দেশের ক্রিকেট ও ফুটবলের সম্পর্ক বরাবরই সূক্ষ্ম। দুই খেলাই জনপ্রিয়, কিন্তু মাঠের হিস্যা নিয়ে বহুবারই তৈরি হয়েছে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। সেই পুরনো টানাপোড়েন আবার সামনে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) এক অনুষ্ঠানে বিসিবি পরিচালক ও সংগীতশিল্পী আসিফ আকবরের মন্তব্যে।
গতকাল রাজধানীর এক পাঁচতারকা হোটেলে দেশের ৬৪ জেলার কোচ, সংগঠক ও ক্রীড়া কর্মকর্তাদের নিয়ে আয়োজিত ক্রিকেট কনফারেন্সে আসিফ বলেন, দেশের অনেক জায়গায় ফুটবলারদের কারণে ক্রিকেট খেলা ব্যাহত হচ্ছে। তার অভিযোগ, ‘ফুটবলারদের জন্য সারা দেশে ক্রিকেট খেলা যাচ্ছে না। তারা উইকেট ভেঙে ফেলছে, নষ্ট করছে। প্রতিটা জেলার মাঠ ফুটবল দখল করে রেখেছে। টবলারদের ব্যবহার খুব খারাপ, এটা আমি সরাসরি বলতে চাই। কারণ, ক্রিকেট একটা ডিসিপ্লিনড খেলা, আভিজাত্যের খেলা এটি, এখানে অনেক নিয়মকানুন আছে, রেকর্ডের খেলা।’ তার উদাহরণ-কুমিল্লা স্টেডিয়ামে আসন্ন আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ, যেখানে ক্রিকেট আয়োজন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
তবে এই বক্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই ফুটবল অঙ্গনে শুরু হয় প্রতিবাদের ঝড়। জাতীয় দলের বর্তমান ও সাবেক খেলোয়াড়রা প্রকাশ্যে নিন্দা জানান আসিফের বক্তব্যের। ডিফেন্ডার শাকিল আহাদ তপু লেখেন, ‘ফুটবল, ক্রিকেট, হকি-সব খেলাই আমাদের। কোনো খেলাকে ছোট করা যায় না।’ তিনি জানতে চান, ‘কোন ফুটবলার উনার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে?’
আরেক ফুটবলার জাহিদ হাসান শান্ত মনে করেন, আসিফের বক্তব্য ক্রীড়া বৈষম্য তৈরি করছে। তার ভাষায়, ‘আপনি ফুটবল আর ক্রিকেটের মধ্যে বিভাজন তৈরি করলেন। ইউরোপে যদি ক্রিকেট জনপ্রিয় হতো, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায় থাকত? এই কথা বলে আপনি আসলে অহংকারই প্রকাশ করেছেন।’
জাতীয় দলের স্ট্রাইকার আল আমিন বলেন, ‘ফুটবল পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলা। আপনি যে ভঙ্গিতে কথা বলেছেন, সেটি স্পোর্টসের ভাষা নয়। ফুটবলারদের শৃঙ্খলা শেখানোর দরকার নেই; বরং নিজের মন্তব্যে অনুতপ্ত হওয়া উচিত।’
অন্যদিকে সাবেক জাতীয় স্ট্রাইকার জাহিদ হাসান এমিলি বিষয়টি আরও গুরুতর আকারে তুলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, আসিফ ক্ষমা না চাইলে তারা বড় ধরনের অ্যাকশনে যাবেন, ‘আমরা বিসিবিতে চিঠি দেব, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। প্রয়োজনে মানহানির মামলাও করব।’
আসিফ আকবরের বক্তব্যের পক্ষে বা বিপক্ষে বিসিবির অন্য কোনো কর্মকর্তার সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া না গেলেও কনফারেন্সে উপস্থিত কিছু ব্যক্তিকে তালি দিতে দেখা গেছে-যা ফুটবলপাড়ায় আরও ক্ষোভ উসকে দিয়েছে।
এ ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, দুই জনপ্রিয় খেলার মধ্যকার এই অযাচিত সংঘাতের দায় কে নেবে? দেশের ক্রীড়া অবকাঠামো এতটাই সীমিত যে, মাঠ ভাগাভাগি অনিবার্য। কিন্তু সেই বাস্তবতাকে বিবেচনায় না নিয়ে যদি এক খেলা অন্য খেলাকে দায়ী করতে থাকে, তবে লাভের বদলে ক্ষতিই বাড়বে-এমন মতামত প্রকাশ করছেন অনেক ক্রীড়া বিশ্লেষক।










Discussion about this post