-আশরাফুলের কি শাস্তি হচ্ছে?
গত কয়েক দিন ধরে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সব কৌতূহল এসে থামছিল এ প্রশ্নে।
কাল হোটেল র্যাডিসনে আইসিসি এবং বিসিবির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ প্রশ্নের উত্তর মিলবে-সেই অপেক্ষায় উত্তেজনায় দারুণ ভিড়!
৩৮ মিনিটের সংবাদ সম্মেলন শেষে উত্তর একটা মিলল; তবে সেটা পরিষ্কার কোনো উত্তর নয়। শুধু এটুকু জানা গেল-আশরাফুলের মুক্তি মিলছে না। শাস্তিটা তার হচ্ছেই এবং বেশ বড়সড় শাস্তিই। তবে নতুন তথ্য হল-বিপিএলে ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে আশরাফুল একা নন, জড়িত আরও অনেকে। সংখ্যার হিসাবে সেটা আশরাফুলসহ মোট নয়জন। এবং দল হিসেবে এ ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত বিপিএলের দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস।
আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট (আকসু) বিপিএলের পাতানো ম্যাচ নিয়ে যে তদন্ত রিপোর্ট দিয়েছে তাতে আশরাফুলসহ নয়জন এবং ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস-কারোই দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।
আশরাফুল আগেভাগে এ কেলেঙ্কারি স্বীকার করে নিয়ে নিজের শাস্তিটা নিশ্চিত করেছেন। আর বিপিএলে তার দল ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরস যে এ পুরো কেলেঙ্কারির জš§ দিয়েছে সেটাও পরিষ্কার। আশরাফুলের সঙ্গে অভিযুক্ত বাকি আটজনের কেউই আকসুর কাছে জবানবন্দিতে নিজেদের দোষ স্বীকার করেননি। তাই ট্রাইব্যুনালের চূড়ান্ত বিচারের আগে তাদের নাম প্রকাশ করেনি আকসু।
-কেন করেনি?
এ প্রশ্নের উত্তরে আইসিসির সিইও ডেভ রিচার্ডসন কাল জানালেন-‘যেহেতু এখনও বিচার প্রক্রিয়া চলছে, তাদের কেউ এখনও দোষী প্রমাণিত হননি; এ ক্ষেত্রে আমাদের যে বিধি রয়েছে সেটাই আমরা মানছি। দোষী প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত অভিযুক্তের নাম আইসিসি জনসম্মুখে প্রমাণ করে না।’
তবে এ অভিযুক্তদের প্রত্যেকের কাছে চার্জশিট পাঠানো হয়েছে। এ তালিকায় বিপিএলে খেলা বিদেশি ক্রিকেটারও আছেন বলে জোরালো সন্দেহ। তবে বিধিতে না থাকায় আইসিসি কারও নামই প্রকাশ করেনি। এমনকি তাদের জাতীয়তাও জানায়নি।
বিপিএলে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের দুটি পাতানো ম্যাচ নিয়ে আকসু গত মার্চ মাস থেকে তদন্ত শুরু করেছিল। সেই রিপোর্ট জমা পড়েছে বিসিবিতে। কাল সেই তদন্ত রিপোর্টের সারমর্ম যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে আইসিসি ও বিসিবি। তাতেই প্রকাশ করা হয়েছে বিপিএল টু’তে ম্যাচ পাতানো কেলেঙ্কারিতে আশরাফুলসহ মোট নয়জন অভিযুক্ত। এ নয়জনের বিরুদ্ধে অকাট্য কিছু প্রমাণ পেয়েছে আকসু। তবে যেহেতু আকসু কোনো বিচারলয় নয়; তাই তারা অভিযুক্তের বিচার করার ক্ষমতাও রাখে না। তারা শুধু অভিযোগ তদন্ত করে নিজেদের পর্যবেক্ষণ এবং সন্ধানী রিপোর্ট জমা দেবে। এখন পরবর্তী কার্যক্রম পুরোপুরি বিসিবির। অভিযুক্তদের এখন আইনের আওতায় আনার দায়িত্ব বিসিবির। সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। বিসিবি এখন হাইপ্রোফাইল একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করে অভিযুক্তদের শুনানিতে ডাকবে। সামনের দুই সপ্তাহের মধ্যে অভিযুক্তদের এ ট্রাইব্যুনালের সামনে হাজিরা দিতে হবে।
সেই পূর্ণ শুনানিতে যদি অভিযুক্তরা দোষী প্রমাণিত হন তবে বিসিবি দুর্নীতি দমন বিধির ৬ ধারা অনুযায়ী শাস্তির বিধান করা হবে।
-এই বিধিতে কী আছে?
পাতানো ম্যাচের অপরাধে সরাসরি জড়িত থাকলে এ বিধি অনুযায়ী দোষী ক্রিকেটার বা কর্মকর্তাকে পাঁচ বছর থেকে আজীবন ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করা যাবে। আর যারা সরাসরি ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত ছিল না কিন্তু পাতানো ম্যাচের প্রস্তাব পাওয়ার পর সেই ঘটনা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাতে ব্যর্থ হয়েছেন তাদের জন্য শাস্তি হচ্ছে এক থেকে পাঁচ বছরের নিষেধাজ্ঞা।
শাস্তির এ বিধি-বিধান জানাচ্ছে-আশরাফুলকে অন্তত পাঁচ বছর ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ থাকতে হচ্ছে। কারণ বিপিএলে সরাসরি ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে নিজের জড়িত থাকার কথাটা তো আশরাফুল স্বীকার করেই নিয়েছেন। অভিযুক্ত নয়জনের মধ্যে দু’জনের বিপক্ষে অভিযোগের মাত্রা কম। এ দু’জন ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পেয়েছিলেন। তবে তারা ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত হননি। কিন্তু তাদের কাছে আসা এ প্রস্তাবের বিষয়টি তারা সঠিক সময় যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানাননি। আইসিসি এবং বিসিবির শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী যেসব ক্রিকেটার বা কর্মকর্তা সরাসরি ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে অভিযুক্ত তারা ট্রাইব্যুনালে পূর্ণ শুনানি শেষ না হওয়া পর্যন্ত আইসিসি, বিসিবি বা আইসিসির সহযোগী সদস্যদের আয়োজনে কোনো ক্রিকেট কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন না। এ তালিকায় এখন সবার উপরে থাকছে মোহাম্মদ আশরাফুলের নাম।
বিসিবি অবশ্য আশরাফুলকে মাস দুয়েক আগেই সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করে নিজেদের সিদ্ধান্তটা জানিয়ে দিয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালে চূড়ান্ত শুনানির পর কি আশরাফুলের জন্য আরও কঠোর কোনো শাস্তি অপেক্ষা করছে?
আশরাফুল সমর্থকরা বলছেন-অপেক্ষাকৃত লঘু শাস্তির কথা। আর সমালোচকরা দাবি তুলেছেন-দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির।
ক্রিকেট বোর্ডও সম্ভবত সমালোচকদের দাবিকেই মেনে নিতে চলেছে।
Discussion about this post