বাংলাদেশের ক্রীড়া অঙ্গনে হঠাৎ করেই সৃষ্টি হয়েছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত বিতর্ক। এর কেন্দ্রবিন্দুতে বিসিবির পরিচালক ও জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। ফুটবল নিয়ে তার এক মন্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকেই শুরু হয়েছে নিন্দা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড়। বিষয়টি এখন শুধু সামাজিক প্রতিক্রিয়াতেই সীমাবদ্ধ নয়, আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)ও বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কাছে ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
ঘটনার সূচনা হয় গতকাল, বিসিবির আয়োজনে দেশের ৬৪ জেলার কোচ, সংগঠক ও ক্রীড়া কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণে এক কনফারেন্সে। সেখানে আসিফ আকবর বলেন, ‘ফুটবলারদের জন্য দেশের বিভিন্ন জায়গায় ক্রিকেট খেলা সম্ভব হচ্ছে না। তারা মাঠ দখল করে রেখেছে, উইকেট নষ্ট করছে। ফুটবলারদের আচরণও ভালো নয়। ক্রিকেট একটা ডিসিপ্লিনড ও আভিজাত্যের খেলা।’
এই বক্তব্য দ্রুতই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, দেশের দুটি জনপ্রিয় খেলার মধ্যে এমন বিভাজনমূলক বক্তব্য অত্যন্ত অযাচিত ও দুঃখজনক। বিশেষত যখন দুই খেলাই একই অবকাঠামো ভাগাভাগি করে চলছে।
বিসিবির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের কাছে পাঠানো বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়ালের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘ক্রিকেট কনফারেন্স থেকে ফুটবল সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করা হয়েছে, যা শুধু ফুটবল নয়, পুরো ক্রীড়া সমাজের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করেছে। আমরা তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করছি।’
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘খেলাধুলা বিভাজনের নয়, ঐক্যের মঞ্চ। সেখানে ‘অভিজাত’ বা ‘মারামারি’ শব্দ ব্যবহারে বৈষম্যের মনোভাব স্পষ্ট। প্রশ্ন উঠছে-আমরা কি সত্যিই সমতা ও ঐক্যের বাংলাদেশ গড়ার পথে আছি?’
বাংলাদেশ ফুটবল খেলোয়াড় কল্যাণ সমিতিও আজ এক বিবৃতিতে আসিফ আকবরের মন্তব্যের নিন্দা জানায়। সমিতির সভাপতি ও সাবেক জাতীয় ফুটবলার ইকবাল হোসেন বলেন, ‘একজন বিসিবি পরিচালকের এমন মন্তব্য অগ্রহণযোগ্য। ক্রিকেট বোর্ডের উচিত অবিলম্বে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া।’ পাশে থাকা সাবেক অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম যোগ করেন, ‘ভদ্রলোকের খেলা বলা হলেও উনি ভদ্র আচরণ দেখাননি। তার উচিত প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া।’
বিতর্কের মধ্যে উঠে এসেছে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের অতীত-যিনি নিজেও ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়া থেকে উঠে এসে ভিক্টোরিয়া ক্লাবে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন তিনি। তার নীরবতা অনেককে ব্যথিত করেছে। মামুনুল বলেন, ‘বুলবুল ভাই আমাদের প্রিয় মানুষ। কিন্তু আসিফ যখন এমন কথা বলছিলেন, তার মুখে হাসি দেখা গেছে, এটা কষ্ট দেয়।’
সাবেক ফুটবলারদের সংগঠন সোনালী অতীত ক্লাবও আজ আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানায়। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘আসিফ আকবরের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ক্রীড়ার চেতনাবিরোধী। বিসিবির সভাপতি নিজে যেহেতু প্রাক্তন ফুটবলার, তাই এই বক্তব্য আরও বেদনাদায়ক।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, মাঠ ব্যবহারের সংকট নিয়ে ক্রিকেট ও ফুটবলের মধ্যে মাঝে মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দিলেও প্রশাসনিক সমন্বয়ের মাধ্যমে তা সহজেই সমাধানযোগ্য। কিন্তু একটি অসাবধানী মন্তব্য ক্রীড়া সমাজে অপ্রয়োজনীয় বিভাজন সৃষ্টি করেছে।










Discussion about this post