১২০ রান নিয়ে কি লড়াই করা যায়?
-যায়!
তাও আবার যেনতেন লড়াই নয়; একেবারে ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত! তবে সেই লড়াইয়ে আরেকবার জিতল সেই শ্রীলঙ্কা। সিরিজ বাংলাদেশ হারল ০-২ ব্যবধানে। কিন্তু এই দুটো টি-টুয়েন্টি থেকে বাংলাদেশ যা পেল তার মুল্যও যে কম নয়!
বাংলাদেশ জানিয়ে দিল-লড়তে জানে এই দলটি। সিরিজের দুটো ম্যাচই শেষ হয়েছে একেবারে ম্যাচের শেষ বলে। আর দুবারই এই শেষবলের আগ পর্যন্ত ম্যাচ জয়ের সম্ভাবনা ছিল বাংলাদেশেরও। সেই সম্ভাবনা শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখল না-এটুকুই যা দুঃখ বাংলাদেশের।
চট্টগ্রামে সিরিজের শেষ টি-টুয়েন্টিতে শুক্রবার টসে জিতে আগে ব্যাট করে বাংলাদেশ মাত্র ১২০ রানে থেমে যায়। তবে এই মামুলি রান নিয়েও পুরো ম্যাচে যেভাবে বাংলাদেশ লড়েছে, শ্রীলঙ্কাকে কাঁপিয়ে দিয়েছে, সেটাই বা কম কিসে?
চট্টগ্রামের স্লো উইকেটে ব্যাট করা সত্যিকার অর্থেই দারুণ কঠিন কাজ হয়ে দাড়ায়। প্রথমে এই দুরাবস্থার শিকার হয় বাংলাদেশ। আর ম্যাচের দ্বিতীয়ভাগে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা আর বড় বিপদে পড়ে। জিততে হলে চাই ১২১ রান। এই স্কোরের পিছু তাড়া করতে নেমে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের চেহারা দাড়ায় ১১.১ ওভারে ৫০ রানে ৬ উইকেট। সাঙ্গাকারা ও থিসারা পেরেইরার ব্যাটে এই শোচনীয় দশা কাটিয়ে উঠে শ্রীলঙ্কা। স্কোরবোর্ডে একশ উঠার আগে সাঙ্গাকারাও ফিরে গেলে ম্যাচে ফের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে বাংলাদেশ। কিন্তু থিসারা পেরেইরা ও সেনানায়েকের ধীরস্থির বুদ্ধিমত্তার ব্যাটিং শ্রীলঙ্কাকে শেষ বলে জয় এনে দেয়।
শেষ ওভারে জিততে শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন দাড়ায় ৯ রান। ৬ বলে ৯ রান। শেষ বলে এই হিসেব কমে দাড়ায় ২ রানে। বোলার ফরহাদ রেজা আগের পাঁচটি বল সঠিক জায়গায় রাখেন। কিন্তু শেষ বলটা খাটো লেন্থে ফেলেন। স্কয়ার লেগ দিয়ে সেটা বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেনানায়েকে দলকে ৩ উইকেটের জয় এনে দেন।
দুই ম্যাচের এই টি-টুয়েন্টি সিরিজে বাংলাদেশ দুটো ম্যাচই হেরেছে। তবে শেষ বলে গড়ানো এই দুটো ম্যাচেই বাংলাদেশের পারফরমেন্সও পিঠ চাপড়ে দেয়ার মতো প্রশংসা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ ইনিংসের প্রথম ওভারের সঙ্গে একেবারে শেষের ওভারের দারুণ মিল দেখা গেল।
১২০ বলে ১২০ রান। টি-টুয়েন্টি ক্রিকেটে এত কম পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায় না। তারওপর প্রতিপক্ষ যেখানে শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচ জিততে হলে বোলিংয়ে বাংলাদেশকে নিজেদের সেরা পারফরমেন্স দেখাতে হত। সেই চেস্টা অবশ্য বাংলাদেশ করেছে ম্যাচের শেষ বল পর্যন্ত। তবে প্রথম ম্যাচের মতো এবারো শেষ বলের লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাই জিতল।
টসে জিতে মাশরাফি পুরোদুস্তর ব্যাটিং উইকেটে আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু প্রথম ওভারেই শামসুর। পরের ওভারে তামিম ইকবাল ফিরে যাওয়ার পর সেই যে বিপদে পড়ল বাংলাদেশ আর বেরুতে পারল না। সাকিব ও এনামুল মিলে তৃতীয় উইকেট জুটিতে খানিকক্ষণ মারমার কাটকাট ব্যাটিং করলেও শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত ক্যাচিংয়ের কারনে সেটা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। কুলাসেকারা পেছন দিকে দৌড়ে শূন্যে গা ভাসিয়ে ঝাঁিপয়ে পড়ে দুহাতে সাকিবের ক্যাচটা নেয়ার পর ধারাভাষ্যকার বিস্ময় গলায় বলে উঠেন-‘এটা নিশ্চিতভাবে সিরিজের সেরা ক্যাচ’! খানিকবাদে সেনানায়েকের বলে বাউন্ডারির দড়ির কাছে কুশল পেরেইরা যে দুর্দান্ত কায়দায় এনামুলের ক্যাচটা লোফেন-সেটা দেখে ধারাভাষ্যকারও দ্বিধায় পড়ে যান-‘আরে এটা তো আরও সেরা ক্যাচ!’
শ্রীলঙ্কার দুর্দান্ত বোলিং, চোখ জুড়ানো ক্যাচিং আর বাংলাদেশের ভয়াবহ ব্যাটিং-এই তিনের যোগফলে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টুয়েন্টিতে মাশরাফির দল ১৯.৫ ওভারে অলআউট ১২০ রানে। এই ১১৯ বলের মধ্যে আবার ডটবলই ৬৫!
বাংলাদেশ: ১২০/১০ (১৯.৫ ওভারে, এনামুল ২৪, সাকিব ১২, সাব্বির ২৬, মাশরাফি ১৭, মালিঙ্গা ৩/২০, সেনানায়েকে ২/১১, কুলাসেকারা ২/৩২)
শ্রীলঙ্কা: ১২৩/৭ (২০ ওভারে, কুশল ২১, সাঙ্গাকারা ৩৭, থিসারা পেরেইরা ৩৫*, সেনানায়েকে ১২*, মাশরাফি ২/২৯)।
ফল: শ্রীলঙ্কা ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: থিসারা পেরেইরা।
Discussion about this post