ভারতের বিপক্ষেও তাকে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ম্যানেজার করতে চেয়েছিল বিসিবি। এনিয়ে মিডিয়ায় নানা কথা লেখা হচ্ছিল। খালেদ মাহমুদ সুজন এই পদের জন্য কতোটো যোক্তিক তা নিয়ে উঠেছিল প্রশ্ন। অবশেষে সুজন নিজেই সরে দাড়ানোর কথা শোনালেন।
রোববার রাতে তিনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) প্রধান নির্বাহী নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কাছে পাঠানো এক ইমেইল পাঠালেন তিনি। সেখানে লিখলেন- ‘পারিবারিক কারণে’ এখন জাতীয় দলের ম্যানেজারের পদে তিনি থাকতে পারছেন না। তাঁর পদত্যাগ পত্র বিসিবি গ্রহণ করেছে কি না সেটা এখনো জানা যায়নি।
ম্যানেজার সুজনের যৌক্তিকতার প্রশ্ন তুলে রোববার এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে দেশের প্রভাবশালী দৈনিক প্রথম আলো।
কোচ হিসেবে একটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ মাহমুদ। সেখানে তিনি চাকরিই করেন। এ ছাড়া অন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও নাকি চুক্তিবদ্ধ মাসিক বেতনের ভিত্তিতে। বোর্ডকে দেওয়া মাহমুদের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকটি থেকে তিনি মাসে বেতন পান ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। অন্য প্রতিষ্ঠানটি থেকেও নাকি আসে প্রায় সমপরিমাণ অর্থ। মাহমুদের দাবি, জাতীয় দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করলে তাঁকে অন্য কর্মস্থল থেকে ছুটি নিতে হয় এবং সেটা হয় বিনা বেতনে। কাজেই বোর্ড তাঁকে ম্যানেজারের দায়িত্ব দিলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে কর্মস্থল থেকে পাওয়া বেতনের সমপরিমাণ অর্থও। বিসিবিও সেটা মেনেই একের পর এক সিরিজে ম্যানেজার করে যাচ্ছে মাহমুদকে। এবারের ভারত সিরিজের জন্যও মোটা অঙ্কের বেতনের শর্ত মেনেই ম্যানেজার করা হয়েছে তাঁকে। এই প্রতিবেদককে কাল মাহমুদ নিজেই বলেছেন, ‘বোর্ড পরিচালক হলেও আমি অন্য জায়গায় চাকরি করি। ম্যানেজারের দায়িত্ব নিলে সেখান থেকে ছুটি নিতে হয় এবং ছুটির সময় আমি ওখান থেকে কোনো বেতন পাই না। কাজেই ম্যানেজার করলে আমাকে ওই পরিমাণ অর্থ তো দিতেই হবে। বোর্ড সভাপতির সঙ্গে সেভাবেই কথা হয়েছে।’
এ ক্ষেত্রে অবশ্য কিছুটা ‘উদার’ই বলতে হবে জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ক ও বোর্ড পরিচালককে। ক্ষতিপূরণ হিসেবে বিসিবি থেকে তিনি শুধু ব্যাংকের বেতনের সমপরিমাণ অর্থই নিচ্ছেন, ছেড়ে দিচ্ছেন অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাওয়া বেতনের অঙ্কটা। বিসিবির একটি সূত্রের তথ্য, এই ‘ছাড়ে’র পরও গত বছর ভারতের বিপক্ষে তিন ওয়ানডের সিরিজ, এ বছরের বিশ্বকাপ এবং সর্বশেষ পাকিস্তান সিরিজের বেতন হিসেবে বিসিবি থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকার মতো নিয়েছেন মাহমুদ। এর মধ্যে শুধু বিশ্বকাপের ম্যানেজার হিসেবেই নিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৬ লাখ টাকা। এটা দৈনিক ভাতার বাইরে। বিশ্বকাপে দলের আর সবার মতো তিনিও দৈনিক ভাতা পেয়েছেন প্রায় ১৭৫ ডলার করে। হোম সিরিজে অঙ্কটা ৫০ ডলার।
অতীতে যতবারই জাতীয় দলের জন্য বেতনভুক্ত ম্যানেজার নেওয়া হয়েছে, মাসিক বেতন কখনোই এক লাখ টাকার বেশি হয়নি। কিন্তু মাহমুদের ক্ষেত্রে মাসিক বেতনের অঙ্কটা দাঁড়াচ্ছে ৩ লাখ ১৫ হাজার টাকা। কোনো সিরিজের সময় এক মাসের কম বা বেশি হলে বেতনের টাকাও সেভাবে বাড়ে-কমে।
পেশাজীবী হিসেবে হয়তো মাহমুদের দাবিই ঠিক। চাকরি বাদ দিয়ে ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব পালন করে ব্যক্তিভাবে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন তিনি কেন হবেন? কিন্তু বিসিবিও বা কেন এত টাকা গচ্চা দিয়ে তাঁকেই বারবার ম্যানেজার করবে? বিসিবির পরিচালক বা নির্বাচকেরা এর আগেও অনেকবার জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বেতন তো দূরের কথা, দৈনিক ভাতা ছাড়া কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধাই তাঁদের দেওয়া হয়নি।
সেই প্রতিবেদন থেকে আরো জানা যায়- বিসিবির পরিচালক বা নির্বাচকেরা এর আগেও অনেকবার জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন দলের ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু বেতন তো দূরের কথা, দৈনিক ভাতা ছাড়া কোনো ধরনের আর্থিক সুবিধাই তাঁদের দেওয়া হয়নি।
এছাড়া প্রথম আলো লিখেছে- ঘরোয়া ক্রিকেটে কোচ হিসেবে সফল হলেও মাহমুদের ব্যাপারে বেশ কিছু ব্যাপারে প্রশ্ন ছিল ক্রিকেট মহলে। গত বিশ্বকাপে ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার অভিযোগ উঠেছিল তাঁর বিরুদ্ধে। মাহমুদ অবশ্য ক্যাসিনোতে যাওয়ার কথা স্বীকার করলেও জুয়া খেলেননি বলে দাবি করেন একটি টিভি চ্যানেলে। এ নিয়ে তখন বেশ সমালোচনা হয়। তবে তার পরও পাকিস্তান সিরিজে তাঁকে ম্যানেজার করে বিসিবি।
Discussion about this post