গত বছরের ৫ নভেম্বর জাতীয় ক্রিকেট দলের সহকারী কোচ হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত তার সঙ্গে বিসিবির চুক্তি ছিল। কিন্তু সেই মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই জাতীয় দলের দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন দেশের অন্যতম আলোচিত এই কোচ।
ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজের খবর অনুযায়ী, আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলতি হোম সিরিজ শেষেই আনুষ্ঠানিকভাবে বিদায় নিচ্ছেন সালাউদ্দিন। বিষয়টি তিনি নিজেও নিশ্চিত করেছেন একাধিক গণমাধ্যমে। জানিয়েছেন, বিসিবিতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন এবং নির্ধারিত নোটিশ পিরিয়ড পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
হঠাৎ এমন সিদ্ধান্তের কারণ জানতে চাইলে প্রথমে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান সালাউদ্দিন। তবে পরে স্পষ্ট করে বলেন, ‘কোচিং করানোটা আমার উপভোগের জায়গা। মাঠই আমার সব। যদি কোনো কারণে সেটা উপভোগ না করতে পারি, তাহলে সরে যাওয়াই ভালো। আমি আমার দায়িত্বটা আর উপভোগ করছি না।’
তবে কেন আর উপভোগ করছেন না- সে ব্যাপারে মুখ খোলেননি তিনি। জানিয়েছেন, প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে তার কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বিসিবির ভেতরকার কিছু অস্বস্তি যে তাঁর কোচিং অভিজ্ঞতাকে প্রভাবিত করেছে, তা বোঝা যাচ্ছে নানা সূত্রে। ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদিন ফাহিমের সঙ্গে সালাউদ্দিনের কথাবার্তা কয়েক মাস ধরেই বন্ধ ছিল বলে বিসিবির অভ্যন্তরীণ সূত্রের দাবি।
এমন সময়েই বিসিবি জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ হিসেবে হঠাৎই নিয়োগ দেয় সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে। এই সিদ্ধান্ত নিয়েও নানান আলোচনা শুরু হয়। অনেকেই মনে করেন, অভিজ্ঞ স্থানীয় কোচদের উপেক্ষা করে সরাসরি আশরাফুলকে জাতীয় দলে আনা প্রক্রিয়াগতভাবে সঠিক হয়নি। যদিও সালাউদ্দিন বিষয়টি নিয়ে কোনো আপত্তি না জানিয়ে বলেন, ‘কোচিং স্টাফে আশরাফুলের অন্তর্ভুক্তি আমি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছি।’
তবুও বাস্তবতা হচ্ছে, ব্যাটিং ব্যর্থতা এবং নির্বাচনী সিদ্ধান্তের দায়ভার ক্রমেই এসে পড়ছিল সালাউদ্দিনের ওপর। আফগানিস্তান সিরিজে উইকেটকিপার পছন্দ নিয়ে সিদ্ধান্ত বিভ্রান্তিও তার কাঁধে বর্তেছিল, যদিও তা অধিনায়ক ও প্রধান কোচের মধ্যকার সমঝোতায় হয়েছিল। এই চাপ, দায়িত্বের বাড়তি বোঝা এবং অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের সংকট মিলিয়েই শেষ পর্যন্ত পদত্যাগের পথে হাঁটলেন তিনি।
আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজের পরই জাতীয় দলের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা যাবে মোহাম্মদ সালাউদ্দিনকে। এরপর তিনি আবার ফিরবেন ঘরোয়া ক্রিকেটে। জানা গেছে, বিপিএলে কোনো এক ফ্র্যাঞ্চাইজির কোচ হিসেবে তাঁকে দেখা যেতে পারে।
যে মানুষ মাঠকে নিজের ‘সব’ বলেছিলেন, সেই সালাউদ্দিনের মুখেই এখন শোনা যাচ্ছে, ‘আমি দায়িত্বটা আর উপভোগ করছি না।’ হয়তো এই এক বাক্যেই লুকিয়ে আছে তার পদত্যাগের আসল কারণ!










Discussion about this post