আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) নিয়ম হচ্ছে, তাদের কোনো টুর্নামেন্টের ছয় মাস আগে ভেন্যুগুলো শতভাগ তৈরি করে বুঝিয়ে দিতে হয়। পাশাপাশি নিশ্চিত করতে হয় টুর্নামেন্টে খেলা দলগুলোর সেরা মানের আবাসন এবং যাতায়াত ব্যবস্থারও। আইসিসির শিডিউল অনুযায়ী আগামী বছর ১৬ মার্চ থেকে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়লেও চারটি ভেন্যুর দুটিরই কাজ এখনও বিস্তর বাকি। ভেন্যু দুটি হচ্ছে সিলেট ও কক্সবাজার।
আইসিসির ডেডলাইন অনুযায়ী এ বছরের সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ দুই ভেন্যু পুরো তৈরি করে আইসিসিকে হস্তান্তর করতে হবে। কিন্তু কাজ যতটুকু হয়েছে আর বাকি কাজের যে গতি, তাতে শঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে-আইসিসির নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ভেন্যু দুটি শতভাগ তৈরি হবে কি না? লন্ডনে সদ্য শেষ হওয়া আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, আগামী আগস্ট মাসে আইসিসির একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফরে এসে ভেন্যুগুলোর সর্বশেষ অবস্থা যাচাই করে রিপোর্ট দেবে।
ওই রিপোর্টই হবে বাংলাদেশের জন্য ডেডলাইন। তার মানে আগামী আগস্টে ভেন্যুগুলো দেখে আইসিসির প্রতিনিধি দল যদি সন্তুষ্ট না হয়, তাহলে বাংলাদেশকে দুঃসংবাদই শুনতে হতে পারে। টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ চলে যেতে পারে ভিন্ন কোনো দেশে। জানা গেছে, বাংলাদেশের অপারগতায় শ্রীলঙ্কা এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ২০১৪ আইসিসি টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের লাইনে দাঁড়িয়ে গেছে।
নাজমুল হাসান অবশ্য দাবি করছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হয়ে যাবে। বলেছেন-‘সরকার সিলেট ভেন্যুর কাজ একটু দেরিতে শুরু করলেও এখন তা পূর্ণ গতিতে চলছে। কাজের ধারা ও কর্ম পরিকল্পনা দেখে আমি অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছি, যথাসময়েই কাজ শেষ হবে। আর কক্সবাজারের ব্যাপারে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল জমি। সেটা যখন পেয়ে গিয়েছি তখন সব কাজ সময়ের মধ্যেই শেষ হবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী।’ বাংলাদেশ থেকে বিশ্বকাপ কি অন্য কোনো দেশে চলে যেতে পারে-এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে বিসিবিপ্রধান বলেছেন-‘সিলেট এবং কক্সবাজারের বিকল্প হিসেবে আমাদের আরও দুটি ভেন্যু হাতে রয়েছে। সে দুটি হচ্ছে ফতুল্লা এবং বিকেএসপি। ফতুল্লা পুরোদস্তুর আন্তর্জাতিক ভেন্যু। যেখানে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলা হয়েছে। আর বিকেএসপিতে আমাদের দুটি মাঠ রয়েছে। যে দুটি মাঠ আমরা আইসিসির গাইডলাইন অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই প্রস্তুত করতে পারব। যেখানে মহিলা বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো আয়োজন করা যাবে।’
পাপনের এ বক্তব্য থেকে বুঝতে বাকি থাকে না, সিলেট ও কক্সবাজার নিয়ে তিনি যতই আশার কথা শোনান না কেন, আইসিসির ডেডলাইনের মধ্যে ভেন্যু দুটির কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়েও তিনিও দ্বিধায়। বলা দরকার, আইসিসির সভায় যাওয়ার আগেই পাপন এ দুটি ভেন্যুর প্রস্তুতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তার শঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে আইসিসি বাংলাদেশকে ডেডলাইনই দিয়ে দিল।
দলগুলোর আবাসন সমস্যা নিয়ে নাজমুল হাসান বলেছেন-‘ঢাকায় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের সময় দলগুলোর আবাসন নিয়ে সমস্যা হবে না। কারণ হোটেল রূপসী বাংলার সংস্কার কাজ টুর্নামেন্টের আগে শুরু হবে না। কাজেই সেখানে ২০০ অতিরিক্ত রুম পাওয়া যাবে খেলোয়াড়দের জন্য। কাজেই আমি মনে করি না বিশ্বকাপে খেলোয়াড়দের থাকার কোনো সমস্যা হবে।’
এর আগে আইসিসির প্রতিনিধি দল দু’বার বাংলাদেশে ভেন্যু পরিদর্শন করতে এসেছিল। প্রথমবার চলতি বছরের মে মাসে, দ্বিতীয়বার জুনে। প্রথম দফায় প্রতিনিধি দল কক্সবাজারে গিয়ে বিস্মিত হয়ে দেখে কাজই শুরু হয়নি। সিলেট ভেন্যুর কাজ চলছে ঢিমেতেতালায়। কাজের শম্বুকগতিতে তারা রিপোর্ট দেয় ডিসেম্বরের আগে কোনো ভেন্যুই শতভাগ তৈরি হবে না। এরপর ১০ জুন ফলোআপ সফরে আসে আইসিসি প্রতিনিধি দল। কিন্তু সেবারও কাজের গতি দেখে আগের রিপোর্টের কোনো হেরফের করেনি প্রতিনিধি দল। তারপরই আইসিসির বার্ষিক সভায় এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাংলাদেশ তা জানিয়ে দেওয়া হল। বলে দেওয়া হল-বিকল্প দেশের কথাও ভাবছে তারা।
এদিকে আইসিসির ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বিসিবির সাবেক সভাপতি মোস্তফা কামালও বলেছেন, আইসিসির গাইডলাইন ও সময়সীমার মধ্যেই সব ভেন্যু তৈরি হয়ে যাবে। বলেন-‘আমরা ২০১১ সালের আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপের অন্যতম সফল আয়োজক ছিলাম। তুলনায় টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ তো তার চেয়ে বড় ইভেন্ট নয়। বিশ্বকাপের জন্য আমরা পাঁচটি ভেন্যু প্রস্তুত করেছি। ২০১৪ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশে ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। তারপর ২০১৮ সালে হবে বিশ্বকাপের বাছাই পর্বও। টানা বিশ্ব পর্যায়ের ম্যাচ আয়োজনের দায়িত্ব পাওয়ার মানেই হচ্ছে আমাদের সে সামর্থ্য আছে।’
Discussion about this post