এক সময়ের ভয় টি–টোয়েন্টি এখন বাংলাদেশ দলের আত্মবিশ্বাসের জায়গা। শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান, নেদারল্যান্ডস, আফগানিস্তান—টানা চারটি সিরিজ জিতে যে দল নিজেদের নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছিল, সেই বাংলাদেশই চট্টগ্রামে হোঁচট খেল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে প্রথম টি–টোয়েন্টিতে ১৬ রানে হার লিটন দাসের দলের।
চট্টগ্রামের উইকেট ছিল ব্যাটিং–সহায়ক। লক্ষ্যও অগম্য কিছু নয় ১৬৬ রান। ইংল্যান্ড যেখানে এই মাঠে ১৯০ রানের পাহাড় তাড়া করে জিতেছিল, সেখানে বাংলাদেশের পক্ষে জয় অসম্ভব ছিল না। কিন্তু নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো আর ব্যাটিং ব্যর্থতায় ১৯.৪ ওভারে ১৪৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে দলের তরুণ পেসার তানজিম হাসান সাকিব জানালেন, ব্যর্থতা সত্ত্বেও দল এখনও আত্মবিশ্বাস হারায়নি। তার কণ্ঠে ভেসে এল দৃঢ়তা, ‘আমাদের আত্মবিশ্বাস ছিল (এই সিরিজেও ভালো করব), কারণ আমরা নিয়মিত ভালো করছিলাম টি–টোয়েন্টিতে। আজ হেরে গেছি, খারাপ দিন ছিল। পরের দুই ম্যাচে কামব্যাক করব ইনশা আল্লাহ। আর এক ম্যাচ হারলেই সিরিজ হারব, তাই আর পেছনে ফেরার সুযোগ নেই।’
গত দুই বছরে বাংলাদেশ ঘরে ও বাইরে সমান সফল। আফগানিস্তানকে ৩-০ ব্যবধানে হারানো, শ্রীলঙ্কার মাঠে সিরিজ জেতা-এসবই দলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়েছে। সেই আত্মবিশ্বাসের জায়গা থেকেই সিরিজে ফিরে আসার প্রত্যয় তানজিমের, ‘ঘরের মাঠে যেহেতু খেলা, অবশ্যই সিরিজ জয়ের চেষ্টা করব। বিদেশে জিতেছি, এখানেও জেতার সুযোগ আছে।’
তবে এই হার নিয়ে তানজিমের সবচেয়ে বড় আফসোস ব্যাটিংয়ে দায়িত্বহীনতা। পাওয়ার প্লেতে দ্রুত উইকেট হারানোয় ম্যাচের গতি হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। তরুণ পেসারের ভাষায়, ‘আমি মনে করি শুরুতে আরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করা যেত। তামিম খুব ভালো শুরু পায়, কিন্তু মিডল অর্ডারে কিছুটা ঘাটতি ছিল। যদি খেলাটা আরও গভীরে নিয়ে যাওয়া যেত, সুযোগও ছিল। ব্যাটারদেরই এখন আরও দায়িত্ব নিতে হবে।’
বিপিএলের অভিজ্ঞতা টেনে এনে তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামে বিপিএলে প্রায়ই ১৮০–২০০ রান তাড়া করে জয় আসে। এখানে ১৬০ রান চেজ করার মতোই ছিল। পাওয়ার প্লেতে আমরা ৪টা উইকেট হারিয়ে ফেলেছি-ওটাই ম্যাচটা কঠিন করে দিয়েছে। যদি তখন ২টা উইকেট পড়ত, তাহলে পরের দিকে ব্যাটাররা থাকলে সহজেই ম্যাচটা শেষ করা যেত।’
ম্যাচে বল হাতে শেষ ওভারে কিছুটা ব্যর্থ হলেও, ব্যাট হাতে লড়েছেন তানজিম। নাসুম আহমেদের সঙ্গে সপ্তম উইকেটে ২৩ বলে ৪০ রানের জুটি গড়েন তিনি, যা কিছুটা হলেও ম্যাচে প্রাণ ফিরিয়েছিল। গ্যালারিতে যখন তার নামে স্লোগান উঠছিল, তখনও মনোযোগ ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন এই অলরাউন্ডার। হেসে বললেন, ‘হ্যাঁ, শুনেছি। কানে আসছিল। কিন্তু তখন চিন্তা করছিলাম পরের বলে কী হতে পারে, স্কোরবোর্ডে কী সমীকরণ। একটু তাড়াহুড়া করে ফেলেছি হয়তো।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ে রভম্যান পাওয়েল আর শাই হোপের ব্যাট থেকে আসে পার্থক্য গড়া ইনিংস। পাওয়েলের ২৮ বলে ৪৪ আর হোপের অপরাজিত ৪৬ রান দলকে এনে দেয় লড়াকু পুঁজি। শেষ পর্যন্ত সেই রানই রক্ষা করে ক্যারিবীয়রা।
হার দিয়ে শুরু, কিন্তু গল্প এখানেই শেষ নয়। চট্টগ্রামে বাকি দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা এখনো বেঁচে আছে। তানজিম সাকিবের চোখে সেই বিশ্বাস স্পষ্ট, ‘ঘুরে দাঁড়ানোর সময় এখনই।’
সিরিজে ফেরার আশায় আগামীকাল ২৯ অক্টোবর একই মাঠে নামবে লিটন দাসের দল।










Discussion about this post