডের রেখে যাওয়া অর্থ ঠিকই খরচ করেন।’ বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সমালোচনা করে মোবাশ্বের বলেন, ‘আমি আহ্বায়ক কমিটি বলি না। আমি এটাকে মনে করি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমার কাছে এটা ফখরুদ্দীনের কেয়ারটেকার গভর্নমেন্টের মতো। তবে তার সঙ্গে বিসিবির বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির একটা বড় পার্থক্য আছে। নিজেরা ক্ষমতায় না বসে ওই কেয়ারটেকার গভর্নমেন্ট দুই বছর পর হলেও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। আর বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার অঙ্গীকার করে ১৮০ দিনেও নির্বাচন দেয়নি। আইসিসির বাধ্যবাধকতা না থাকলে আদৌ নির্বাচন দিত কি না সন্দেহ।’
উল্লেখ্য, এর বাইরে ২০০৮-এর গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করার কথাও বলছেন কেউ কেউ। কিন্তু ওই গঠনতন্ত্র আইসিসির নিয়ম-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। তাই ২০০৮-এর গঠনতন্ত্রে নির্বাচন সম্ভব নয়। এখন বিসিবি নির্বাচনের জট খুলতে হলে হয় ২০১২-এর বিশেষ সাধারণ সভার কাউন্সিলরদের পাস করা গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করতে হবে; না হয় ২০১২ সালের নভেম্বরে ক্রীড়া পরিষদের সংশোধন করা গঠনতন্ত্রকে মূলমন্ত্র ধরে নির্বাচনে যেতে হবে। কিন্তু এ নিয়ে দু’পক্ষের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব। তা নিরসনে কার্যকর উদ্যোগ দরকার। তা না হয়ে চলছে কাদা ছোড়াছুড়ি। বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি নির্বাচন দিতে নানা টালবাহানা করছে জানিয়ে আইসিসির কাছে মেইল করেছেন মোবাশ্বের। তার পরিপ্রেক্ষিতে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের দাবি-মোবাশ্বের হোসেনের করা রিটের পরিপ্রেক্ষিতেই জটিলতা দেখা দিয়েছে।
আইসিসির সদস্য পদ খারিজ হওয়ার শঙ্কাও জেগেছে। মোবাশ্বের হোসেন সে মন্তব্যকে ভিত্তিহীন বলেও অভিহিত করেছেন। তিনি যে গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করার কথা জোর দিয়ে বলেছেন, তাতে ক্রিকেটারদের বোর্ডে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত নয়। ক্রিকেটারদের কাউন্সিলর করার প্রক্রিয়াটিও ছিল অস্বচ্ছ। কিন্তু জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশোধিত গঠনতন্ত্রে ক্রিকেটারদের বোর্ডে থাকা নিশ্চিত আছে। এ সম্পর্কে তার ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হলে মোবাশ্বের হোসেন বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ২০১২-এর ইজিএমে কাউন্সিলে পাস হওয়া গঠনতন্ত্রকে পুরোপুরি সমর্থন করি না। আমারও মনে হয় ক্রিকেটারদের কাউন্সিলর থাকা একান্তই জরুরি। একজন ক্রিকেটার ভালো সংগঠক হতে পারেন।’ তার দাবি, ওই গঠনতন্ত্রে নির্বাচন করে তারপর সংশোধনী এনে ক্রিকেটারদের কাউন্সিলরশিপ নিশ্চিতের চেষ্টা করতে হবে। তা কি সম্ভব? যারা ক্রিকেটারদের কাউন্সিলর করতেই রাজি না, তারা নির্বাচিত হলে ক্রিকেটাররা কি কাউন্সিলর হতে পারবে? এর সঠিক জবাব মেলেনি। মোবাশ্বের হোসেনের কথা-‘আমি একা তো আর তা পারব না। তবে আমি মনে করি ক্রিকেটারদের বোর্ডে থাকা উচিত।’
Discussion about this post