ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট
এ যেন অতলান্ত গবেষণা! ভালোবাসা আসলে কি? কেনইবা সবাই একটু খানি ভালোবাসার ছোঁয়া পেতে আমরা এতোটা কাঙ্গাল, এতোটা আকুল? কি এমন ম্যাজিক ভালোবাসায়? কবিতা, গল্প, গান কিংবা উপন্যাসে লেখকরা ভালবাসার মানে আবিস্কারের প্রানান্ত চেস্টা করেছেন, করছেন অহর্নিশ। যুতসই ‘অনুবাদ’ মিলছে কোথায়?
‘ভালোবাসা অনেকটা হাওয়ার মতো! আপনি দেখতে পারবেন না, কিন্তু ঠিকই অনুভব করতে পারবেন!’ হলিউডের সাড়া জাগানো প্রেমের ছবি ‘এ ওয়াক টু রিমেম্বার’-এ এভাবেই খোঁজা হয়েছে ভালোবাসার মানে।
ভালবাসা আসলে তবে কী মোহ, মরিচীকা! ভালবাসা নামের সেই রহস্যের মায়াজালে বন্ধী হয়েছেন খেলার জগতের অনেক তারকারাই। ভালোবাসা রঙে রঙীন হয়ে ওঠা সেই সব তারকাদের ভুবনে চলুন ডুব দিয়ে আসি…
অন্তর্জালে প্রেম…
গ্লোবাল ভিলেজ- থিওরিটাও ইদানিং পুরনো হয়ে গেছে! হবেই না এখন তো বিশ্বটা পুরো হাতের মুঠোতেই বন্ধী। আরো বেশি সহজলভ্য জীবনযাত্রা। ইন্টারনেটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম গুলো জীবনটাকে আরো বর্নীল কওে দিয়েছিল। আমাদের যাপিত জীবনের অংশ হয়ে গেছে আজ ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব আর ইনস্ট্রাগ্রাম। জীবনতথ্য প্রযুক্তির এই যুগে এ প্রজন্মের ছেলে-মেয়েরা ফেসবুক ছাড়া একটি দিন ভাবতেই পারেন না! অন্তর্জাল দুরের মানুষকেও এনে দিচ্ছে কাছে। এক মুহুর্তে বন্ধুত্বা গড়ে উঠছে। ভাঙ্গছে সম্পর্কও। আবার দুটি মনের মিলনও কওে দিচ্ছে মার্ক জাকারবার্গের ফেসবুক।
বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের জীবনেও প্রেম ধরা দিয়েছিল ফেসবুকে। যাকে নিয়ে সংসার পেতেছেন সেই উম্মে আহমেদ শিশিরের সঙ্গে পরিচয় ইন্টারনেটে।
তাহলে ফেসবুকের দিনগুলোর সেই প্রেমের গল্পটা চলুন শুনে নেই। যুক্তরাষ্ট্রের উইসকনসিনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন শিশির। পড়াশোনা করছিলেন মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও তার শিশিরের জন্ম ঢাকায়, বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জে। যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানোর আগে তাঁর বাবা অগ্রনী ব্যাংকের চাকুরে ছিলেন। ১০ বছর বয়সে বাবা-মা’র সঙ্গে চলে যান মার্কিন মুল্লুকে। শিশিরের পরিবার রয়েছেন বাবা-মা, চার ভাই ও দুই বোন। সবাই থাকেন যুক্তরাষ্ট্রেই।
এই গ্রহের সবচেয়ে প্রভাবশালী দেশটিতে দিন কাটছিল তার। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা পেয়ে গেলেন সাকিবের। বদলে গেল জীবন। যদিও ক্রিকেট খেলাটা তেমন টানছিল না তাকে। তারপরও নামটা জানতেন। সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক পরীক্ষা শেষ করে ২০১০ সালে বেড়াতে যান ইংল্যান্ডে। তখন সেখানে কাউন্টি ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। কোন এক অনুষ্ঠানে চোখে চোখ পড়তেই শুরু সিনেমার গল্পের মতোই শুরু মুগ্ধতা।
উস্টারশায়ারে খেলতে থাকা সাকিব ভাবেন নি এই মেয়েটিই একদিন তার ঘরনী হবেন। কিন্তু নিজেদের অজান্তেই একটু একটু করে ভালা লাগা থেকেই জন্ম নিল ভালবাসা। তবে মন বিনিময় আরো পরে।
ইন্টারনেট আর মুঠো ফোনই তখন তাদের সম্পর্কের সেতু তৈরি করে দিয়েছিল। উস্টারশায়ারের হয়ে মিশন শেষে দেশে ফিরেন সাকিব। অন্যপ্রান্তে শিশির তখন ব্যস্ত পড়াশোনায়। চলে যান উইসকনসিনে। সাকিব খেলায় মন দেন, শিশির ইউনিভার্সিটি ব্যস্ত সুচীতে। তারপরও কোন ব্যস্ততাই তাঁদেরকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রাখতে পারেনি। এভাবেই দিন কাটতে থাকল, একসময় গাঢ় হতে থাকে তাদের প্রেম। বাংলাদেশের ‘মোস্ট এলিজেবল ব্যাচেলর’ ভাবতে থাকেন বিয়ের কথা। কিন্তু বিয়ে তো শুধুই দুজনের সম্পর্ক নয়। বিয়ে দুটো পরিবারেরও। তাইতো পারিবারিকভাবেই এগোয় বাকী আলোচনা। ঠিক হয় বিশেষ দিনে বিয়ে হবে তাদের। তারিখ ঠিক করা হয় গতবছরের ডিসেম্বরের ১২ তারিখ। বিশেষ দিনই তো ১২.১২.১২! রুপসী বাংলা হোটেলে ২০ লাখ টাকা কাবিনে বিয়ে হয় তাদের।
বিয়েতে সাকিব পড়েন সাদা পাঞ্জাবি আর শিশির লাল টুকটুকে শাড়ি! এখন মার্কিন মুল্লুকে নয়, সাকিবের সঙ্গেই সময় কাটছে শিশিরের
ক্রিকেট+বলিউড
এই গল্পের সুচনা অনেক অনেক আগে। আসলে বলিউডের উল্টো পিঠেই যেন ক্রিকেট। ক্রিকেটারদের সঙ্গে মুম্বাই সিনেমা জগতের গাটছড়া গল্প ফুলে ফেপে সমৃদ্ধ! জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের মেয়ে শর্মিলা ঠাকুরের সঙ্গে ক্রিকেটার নবাব মনসুর আলী খান পাতৌদির প্রেমে গল্প তো সিনেমাকেও হার মানিয়েছিল। ধর্ম, ভাষা কোন কিছুই বাধা হয়ে দাড়াতে পারেনি তাদের অটুট ভালবাসার সামনে।
ভালবাসার পথের পথিক মোহাম্মদ আজহারউদ্দিনও। তার জীবনের প্রেম-কাহিনী নিয়েও হয়ে যেতে পারে কোনো সিনেমা। ১৯৮৭ সালে প্রথম বিয়ে করেন আজহার। স্ত্রী নওরীনকে নিয়ে বেশ সুখেই কাটছিল দিন। একসময় সংসারে আসেদুই পুত্রসন্তান আসাদ এবং আয়াজ। সুখ উপচে পড়ে এ যুগলের সংসারে। কিন্তু সুখের আকাশে যে মেঘ জমছিল তা টেরই পাননি নওরীন। প্রথমে ছিল গুজব। আজহারের সঙ্গে গভীর প্রণয় জমে উঠে সাবেক মিস ইন্ডিয়া এবং পরে বলিউডের চিত্রনায়িকা সঙ্গীতা বিজলানির। বলিউড নায়ক সালমান খানের সঙ্গে সম্পর্ক চুকিয়ে আজহারের সঙ্গে প্রেম শুরু করেন বিজলানি। যদিও আজহার-সঙ্গীতার ১৪ বছরের বিবাহিত জীবনেও হঠাৎ উঠে ঝড়। কারণ ৪৭-এর আজাহারের জীবনে যে নতুন করে উঁকি দেন ২৬ বছর বয়সী ভারতীয় ব্যাডমিন্টন তারকা জাওলা গুত্তা। যদিও সেই প্রেমের গল্পটা বড় হয়ে উঠেনি।
ক্যারিবিয় কিংবদন্তি ক্রিকেটার ভিত রিচার্ডস আর বলিউড অভিনেত্রী নীনা গুপ্তার প্রেমের গল্প ভুলে যান নি ভক্তরা। ‘লাভ চাইল্ড’ জš§ নিলেও এই জুটি শেসষ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকতে পারেননি। একসঙ্গে থাকা হয়নি ইমরান খান-মুনমুন সেনেরও।
ভারতীয় ক্রিকেটার হরভজন সিংয়ের সঙ্গে অভিনেত্রী গীতা বারসার বিয়ে নাকি কিছুদিন পরই। একইভাবে বিয়ের সানাই বাজতে শুরু করেছে জহির খান ও ইশা সর্বণীর। আরেক প্লেবয় যুবরাজ সিংকে ঘিরে শিরোনমে এসেছেন অনেকে। সেই তালিকায় ছিলেন দীপিকা পাড়–কোনসহ কিম শর্মার মতো তারকারাও। ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছেন এখন যুবরাজ!
গুঞ্জন নয়, রীতিমতো আলোড়ন তুলেছে এখন বিরাট কোহলি আর আনুশকা শর্মার প্রেম। ভারতীয় সংস্কৃতিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘লিভ টুগেদার’ও করেছেন দুজন। ইংল্যান্ডে সিরিজ খেলার ফাঁকে কোহলির সঙ্গে এক হোটেল রুমে ছিলেন আনুশকা। অনেকেই বলছেন এই জুটির ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ বলাটাই শুধুু বাকী।
আসলেই ‘রব নে বানা দে জোড়ি!’
সম্পুর্ন রঙীন প্রেমকাহিনী!
আসলে প্রতিটা মানুষের জীবনই যেন একেকটা মহা কাব্য, একেকটা সিনোমার গল্প। তারা দু’জনও ব্যাতিক্রম নন। ইয়াশ চোপড়া আরো কিছুদিন বেঁচে থাকলে হয়তো তাদের প্রেম কাহিনী নিয়ে ছবি নির্মান করতেন। আসলে বলিউডের রঙিন সিনেমার কাহিনীও সাদামাটা তাদের ওই প্রেমের গল্পের কাছে! গল্পের পরতে পরতে নাটকীয়তা। এই বুঝি ভেঙে যাচ্ছে সবকিছু! এই বুঝি দু’জনের দুটি পথ বেঁকে যাচ্ছে দু’দিকে!
কিন্তু তা হল না। গল্পের শেষ প্রান্তে এসে ভিনদেশি রাজকুমারের গলাতেই মালা পরালেন রাজকন্যা। গল্পটা ভারতীয় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা এবং পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিকের।
শৈশবের বন্ধু সোহরাব মির্জার সঙ্গেই বিয়ে ঠিক হয়েছিল সানিয়ার। আংটিবদলও করে নিয়েছিলেন। কিন্তু হঠাৎ এমন দৃশ্যে আগমন শোয়েব মালিকের। মানুষের মন যে কত বিচিত্র তার দেখাই মিলল। সোহরাব মির্জাকে রেখে সানিয়া প্রেমে পড়লেন শোয়েবের। কিন্তু হঠাৎ আয়েশা সিদ্দিকা নামের একজন জানিয়ে দেন তিনি শোয়েবের প্রথম স্ত্রী!
বিয়ের আগে সিদ্দিক পরিবারের পক্ষ থেকে শোযেব-আয়েশার নিকাহনামা প্রকাশ করা হয়। এর দু’দিন পর সিদ্দিক পরিবারের বিপক্ষে মানহানির মামলা ঘোষণা দেন শোয়েব।
বিয়ের কয়েক দিন আগেই শোয়েব আশ্রয় নেন সানিয়াদের বাসায়। এমন সময় সিদ্দিক পরিবারের পক্ষ থেকে আদালতে মামলাকরা হয়। সানিয়াকে বিয়ের আগে এয়শাকে তালাকদেওয়ার দাবি ওঠে। কিন্তু শোয়েবের দাবি-‘বিয়েটাই যেহেতু হয়নি তালাকের প্রশ্ন উঠছে কেন?’ অবশ্য নিজের সে সিদ্ধান্তে তিনি অনড় থাকতে পারেননি। বাধ্য হন বিয়ের আগে তালাকনামায় সই করতে। ১৫ হাজার রুপির বিনিময়ে আপসরফা (ভিভোর্স) করতে বাধ্য হন শেযেব মালিক।
প্রেমের বেলায় সাত খুনমাফ! ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিকভাবেই নেন সানিয়া। ২০১০ সালের ১২ এপ্রিল টেনিস এবং ক্রিকেটের এ দুই তারকা কবুল বলেন। সাদি মুবারক শেষে বেশ সুখেই দিন কেটে যাচ্ছে দু’জনের।
আমরা আসলে এমনই, ভালাবাসার জন্য মানুষ ততো কি করে! গানের ওই লাইনটাই বোধ হয় সত্য, ‘ভালবাসা ছাড়া কেউ বাঁচে কী’। আবার অনেকে ভালবাসাটা কী সেটা ঠিকঠাক বুঝতেই পারি না। অথচ মনের মনে পুষে রাখি রাজ্যেও ভালবাসা। নির্মলেন্দু গুন যেমনটা লিখেছেন-
‘‘আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য ।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।’’
Discussion about this post