ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
দিন দু’য়েক আগে একটি অনলাইন পোর্টালের সঙ্গে লাইভ ইন্টারভিউ দিয়ে ছিলেন সাকিব আল হাসান। সেখানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের বেশ কয়েকজন পরিচালকের বিপক্ষে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করেন তিনি। এরপরই থেকেই সরগরম গোটা ক্রিকেটাঙ্গন। তবে রোববার রাতে ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্রকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব বলেছেন, আমার মনে হয় না, আমি খারাপ কিছু বলেছি।
উৎপল শুভ্রকে সাকিব বলেছেন, ‘আমি প্ল্যান করে কিছু বলি না। যা মনে আসে, তা-ই বলি। যা বিশ্বাস করি, তা-ই বলি। কথায় কথায় প্রসঙ্গ এসেছে, যা ঠিক মনে করি, বলে দিয়েছি। আমি যা বিশ্বাস করি, তা-ই বলি। কী প্রতিক্রিয়া হবে, এ নিয়ে ভাবি না। আমি চিন্তা করলে বড় চিন্তা করি। আচ্ছা আপনিই বলেন, আমি যা বলেছি, তাতে কি আমার নিজের কোনো লাভ আছে? নিজের লাভ তো গাধাও বোঝে। আমি ক্রিকেটের বৃহত্তর স্বার্থে কথাগুলো বলেছি। কারও যখন বলার সাহস নাই, আমিই না হয় বললাম। আমার ব্যক্তিগত লাভের জন্য তো বলি নাই। কেউ যদি এটা ভালোভাবে নিতে চায়, তা ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে। আমরা যদি ভালো করতে চাই, বাংলাদেশের ক্রিকেটের উন্নতি চাই, তাহলে তো আমি আমার কথায় কোনো সমস্যা দেখি না ‘
সাকিব আরও বলেছেন, ‘আমি ব্যাপারগুলো নিয়ে চিন্তিত না। আমার মনে হয় না, আমি খারাপ কিছু বলেছি। এটা আসলে কে কীভাবে নেয়, তার ওপর। ভালো ভাবে নিলে ভালো, আর কেউ যদি ইস্যু তৈরি করতে চায়, তাহলে ভিন্ন কথা। কেউ যদি আমার ২টা/৩টা প্রবলেমের কথা বলেন, আমি তা নিয়ে চিন্তা করব। ঠিক মনে হলে শোধরানোর চেষ্টা করব। আমার ছুটি নেওয়া নিয়ে কেউ একটার পর একটা ইন্টারভিউ দিয়ে যেতে পারবেন, আর আমি আমার কথাটা বলতে পারব না?’
শ্রীলঙ্কা সফরে না যেয়ে আইপিএল খেলেবেন সাকিব। এজন্য বেশি সমালোচনার মুখে পড়েছেন তিনি। এ ব্যাপারে এ তারকা বলেছেন, ‘যাঁরা সমালোচনা করছে, তাঁদের জায়গা থেকে ঠিকই আছে। কিন্তু একটু চিন্তা করলে তাঁরাও বুঝতে পারবে, আমি কেন আইপিএলে খেলতে চাইছি। প্রথমত, শ্রীলঙ্কা ট্যুরটা এই সময়ে ছিল না। তাছাড়া দেখেন, আমরা এখন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ টেবিলের সবার শেষে আছি। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে খেলা। হয়তো আমরা একটা টেস্ট জিতব, একটা হারব। তাতে কী হবে, ৭/৮ নম্বরে উঠতে পারব বলে তো মনে হয় না। আর আইপিএলে আমি যে মাঠগুলোতে খেলব, কয়েক মাস পর সেই মাঠগুলোতেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের খেলাও হবে। আমি তো আমার এই অভিজ্ঞতা দলের অন্যদের সঙ্গেও শেয়ার করতে পারব। বাংলাদেশের আর কেউ তো আইপিএলে নাই। আরেকটা জিনিস দেখেন, আমি যে কেকেআরে খেলব, সেই দলের অনেকেই বিশ্বকাপে বিভিন্ন দলে খেলবে। আমি তো ওদের উইকনেসের জায়গাগুলোও জানতে পারব। যা বিশ্বকাপে কাজে লাগবে। ড্রেসিংরুমে তো এসব আলাপ হবেই–আমার এটাতে সমস্যা হচ্ছে, ওটাতে সমস্যা হচ্ছে। আইপিএলের তিন/চার মাস পরই তো ওয়ার্ল্ড কাপ। আমি তো জানব, কিছুদিন আগেই কোন প্লেয়ারের মাইন্ডসেট কেমন ছিল। অন্যদের সঙ্গে শেয়ারও করতে পারব।’
সাকিব আরও জানিয়েছেন, ‘টাকাটাও একটা ফ্যাক্টর। আমার কথাই বলি। বয়স ৩৪ হয়ে গেছে। সবকিছু ঠিক থাকলে বড়জোর আর তিন/চার বছর খেলতে পারব। দুই বছরও হতে পারে। কপাল খারাপ থাকলে এক বছর। আর্থিক দিকটা ভাবা কি অন্যায়?’
কোন ব্যক্তিকেই আক্রমণ করেননি সাকিব। ব্যাপারটি তিনি খোলাসাও করেছেন এভাবে, ‘না, না, আমি তো কোনো ব্যক্তি নিয়ে কথা বলি নাই। দুর্জয় ভাই (নাঈমুর) যে এইচপির দায়িত্বে, এটা আমি পরে জেনেছি। সত্যি বলছি, আমি জানতাম না। আমি এইচপির কাজকর্ম নিয়ে কথা বলেছি। ভাসা ভাসা চোখে মনে হবে, ভালোই তো চলছে। একাডেমি বিল্ডিংয়ে প্লেয়াররা থাকছে, প্র্যাকটিস করছে। কিন্তু গত ২/৩ বছরে এইচপি থেকে কয়টা প্লেয়ার উঠে এসেছে? প্রতি বছর তো অন্তত ২/৩ জন প্লেয়ার আসা উচিত। কারণ এইচপি আশি পার্সেন্ট রেডি প্লেয়ার নিয়ে কাজ করে, কাজ বলতে তো বাকি ২০ পার্সেন্ট রেডি করা। ন্যাশনাল টিম থেকে বাদ পড়া প্লেয়ারও তো থাকে। আকরাম ভাইয়ের কথা বলেছি, কারণ উনি বলেছেন, আমি টেস্ট খেলতে চাই না। কিন্তু বোর্ডের সিইওকে দেওয়া চিঠিতে আমি তো টেস্টের কথা কিছু লিখিইনি। আপনি চেক করে দেখতে পারেন। আমি ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ থেকে কিছু বলি নাই। আকরাম ভাই ক্রিকেট অপারেশনসের চেয়ারম্যান। ন্যাশনাল টিম ভালো করলে যেমন উনি কৃতিত্ব পাবেন, খারাপ করলে তেমনি দায়ও নিতে হবে। সবাই শুধু ঢালাওভাবে প্লেয়ারদের দোষ দিয়ে যাবে, এটা তো ঠিক না। বোর্ড-প্লেয়ার সবাই মিলেই তো একটা টিম। সবারই সবকিছু ভাগ করে নিতে হবে। ১০০ কেজি বোঝা ১০ জন ভাগ করে নিলে একজনের জন্য তা ১০ কেজি হয়ে যায়। একজন নিলে ১০০ কেজি। কদিন পর পর যদি বলা হয়, একে বাদ দেব, ও চলে না…এটা তো টিমের জন্যও ক্ষতিকর। কাউকে ব্যক্তিগতভাবে আঘাত করা আমার উদ্দেশ্য না। আমি ব্যক্তি নিয়ে কথা বলি নাই, চেয়ার নিয়ে-দায়িত্ব নিয়ে কথা বলেছি।’
বোর্ড প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে সাকিব বলেন, ‘ ওনার সঙ্গে তো ভালো সম্পর্ক থাকারই কথা, তাই না? মেসিকে দেখেন, বার্সার সব প্রেসিডেন্টের সঙ্গেই তো ওর ভালো সম্পর্ক। শুধু গতবারেরটা ছাড়া। নতুন প্রেসিডেন্ট এসে কী করেছেন, মেসিকে হাতে পায়ে ধরে হলেও বার্সায় রাখতে চেয়েছে। প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো থাকাটাই তো স্বাভাবিক।’
তিন ফরম্যাটেই খেলতে চান সাকিব। সেটা আবারও জানিয়েছেন তিনি, ‘আমি তিনটা ফরম্যাটেই খেলতে চাই। আরও কিছুদিন পর হয়তো ডিসিশন নেব, কোনোটা বাদ দেব কি না। এটাও অনেকবারই বলেছি, আমি যদি চান্স পাই, আইপিএলটা অবশ্যই খেলতে চাই। আইপিএলে খেলাটা আমি খুব এনজয় করি। দেশের ক্রিকেটের জন্যও তো এটা ভালো জিনিস। বাংলাদেশের আর কেউ তো খেলে না, আফগানিস্তানেরও যেখানে তিনজন খেলে। আইপিএল এমন একটা টুর্নামেন্ট, ম্যাচে খেলি বা না খেলি, প্রতিবারই আমি পাঁচ পার্সেন্ট হলেও ইমপ্রুভ করি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটই এর বড় প্রমাণ। এ ছাড়া আমি বাংলাদেশের সব ম্যাচেই খেলতে চাই। আইপিএলের বাইরে সুযোগ পেলে সিপিএল বা পিএসএলের মধ্যে যে কোনো একটা ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলব, তবে যদি তখন বাংলাদেশের খেলা না থাকে। টেস্ট ক্রিকেট খেলার ইচ্ছা-অনিচ্ছার কথা আসছে তো শ্রীলঙ্কা ট্যুরের সঙ্গে ক্ল্যাশ হওয়ায়। যে টাইমে এই ট্যুরটা হওয়ার ছিল, তখন হয়ে গেলে আর এসব কথা হতো না। দেখেন, আইপিএলের টাইমে কোনো দেশই কিন্তু খেলে না। এই শ্রীলঙ্কা ট্যুরটা তো করোনার জন্য এ সময়ে হচ্ছে। এই যে সামনে টেস্ট চ্যাম্পিয়নিশপ ফাইনাল, আইপিএলের সঙ্গে এটা ক্ল্যাশ করাতেও কিন্তু কথা হচ্ছে। বাটলার, উইলিয়ামসন, আর্চারের মতো প্লেয়াররাও এটা নিয়ে কথা বলছেন ‘
Discussion about this post