ক্রিকবিডি২৪.কম রিপোর্ট:
”রোম নগরী যখন পুড়ছে, নিরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিলেন।” রোমান সম্রাট নিরোর এমন খামখেয়ালি আচরণের কথাটা প্রায় সবারই জানা! ২০১৮ সালে এসেও এই কথাটি যেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সঙ্গে খুব মিলে যায়। বাংলাদেশ দল যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে টেস্ট সিরিজে লজ্জায় ডুবছে, তখন রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপ অভিসারে ব্যস্ত নাজমুল হাসান পাপনসহ কয়েকজন বোর্ড কর্তা। ভাবটা এমন দল খারাপ খেলছে তাতে কী আমাদের প্রমোদ ভ্রমণ চলছে, চলবেই!
অবশ্য বাংলাদেশ ক্রিকেট কর্তাদের এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। যা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বারবারই। নাজমুল হাসান পাপন ব্রাজিলের সমর্থক। রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফুটবল বিশ্লেষক বনে গিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন, এবার ব্রাজিলই ট্রফি জিতবে। যদিও সেটা হয়নি। তারপরও ফাইনালে খেলা দেখতে চলে যান রাশিয়ায়। মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বসে ফাইনাল ম্যাচটি দেখেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন বিসিবির কর্মকর্তা মাহবুব আনাম, ইসমাইল হায়দার মল্লিক। তার আগেই বিভিন্ন ভেন্যুতে বসে খেলা দেখছেন বিসিবির আরেক কর্তাব্যক্তি আকরাম খান।
বিসিবির একটি নির্ভরযোগ্য সুত্র জানিয়েছে, এটি তাদের ব্যক্তিগত সফর। তারা কবে, কখন গেছেন, কখন ফিরবেন- সেই তথ্য নেই বিসিবির দ্বায়িত্বশীল কারোর কাছেই।
বোর্ড প্রধানের অবশ্য ব্যস্ততার শেষ নেই। তার পরিচয়েরও শেষ নেই। তিনি সংসদ সদস্য, ঔষধ প্রস্তুতকারী সংস্থা বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। আবাহনী লিমিটেডের ক্রিকেট কমিটির সভাপতি, কুলিয়ারচর-ভৈরব এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা! সঙ্গে বড় পরিচয় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের প্রেসিডেন্ট! একজন মানুষ এতো কিছু সামলাতে গিয়ে কতোটা কী পারছেন এনিয়ে গণমাধ্যমে প্রায়ই লেখা হচ্ছে নানা খবর। অন্তর্জালে এনিয়ে হাস্যরসও করছেন অনেকে।
তিনি নিজেও দ্বায়িত্ব কমিয়ে ফেলার কথা বারবারই বলেছেন। এমন কী একসঙ্গে এতো পারছেন না-এমনটাও জানিয়েছেন। তারপরও বহাল তবিয়তেই আছেন। সঙ্গে বরঞ্চ দ্বায়িত্ব যেন দিনদিন বাড়িয়েই যাচ্ছেন। পাপন আবার অলিখিত নির্বাচকও। দল গঠনে বোর্ড প্রধানের হস্তক্ষেপের কথা সবারই জানা। এ কারণে এর আগে একজন প্রধান নির্বাচকের পদত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে। এনিয়ে গণমাধ্যমে তিনি নিজেই বলেছেন, দল নির্বাচনে তার ভূমিকার কথা, ‘আমি আপনাদের বলি, অত্যন্ত দুঃখ নিয়েই বলি। আপনারা জানেন, আমি খেলোয়াড়দের সঙ্গে একটু বেশি ইনভলভ। আমি টিম মিটিংয়ে উপস্থিত থাকি।’ কিন্তু এটা কতোটা যৌক্তিক এনিয়ে কথা থেকেই যায়।
এমন কী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে গত মার্চে বাংলাদেশকে দুর্দন্ত জয় এনে দেওয়া মুশফিককে নিয়েও বেফাঁস কথা বলেছিলেন বোর্ড সভাপতি। ৩৫ বলে ৭২ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে রেকর্ডগড়া জয় এনে দেন মুশফিক। তাকে অবজ্ঞা করে সরাসরিই বলে ফেলেন, ‘তুমি যে এরকম মারতে পারো আমি জানিই না!’ এমন কী মুশফিককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন।
তারও আগে শেষ করে দেওয়া হয় মাশরাফি বিন মর্তুজার টি-টুয়েন্টি ক্যারিয়ার। অশ্রুসজল চোখে বিদায় নেন ২০ ওভারের ক্রিকেট থেকে। এখন অবশ্য তার কাছেই ধর্ণা দিচ্ছে বিসিবি। কিন্তু টি-টুয়েন্টিতে না ফেরা নিয়ে অনড় মাশরাফি!
ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে বোর্ড প্রধানের ক্লাবটির বাড়তি সুবিধা পাওয়ার ব্যাপারটি গত কয়েকবছর ধরেই ওপেন সিক্রেট। এনিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা থেকে শুরু করে অনলাইন গণমাধ্যমেও একাধিক প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে সেই দলের পক্ষে আম্পায়ারদের পক্ষপাত নিয়েও উঠেছে কথা। কিন্তু বারবারই প্রসঙ্গটা এড়িয়ে গেছেন বোর্ড কর্তা। এমন কী এনিয়ে মিডিয়াকেও একহাত নিয়েছেন তিনি।
কিন্তু তারপরও পক্ষপাত থামেনি। এমন কী জাতীয় দলের ক্যাম্প থেকেও ক্রিকেটার নিয়ে এসে খেলানো হয়েছে আবাহনীর পক্ষে। স্কোয়াডে থাকা ক্রিকেটারদের আবার দিয়েছেন প্রিমিয়ার লিগে খেলার অনুমতি দেন আবাহনীর কোচ খালেদ মাহমুদ সুজন। এমন অভিযোগ উঠার পর সভাপতির মতোই উত্তেজিত হয়ে পড়েন তিনি। উত্তেজিত হয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘যখন আসে আমি আবাহনীর হেড কোচ, মোসাদ্দেককে টেস্টে খেলাই নাই আবাহনীতে খেলার জন্য। যখন ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট নিয়ে কথা আসে, খুবই আহত হই। এতবছর ক্রিকেটের সঙ্গে থেকে আসলে কি লাভটা হল। মোসাদ্দেক আর আবাহনী যদি বাংলাদেশের ম্যাচ হারার কারণ হয়ে যায়, তাহলে খুব কঠিন আসলে। ৫৩ বলে ৯ রান করছে, আমিও দেখেছি। আমারও ক্রিকেট নলেজ আছে। ৮৩ সালে ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি। অনেক বছর, চুলও পেকে গেছে। কে পারে, কে পারে না, কখন কাকে দরকার; এটা আমরাও বুঝি। আপনারা হয়ত আরও ভাল বোঝেন।’
এখানেই শেষ নয়, গণমাধ্যমকে দায়ী করে সুজন আরো বলেছিলেন, ‘মিডিয়াতে যেভাবে লেখা হয়, আমাদের ক্রিকেটের বড় অন্তরায় এটি। মিডিয়াতে একটা ব্যাপার আছে যে, আমরা সন্দেহপ্রবণ হয়ে যাচ্ছি। মিডিয়াও সন্দেহপ্রবণ হয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার কারণে আমাদের ক্রিকেট আটকে আছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।’
দল গঠনে হস্তক্ষেপের ব্যাপারটা মেনে নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন বর্তমান নির্বাচক কমিটির সদস্যরা। আর এটা ওপেন সিক্রেট। এমন আরো অনেকট ঘটনার বনর্না দিতে গেলে ফুরাবে না। তবে এবার বাংলাদেশ দল যখন টেস্টে ৪৩ রানে অলআউটের যন্ত্রণায় কাতর তখন বোর্ড প্রধানের রাশিয়া বিশ্বকাপ দর্শণ প্রসঙ্গটা সামনে এসেছে! তবে প্রবল ক্ষমতার অধিকারী ব্যাক্তিটি এসব ঘটনাকে অতীতে পাত্তা দেননি, এবারো হয়তো দেবেন না!
Discussion about this post