নেতৃত্ব হারানোর অভিজ্ঞতা কখনোই সহজ নয়। গত জুনে শ্রীলঙ্কা সিরিজের পর টেস্ট অধিনায়কত্ব ছেড়ে দিতে হয়েছিল নাজমুল হোসেন শান্তকে। সে সময়টা তাঁর জন্য ছিল মানসিকভাবে কঠিন, কিন্তু সেই বিরতিই শান্তকে নতুনভাবে নিজের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। নিজের দক্ষতা, মানসিক দৃঢ়তা আর পরিবারের সান্নিধ্যে তিনি খুঁজে পান গুছিয়ে ওঠার পথ। কয়েক মাস পরই, আয়ারল্যান্ড সিরিজকে সামনে রেখে আবার তাকেই নেতৃত্বে ফিরিয়ে আনে বোর্ড। আর সেই প্রত্যাবর্তনের গল্পটির সঙ্গে সিলেট টেস্ট যেন হয়ে গেল নিখুঁত মিল।
ফিরেই ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি, এ যেন শান্তর আত্মবিশ্বাসের ঘোষণাপত্র। প্রথম ইনিংসে ১০০ রানের ইনিংসটি ছিল অসাধারণ নিয়ন্ত্রিত। টেস্টে অধিনায়ক হয়ে এটি তাঁর চতুর্থ সেঞ্চুরি, ৩৮ ম্যাচের ক্যারিয়ারে অষ্টম। সিলেটে বাংলাদেশের ইনিংস ও ৪৭ রানের দাপুটে জয়টিও তার নেতৃত্বে দলের দৃঢ়তারই প্রতিফলন। তৃতীয় দিনের শেষেই ম্যাচের দিক নির্ধারণ হয়ে গিয়েছিল, যদিও চতুর্থ সকালে ম্যাকব্রাইনের অনমনীয় লড়াই ও লোয়ার অর্ডারের চেষ্টা আইরিশদের পরাজয় শুধু কিছুটা দেরি করেছিল। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশ ছিল সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে।
সংবাদ সম্মেলনে শান্ত নিজের ব্যাটিংয়ের সূত্রটি ব্যাখ্যা করলেন খুব সরাসরি ভাষায়। তিনি জানান, ব্যাটিং করার সময় তিনি কখনোই নিজেকে অধিনায়ক ভাবেন না। তার মাথায় থাকে একটাই ব্যাপার, একজন ব্যাটার হিসেবে দলকে কীভাবে বড় অবদান দেওয়া যায়। শান্ত বলেন, ‘ব্যাট হাতে নামলে এক মুহূর্তের জন্যও মনে হয় না আমি ক্যাপ্টেন। তখন শুধু ব্যাটার। আর ফিল্ডিংয়ের সময়ই ক্যাপ্টেনসির দায়িত্ব পালন করি।’
নেতৃত্ব হারানোর পর নিজের কাছে সেই বিরতির মানে কী ছিল-সেই প্রশ্নে শান্ত একধরনের মুক্তির অনুভূতিই প্রকাশ করেন। প্রথম কয়েক দিন কষ্ট হয়েছিল, কিন্তু পরে সেই সময়ই হয়ে উঠেছিল তার পুনর্গঠনের সুযোগ। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো, নিজের স্কিল নিয়ে কাজ করা, মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা-সব মিলিয়ে সেই অধ্যায়টাই তাঁকে আরও শক্ত করেছে। ‘সময়টা খুব ভালো কেটেছে,’ শান্ত বলেন, যেন সেই চাপের দিনগুলোর জবাব তিনি সিলেটে ব্যাটেই লিখে দিয়েছেন।
ফিফটিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেওয়ার সক্ষমতা নিয়ে বহুদিন ধরেই তাকে আলাদা করে দেখা হয়। শান্ত হাসতে হাসতেই জানালেন, এত প্রশংসার সময় এখনও আসেনি তার ক্ষেত্রে। তিনি উদাহরণ দিলেন মুশফিকুর রহিমের, যিনি মিরপুরেই খেলতে যাচ্ছেন তার ১০০তম টেস্ট। শান্ত জানালেন, তিনিও দীর্ঘ ক্যারিয়ার চান, কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তব হতে হলে লাগবে ধারাবাহিকতা, ফিটনেস আর সময়ের সঙ্গে নিজের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মনোভাব।
নিজের সেঞ্চুরি ইনিংস সম্পর্কে শান্তর বিশ্লেষণ ছিল অত্যন্ত বাস্তববাদী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খারাপ বল কম পাওয়া যায়, আর যে কয়টি পাওয়া যায়, সেগুলোই কাজে লাগাতে হয়, এটাই ছিল তার ব্যাটিং দর্শন। তিনি খুব বেশি শট খেলেননি, ঝুঁকি কমিয়েছেন, সুযোগগুলো কাজে লাগিয়েছেন, এমনটাই জানালেন তিনি।
এতসব আলোচনার মধ্যেও সামনে তাকানোর মতো একটি বড় উপলক্ষ অপেক্ষা করছে। সিরিজে ১–০ তে এগিয়ে থাকা বাংলাদেশ এখন ঢাকায় দ্বিতীয় টেস্ট খেলতে নামবে। সেই ম্যাচটি শুধু সিরিজের ফল নয়, ইতিহাসেরও অংশ হবে, মুশফিকুর রহিমের শততম টেস্ট। সিলেটের জয়ের পর মিরপুরের টেস্টটি তাই আরও বিশেষ হয়ে উঠেছে।









Discussion about this post